সাব্বির আহমেদ পলাশ
আমি যখন যশোর ছেড়ে বেনাপোল গিয়েছিলাম তখন অনেকেই অনেক কথা বলেছিলেন। পলাশ এবার শেষ হয়ে যাবে। তবে মানুষের এসব কথা আমি কিছু মনে করতাম না। সব কিছু আল্লাহর তালার উপর ছেড়ে দিয়েছিলাম।
খেলা ছেড়ে প্রথমে আমি আর্মিদের ট্রেনিং দিতাম। আর্মিদের ট্রেনিং দেয়ার পর শুধু ওরা নিজেদের গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতো। কিন্তু এতে তো নিজেকে বিকশিত করতে পারছিলাম না। তাই নতুন করে স্বপ্ন সাজালাম। সেই সময় ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বেনাপোলের আশরাফুল আলম লিটনের সাথে দেখা হয়। এর আগে আমি লিটন সাহেবকে চিনতাম না। আবার উনি যে বেনাপোলের মেয়র সেটাও জানতাম না। ওই অনুষ্ঠানে সাবেক এক ফুটবলার লিটন ভাইকে বেনাপোলে একটা ফুটবল একাডেমি করার প্রস্তাব দেন। তখন আমি লিটন ভাইকে বলি যদি আপনি উদ্যোগ নেন তাহলে আমি যশোর ছেড়ে বেনাপোলের দিকে যেতে পারি। লিটন সাহেব পাল্টা প্রশ্ন করে আমার কি লাগবে? তখন শুধু মাত্র কাজ করার একটা পরিবেশ ও কিছু জিনিস দেয়ার কথা বলেছিলাম।
তিনি সেই মোতাবেক বেনাপোলের বল ফিল্ড মাঠটা ঠিক করে কিছু বাচ্চা আমার হাতে তুলে দেন। তারপর ট্রেনিং শুরু করি। এতে অনেক সিনিয়র জেলাসি করতো। কিন্তু আমি এই বাচ্চাদের পেছনে পড়ে থাকতাম। জানতাম বাচ্চাদের কিছু দিলে তারা একদিন ফেরত দিবেন। এই ভাবেই আমি জাহিদ, রাহুল, মেহেদিদের পাই।
আমি সব সময়ই রাহুলকে দেখে অবাক হতাম। এখনই পর্যন্ত আমি অবাক হয়। প্রায় সময়ই প্রাকটিশ শেষ হলেও মাঠে থাকতো। প্রায় সময়ই বল গোছানো হয়ে যেত। কিন্তু রাহুল সেখানে একটা বল নিয়ে মাঠের মাঝখানে চলে যেত। আর আমাকে বলতো যে এখানে গোল করতে পারলে আপনি আমাকে কি দেবেন। আমি না পারলে আপনাকে ২০০টাকা। তখন গোল করে প্রায়ই আমার কাছ ৫০০ টাকা করে জিতে নিত।
আসলে রাহুল কিন্তু একদিনে তৈরি হয়নি। বেনাপোলে আমি যতদিন ছিলাম ততদিন বাবার সাথে নামাজ না পড়ে আমার সাথে ঈদের নামাজ আদায় করতো। ঈদের নামাজ শেষে আবার প্রাকটিশের জন্য মাঠে চলে আসতো। আমার কাছে এটা একটা অসম্ভব লাগতো। এখানকার ছেলে মেয়েরা জামা-কাপড় পড়বে বন্ধুদের সাথে ঘুরবে এটাই স্বাভাবিক ছিল।
এবার একটু রাহুলের মাঠের ভিতরের পারফরম্যান্স নিয়ে কথা বলি। রাহুল মাঠে নামলে কি একটা করে ফেলে। এমনও হয়েছে ম্যাচের পুরো সময় বল পায়নি। কিন্তু শেষ দুই মিনিটে দুইটা বল পেয়েছে। সেখান থেকে গোল করে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। মাঠে নামার আগে প্রতিপক্ষ বড় যত বড় খেলোয়াড়ই হোক আমাকে দুচিন্তা করতে নিষেধ করতো। এ সাফেরই গ্রুপ পর্বের ম্যাচে নেপালের কাছে হারের পর আমার সাথে কথা হয়েছিল। তখন আমাকে বলেছিল যে স্যার এটা আমাদের জন্য বড় ধাক্কা। ভারতকে হারিয়ে আমরা ফাইনাল খেলবো। আগামীতে নেপালকে আমরা হারিয়ে দেব। রাহুল সব সময় পজিটিভ থাকে। এটা একটা বড় গুণ। এই গুনের জন্য বাড়ি পাশে অনেক নেগেটিভ জিনিস থাকার পরও সে ফুটবল নিয়ে পড়ে থাকতো।
আর একটা কথা বলি, রাহুলকে আমি তৈরি করিনি। সে নিজেই নিজেকে তৈরি করেছে। আমি শুধুমাত্র কোন ভাবে ফুটবল খেললে শীর্ষ পর্যায়ে খেলা যাবে সেটা কথা বলেছি। রাহুলের সব সময় চেষ্টা ছিল কিভাবে ন্যাশনাল প্লেয়ার হওয়া যায়। কিভাবে বড় জায়গা ফুটবল খেলা যায়।
শেষ করবো আমার ফেসবুক স্ট্যাটাসের একথা বাক্য দিয়ে। অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আমার ফেসবুক প্রফাইলে রাহুলকে নিয়ে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। সেখান লিখেছি রাহুল বাংলাদেশের তারকাদের তারকা হবে।
লেখক রাহুলের প্রথম কোচ
