হাসানুজ্জামান ঝড়ু
ক্রিকেট বিশ্বের চোখ এখন ভারতের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। এখানেই অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ২০২৩ আসরের ফাইনাল। গুজরাত ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের মালিকাধীন সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়ামটির আসন সংখ্যা এখন এক লাখ ৩০হাজার।
দর্শকপূর্ণ স্টেডিয়ামে নানান আয়োজন ও উৎসবমুখর পরিবেশে এবারের বিশ্বকাপটির পর্দা নামবে তা অনুমান করা যাচ্ছে। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখবে ক্রিকেটারদের মাঠের পারফরম্যান্স। বিশ্বকাপের রঙ আরো আলোকিত হবে যদি দারুন একটা রোমাঞ্চিত ও উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচটা দিয়ে ২০২৩ বিশ্বকাপের পর্দাটা সফলভাবে নামে।
ফাইনালে জায়গা করে নেয়া ভারত-অস্ট্রেলিয়া দুদলের যথেষ্ট রসদ রয়েছে রোমাঞ্চকর ফাইনাল উপহার দেয়ার। দুই দলের বিশ্বকাপ যাত্রাটা শুরু হয়েছিল ভিন্নভাবে। প্রথম দুই ম্যাচ হেরে খাদের কিনারায় চলে যাওয়া অস্ট্রেলিয়া দুর্দান্তভাবে কামব্যাক করেছে। আর ভারতে জয়যাত্রা তো শুরু থেকে চলছে। আর এক যায়গায় দুই দলের পার্থক্য আছে। অস্ট্রেলিয়ার লোয়ার অর্ডারকে বেশ কয়েকটি ম্যাচে পরীক্ষা দিতে হয়েছে। তবে ভারতের টপ ও মিডল অর্ডার এতটাই ভাল খেলেছে যে তাদের লোয়ার অর্ডারকে ব্যাট হাতেই নামা লাগেনি। এই যায়গায় ভারতে বড় দুচিন্তা। তাছাড়া ভারতকে ঠেকানোর মতো অপশন নেই। এছাড়া কোন একক প্লেয়ারে উপর ভর করে ফাইনাল আসেনি দল দুটি। বিগত ম্যাচ গুলোতে দুই দলের সেরা খেলোয়াড়দের দিকে তাকালেই সেটা দেখা যায়।
তবে ফাইনালে টস একটা বড় ভূমিকা রাখতে পারে। যে দলই টস জিতবে তারা প্রথমে ব্যাট করতে চাইবে। কেননা ফাইনালের মতো ম্যাচে রানের চেঞ্জের চাপ সাথে শিশির একটা ভূমিকা রাখতে পারে রাতে। তারপরে আবার ফ্লাড লাইটের আলোয় প্রথম দিকে বল বেশ সুইং করে। পিচ নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ার যা খবর তাতে কিছুটা স্লো হবে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রায় দেড় লাখ ধারণ ক্ষমতা স্টেডিয়ামের পুরোটাই থাকবে ভারতীয় দর্শকদের দখলে। মিচেল স্টার্কসহ অজিদের সকলে বিশ্বাস করেন গর্জনপূর্ণ এবং দেখার মত খেলা হবে ক্রিকেট পাগল স্বাগতিক দেশটিতে। স্টার্ক সেমিফাইনালে ৩৪ রানে ৩ উইকেট নিয়ে দারুন আত্মবিশ্বাসী। বিধ্বংসী হয়ে উঠতে পারেন তার বোলিং পার্টনার জশ হ্যাজেলউড আর প্যাট কামিন্স।
সেমিফাইনালে তার প্রমাণ পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে উল্টো দেখা গেছে ভারতীয় পেসারদের। একমাত্র মোহাম্মদ শামি ছাড়া বুমরা ও সিরাজ তেমন সুবিধা করতে পারেনি। উইকেট পেলেও ধারাবাহিক লাইন লেন্থ ঠিক রেখে বল করতে পারেনি তারা। তবে এক বিশ্বকাপে তিনবার পাঁচ ও একবার ৪ উইকেট নেয়া সামি তা খুব বেশি বুঝতে দেননি।
তবে ভারতীয় দুই স্পিনার পুরো বিশ^কাপে ধারাবাহিক ভালো বল করছেন। রবীন্দ্র জাদেজা ১৬ ও কুলদীপ যাদব নিয়েছেন ১৫ উইকেট। তবে দুজনই ওভার প্রতি রান দিয়েছেন ৪.২৫ ও ৪.৩২ করে।
ভারতের এ বোলিং লাইন বড় হুমকি হবে অস্ট্রেলিয়ার টপ অর্ডারের বিপক্ষে। শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে অজিদের টপ অর্ডার বিশ্বকাপের শুরু থেকে নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে। বাংলাদেশ, নেদারল্যান্ড আর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একসাথে জ্বলে উঠেছে টপ অর্ডার। তবে ধারাবাহিক তাদের ওপেনার শেন ওয়ার্ন। দলের বড় তারকা স্টিভেন স্মিথ ৯ ম্যাচ খেলে রান করেছেন ২৭১। নেদারল্যান্ডের সাথে সর্বোচ্চ ৭১ রানের ইনিংসটি খেলেন। অপরদিকে ম্যাক্সওয়েল দুর্দান্ত দুটি ইনিংস খেলেছেন। তবে দুটিই খেলেছেন নেদারল্যান্ড ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে।
সব মিলিয়ে ভারত পরিস্কার ফেভারিট। টানা ১০টি ম্যাচে অভাবনীয় জয়। ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং প্রত্যেকটা ডিপার্টমেন্ট দারুণভাবে সক্রিয়। ম্যাচ জেতানোর মতো অসংখ্য মেধাবী ক্রিকেটারে ভরা ভারতীয় দল।
রোহিত শর্মা দারুণ মনোবল নিয়ে টিমকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রথম পাওয়ার প্লের রিস্ক নিজের ঘাড়ে তুলে নিয়েছেন। ১২৪ এর উপরে স্ট্রাইক রেটে সাড়ে পাঁচশো রান করেছেন। স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাটিং করছেন শুভমান গীলের সাথে। মাঝের ওভারগুলো নেতৃত্ব দিচ্ছে ৭১১ রান করা বিরাট কোহলি। কিং কোহলীর প্রথমত দায়িত্ব নিচ্ছেন ইনিংস গড়ে তোলা। তারপর শেষ দিকে স্ট্রাইকরেট মেইনটেইন করে শেষ পর্যন্ত খেলা। কোন অঘটন না ঘটলে অথবা ২০২৩ এর ড্রিম ডেভিারী না হলে বিরাটকে আউট করা দারুণ কষ্টকর ব্যাপার হবে অজি বোলারদের। শ্রেয়ার আইয়ার কেএল রাহুল যে দক্ষতা ও মেধার পরিচয় দিয়েছেন বিগত ইনিংসগুলোতে তার অর্ধেক পারফরফরম্যান্স যদি প্রয়োগ করতে পারে সেটা বড় একটা চিন্তার কারণ হতে পারে প্যাট কামিন্সের জন্য। সাথে তো হাই স্ট্রাইক রেট এ ব্যাটিং করা সুরাইয়া কুমার ইয়াদব এবং রবীন্দ্র জাদেজা তো আছেনই।
সব মিলিয়ে সাধারণ দর্শকদের জন্য জমজমাট একটা ফাইনাল হবে বলে আশা করছি।