নিজস্ব প্রতিবেদক
পুলিশের কাছ থেকে মোটরসাইকেল ছাড়াতে এক বড় ভাইকে সাড়ে হাজার টাকা দিতে আপন খালা রওশন আরা রোশনি হত্যা করা হয়। মামলাটি এক এক করে তিন কর্মকর্তা তদন্ত শেষে এ তথ্য উদ্ঘাটন করা হয়। এরপর তিন কিশোরসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)’র পরিদর্শক মোস্তফা হাবিবুল্লাহ চার্জশিট দাখিল করেছেন।
অভিযুক্তরা হলো, যশোরের উপশহর ৫১/৫২ ডি ব্লকের মৃত মাহমুদ আলম চৌধুরীর ছেলে ও নিহতের বোনের ছেলে রিয়াজুল আলম চৌধুরী হৃদয়, ২১ ডি ব্লক বাবুর বাড়ির ভাড়াটিয়া আব্দুল হাকিমের ছেলে বুরহান, উপশহর ৬ নম্বর সেক্টরের মশিউর রহমানের ছেলে নাহিদ হাসান ও বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার ঝনঝনিয়া গ্রামের বাসিন্দা এবং যশোর উপশহরের আব্দুল হাকিমের স্ত্রী আসমা বেগম।
তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, উপশহর ডি ব্লকের মৃত রিয়াজুর রহিম খন্দকারের মেয়ে রওশন আরা রোশনি। রোশনির স্বামী সরকারি কর্মকর্তা মারা গেছেন ২০/২১ বছর আগে। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে যশোর শহরের আশ্রম মোড়ে নিজেদের বাড়িতে বসবাস করতেন। ছেলেটি আমেরিকাতে পিএইচডি অর্জনের জন্য রয়েছেন। মেয়েটি ঢাকার স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন।
রিয়াজুল আলম চৌধুরী হৃদয় নিহত রোশনির আপন বোনের ছেলে। হৃদয়ের তার বন্ধু বুরহান। বুরহানের কাছ থেকে হৃদয়ের মোটরসাইকেল আটক করে পুলিশ। তাদের বড় ভাইকে দিয়ে তদবির করে মোটরসাইকেলটি ছাড়ানো হয়। কিন্তু সেই বড় ভাই ওদের কাছে সাড়ে চার হাজার টাকা দাবি করে। টাকা না দেয়ায় বিভিন্ন সময় তাগাদা দিয়ে হুমকি ও দেয়। ফলে বিষয়টি হৃদয়কে বলা হলে সে বুরহানকে দেখা করতে বলে। দেখা হলে হৃদয় বলছে তার খালা বাড়িতে যেতে। ২০২২ সালের ২৯ আগস্ট সকাল সাড়ে ৮টার দিকে হৃদয়, বুরহান এবং তাদের আরেক বন্ধু নাহিদ হাসান আশ্রম মোড়ে তার খালা রোশনির বাড়িতে যায়। তবে প্রথমে হৃদয় একা প্রবেশ করে। কয়েক মিনিট পরই মোবাইলে ওই দুইজনকে ডেকে নেয় হৃদয়। বুরহান ও নাহিদ গেলে তার খালা জানতে চান ওরা কারা ? হৃদয় বলছে তার বন্ধূ। এসময় হৃদয় এবং বুরহানের কাছে দুইটি চাকু ছিলো। তার খালা অন্য রুমে থাকার কারণে পানি পান করবে বলে হৃদয় ডাক দেয়। পানি নিয়ে আসার সাথেই হৃদয় মুখ চেপে ধরে এবং বুরহান পিঠে চাকু দিয়ে আঘাত করে। কয়েকটি আঘাতের পর মাটিতে পড়ে যান রোশনি। এরপর হৃদয় নিজেই আবার কয়েকটি আঘাত করে। মৃত নিশ্চিত হওয়ার পরে লাশটি ঘঘরে বক্স খাটের চালির নিচেয় রেখে দেয়। এরপরে ঘরে থাকা টাকা পয়সা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে তারা বাইরে থেকে তালা মেরে চলে যায়।
মামলাটি প্রথমে তৎকালীন কোতোয়ালি থানার এসআই মাইদুল ইসলাম এবং পিবিআইয়ের এসআই স্নেহাশিষ দাস তদন্ত করেন। তদন্তকালে হৃদয়, বুরহান এবং নাহিদকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেখানো মতে রোশনির বাসা থেকে চোরাই মাল উদ্ধারসহ আসমা বেগমকেও গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে হত্যার কারণ উদঘাটন এবং চোরাই মালামাল উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে এসআই স্নেহাশীষ দাস অন্যত্র বদলি হওয়ায় মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান (পিবিআই)’র পরিদর্শক মোস্তফা হাবিবুল্লাহ। শেষ পর্যন্ত তিনিই মামলাটি তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছেন।