মাওলানা হেদায়াতুল্লাহ
কেউ রমজান মাস পেয়েও শরিয়তসম্মত কারণে রোজা রাখতে সক্ষম না হলে তাঁর জন্য রোজা না রাখার সুযোগ আছে। যেমন, অতিশয় বৃদ্ধ অথবা এমন অসুস্থ যার আরোগ্য লাভের আশা করা যায় না, তাঁর জন্য রোজা রাখা আবশ্যক নয়। এমতাবস্থায় ওই ব্যক্তি প্রতিদিনের রোজার পরিবর্তে ফিদিয়া প্রদান করবেন।
পবিত্র কোরআনের রোজা ফরজ হওয়ার আয়াতেই আল্লাহ তাআলা ফিদিয়ার বিধান বলে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘হে মুমিনেরা, তোমাদের ওপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করো, নির্দিষ্ট কয়েক দিন, তবে তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ থাকবে, কিংবা সফরে থাকবে, তাহলে সে অন্যান্য দিনে সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আর যাদের জন্য তা কষ্টকর হবে, তাদের কর্তব্য ফিদিয়া তথা একজন দরিদ্রকে খাবার প্রদান করা। অতএব, যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় অতিরিক্ত সৎ কাজ করবে, তা তার জন্য কল্যাণকর হবে। আর রোজা পালন তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জানতে।’ (সুরা বাকারা : ১৮৩-১৮৪)
ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত, ‘ফিদিয়ার আয়াতটি ওই সব অতিশয় বৃদ্ধ পুরুষ ও নারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যারা রোজা পালনে অক্ষম। তারা প্রতিদিনের রোজার পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খাওয়াবেন।’ (বুখারি : ৪৫০৫)
ফিদিয়া সম্পর্কে ফকিহদের মত
আলমাওসুআহ আলফিকহিয়্যাহ গ্রন্থে বলা হয়েছে, ‘হানাফি, শাফেয়ি ও হাম্বলি মাজহাবের আলেমেরা এ ব্যাপারে একমত যে, ফিদিয়া ওই সময় আদায় করা হবে, যখন রোজার কাজা আদায়ে আশা থাকে না। তা বার্ধক্যের কারণে হতে পারে কিংবা এমন রোগের কারণে হতে পারে যা থেকে সুস্থ হওয়া সম্ভব নয়। (আল-মাওসুআহ আল ফিকহিয়্যাহ : ৫ / ১১৭)
আল্লামা ইবনে কুদামাহ (রহ.) বলেছেন, ‘অতিশয় বৃদ্ধ পুরুষ ও নারী এবং রোগমুক্তির আশা করা যায় না এমন মানুষ, যাদের জন্য রোজা পালন কঠিন ও কষ্টসাধ্য তাঁরা রোজা পালন না করে প্রতিদিনের পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খাওয়াবেন। তাঁরা যদি মিসকিন খাওয়াতেও অক্ষম হন, তবে তাঁদের ওপর কোনো কিছু বর্তাবে না।’ (আলমুগনি : ৪ / ৩৯৬)
পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ কারও ওপর তার সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা চাপান না।’ (সুরা বাকারা : ২৮৬)
ফিদিয়ার পরিমাণ
প্রত্যেক রোজার জন্য ফিদিয়ার ন্যূনতম পরিমাণ হলো, সাদকায়ে ফিতরের সমান তথা অর্ধ ‘সা’ বা ১ দশমিক ৫ কিলোগ্রাম খাবার। যেমন, খেজুর, চাল বা অন্য কোনো খাদ্যদ্রব্য। অতএব কোনো ব্যক্তি রোজা রাখতে একান্ত অপারগ হলে তিনি প্রতিদিন একজন দরিদ্রকে পেট পুরে দুই বেলা খাবারের ব্যবস্থা করবেন। কেউ চাইলে নগদ টাকাও দিয়ে দিতে পারবেন। (আল ইনায়াহ : ২ / ২৭৩)
দরিদ্ররা যেভাবে ফিদিয়া দেবেন
ফিদিয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে ধনী-গরিবের মধ্যে কোনো তারতম্য নেই। তবে দারিদ্র্যের কারণে ফিদিয়া দিতে একেবারেই অক্ষম হলে আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করবেন। পরে কখনো সামর্থ্যবান হলে অবশ্যই ফিদিয়া আদায় করে দেবেন। (ফাতাওয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত : ৫ / ৪৫৫)
যাকে ফিদিয়া দেওয়া যাবে
ফিদিয়ার হকদার গরিব-মিসকিন, যারা জাকাতের হকদার। কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যেখানে জাকাতের হকদার আছে, সেখানেও ফিদিয়া দেওয়া যাবে। (আল ইনায়াহ : ২ / ২৭৩)