সম্পাদকীয়
সম্প্রতি রেলওয়ের বেআইনী দখল ছেড়ে দিতে ও যারা লিজ নিয়েছে তাদের লিজ নবায়নের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। যশোরের বিভিন্ন স্থানে মাইকিং করে এ ঘোষণা দেয়া হয়। সারাদেশে রেলওয়ের মোট জমির পরিমাণ প্রায় ৫৮ হাজার ৪৭০ একর। এরমধ্যে বেদখলে রয়েছে ২ হাজার ৮১৭ একরেরও বেশি জমি। জমি বেশি দখল হয়েছে পশ্চিমাঞ্চলে। সেখানকার বিভিন্ন জেলায় দখল হওয়া জমির পরিমাণ ১ হাজার ৪৪ দশমিক ১০৩ হেক্টর। আর পূর্বাঞ্চলে ৯৬ দশমিক ৪৩২ হেক্টর জমি দখল হয়েছে। জাতীয় সংসদে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
বেআইনী দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোরতম আইনী ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। এদের বুকের পাটা কত বড় যে, তারা কোন কার্যক্রমকেও পরোয়া করছে না। রেলের জমি দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে স’মিল, দোকানপাট, ঘরবাড়ি, ওয়েব্রিজ, হোটেল-রেস্তোরাঁ, বেডিং হাউস, কামারশালা, মাংসের দোকান, বিস্কুট কারখানা, জুট মিলস্, ট্রাক টার্মিনাল, মার্কেট, হাট-বাজার, সিমেন্ট-সারের দোকান, টেইলার্স, ফার্নিচার কারখানা প্রভৃতি। প্রভাব খাটিয়ে এই দখল কায়েম করেছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল।
আরও পড়ুন: দুর্নীতি রোধে জেলা প্রশাসকদের নির্মোহ ভূমিকা প্রয়োজন
রেলের জমি দখলে যেমন প্রভাবশালীদের নাম পাওয়া যায়, তেমনি সাধারণ মানুষের কথাও জানা যায়। অভিযোগ আছে, রেল বিভাগে কর্মরত একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সঙ্গে যোগসাজশে চলে এসব জমি দখল। রেলের জমি শর্তসাপেক্ষে লিজ নিয়ে অনেকে শর্ত লঙ্ঘন করছেন। হিসাব অনুযায়ী, রেলের ১৫ হাজার ৮৯ দশমিক ২২১৩ একর জমি লিজ দেয়া হয়েছে।
সারাদেশে রেলওয়ের জমি দখলের অবসান হোক সেটা আমাদের চাওয়া। দখলের অবসানে বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালানো হয়, দখল হওয়া জমি উদ্ধারও করা হয়। তবে রক্ষণাবেক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনার অভাবে তা আবার দখল হয়ে যাচ্ছে। উদ্ধারকৃত জমি যাতে পুনর্দখল না হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে, গড়ে তুলতে হবে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা। এ লক্ষ্যে রেলওয়ের ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা সহজ করা জরুরি।
শুধু অভিযান চালিয়ে দখল উচ্ছেদ করলেই চলবে না। যারা জমি দখল করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। সব কিছুর আগে রেলের দুর্নীতি বন্ধ করা দরকার। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার এ চিত্র উদ্বেগজনক