ঢাকা অফিস
ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রথম পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় রাজধানীর কমলাপুর স্টেশন থেকে ভাঙ্গার উদ্দেশে একটি লম্বা হুইসেল দিয়ে ট্রেনের এ যাত্রা হয়। এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের বহুলপ্রতীক্ষিত স্বপ্ন পূরণ হলো।
রেলমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন, রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও রেলওয়ের কর্মকর্তারা এ ট্রেনযাত্রায় রয়েছেন।
রেলমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্প ১০ অক্টোবর উদ্বোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রী তারিখ দিয়েছেন। সেদিন একটি সুধীসমাবেশও হবে।
এ রেললাইন উদ্বোধনের ফলে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক যুগান্তকারী পরিবর্তন হবে বলেন মন্ত্রী। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা সহজ হবে। পদ্মা সেতু দিয়ে রেলপথে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ স্থাপিত হবে।
পুরো প্রকল্প যশোর পর্যন্ত। সেটি উদ্বোধন হবে ২০২৪ সালের জুনে। আর এ বছর চালু হবে ফরিদপুরের ভাঙ্গা জংশন পর্যন্ত।
পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত প্রায় ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেলপথ নির্মাণ করছে রেলওয়ে। এর মধ্যে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৮২ কিলোমিটার রেলপথ চালু হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের এক সপ্তাহ পর বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা। শুরুতে একটি ট্রেন পরিচালনা করা হবে। প্রকল্প কার্যালয় থেকে ঢাকা-পদ্মা সেতু-রাজবাড়ী রুটে ট্রেন চালানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
অন্যদিকে রাজশাহী থেকে ঢাকা পর্যন্ত একটি ট্রেন চালানোর প্রস্তাব রয়েছে। মধুমতী এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভাঙ্গা পর্যন্ত আসে। এ ট্রেন ঢাকা পর্যন্ত আনা হতে পারে। পদ্মা সেতু রেল লিঙ্ক প্রকল্পের অধীনে চীন থেকে ১০০ নতুন কোচও কেনা হয়েছে। নতুন কোচ দিয়েই ট্রেন চালু করা হবে।
রেলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উদ্বোধনের সময় সব স্টেশন এবং পুরো সংকেতব্যবস্থা হয়তো চালু করা যাবে না। শুরুতে তিনটি স্টেশনে ট্রেন থামার ব্যবস্থা থাকবে। স্টেশনগুলো হচ্ছে মাওয়া, পদ্মা (জাজিরা) ও শিবচর। মুন্সীগঞ্জের নিমতলা স্টেশনটিও চালুর চেষ্টা চলছে।
প্রকল্পের অগ্রগতি প্রতিবেদন অনুসারে, আগস্ট পর্যন্ত প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৮২ শতাংশ। এ প্রকল্পে তিন অংশে বিভক্ত হয়ে কাজ চলমান। প্রথম অংশের ঢাকা-মাওয়া অংশে অগ্রগতি ৮০ দশমিক ৫০ শতাংশ। এ অংশে রেললাইন নির্মাণ শতভাগ হয়ে গেলেও নতুন চারটি স্টেশনের একটিরও শতভাগ কাজ হয়নি। কাজ বাকি রয়েছে ব্যালাস্টেড ট্র্যাক ও মেজর দুই ব্রিজের।
আর দ্বিতীয় অংশ মাওয়া-ভাঙ্গার কাজের অগ্রগতি ৯৬.৫০ শতাংশ। ব্যালাস্টেড ট্র্যাক ও সিগন্যালিংয়ের কাজ বাকি। নতুন চারটি স্টেশনের দুটির নির্মাণ শেষ, বাকি দুটি বাকি। এ ছাড়া এ অংশের সব কাজই সম্পন্ন হয়েছে।
আগামী বছরের জুনে উদ্বোধনের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া ভাঙ্গা থেকে যশোর অংশের কাজের অগ্রগতি ৭৮ শতাংশ। এ অংশে রেললাইন নির্মাণ প্রায় ৯৯ শতাংশ হয়ে গেলেও নতুন ৯ স্টেশনের একটিরও শতভাগ কাজ হয়নি। কাজ বাকি রয়েছে ব্যালাস্টেড ট্র্যাক ও মেজর একটি ব্রিজের। এসব কাজের সঙ্গে এ অংশে সবচেয়ে বেশি কাজ বাকি রয়েছে সিগন্যালিংয়ের, রেলপথ নির্মাণ শেষ হলেই শুরু হবে এ কাজ।
প্রসঙ্গত, ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণে ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি এ প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। জিটুজি পদ্ধতিতে এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে চীন। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। রেলসংযোগের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা।
ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হবে ঢাকা-যশোর পর্যন্ত পদ্মা সেতু রেল লিঙ্ক রুটটি। এ রুট দিয়ে বাংলাদেশের রেলপথ ভারতের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে।
এ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে নতুন চার জেলা (মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল) অতিক্রম করে যশোরের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে।
একই সঙ্গে বিদ্যমান ভাঙ্গা-রাজবাড়ী থেকে কুষ্টিয়া হয়ে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ দিয়ে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের সঙ্গেও যুক্ত হবে এ রেলপথ। ফলে এসব অঞ্চলে কম খরচেই পণ্য ও যাত্রী চলাচল করতে পারবে ঢাকার সঙ্গে।