নিজস্ব প্রতিবেদক
সুমন হোসেন নামে এক যুবককে লিবিয়ায় আটকে রেখে নির্যাতন ও মুক্তিপণ দাবির মামলায় পিতা-পুত্রকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার বিকেল ৩টার দিকে যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের আব্দুলপুর গ্রাম থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
আটকরা হলেন, আব্দুলপুর গ্রামের ইব্রাহিম হোসেন (৬০) ও তার ছেলে ইকবাল হোসেন (৩৫)।
পুলিশ জানায়, বুধবার দুপুরে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী যুবকের পিতা একই গ্রামের শওকত আলী। মামলায় গ্রেপ্তার দুই জন ছাড়াও ইব্রামিহ হোসেনের আরেক ছেলে বিপ্লব হোসেনকেও আসামি করা হয়েছে। তবে তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
শওকত আলী এজাহারে উল্লেখ করেছেন, আসামি বিপ্লব হোসেন ১০ বছর ধরে লিবিয়ায় থাকেন। মাঝে মধ্যে এলাকা থেকে লোকজন নিয়ে যান সেখানে। আসামিরা তার ছেলে সুমন হোসেনকে (২১) লিবিয়ায় পাঠাবে কি না জানালে তিনি তাদের প্রস্তাবে রাজি হন। ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর বিকেলে তার বাড়িতে বসে আসামি ইব্রাহিম ও ইকবালের সাথে কথা হয় এবং মৌখিক চুক্তি হয়। সুমনকে পাঠানোর জন্য সাড়ে ৪ লাখ টাকা দাবি করেন তারা। তিনি এতে রাজি হন এবং প্রাথমিকভাবে ৬০ হাজার টাকা দেন। এরপর একই বছরের ১৮ ডিসেম্বর সুমনকে লিবিয়ায় নিয়ে যান আসামি ইকবাল। পরে ইকবাল দেশে ফিরে এলে তাদের বাকী ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন শওকত আলী। কিন্তু ১০দিন পর ২৮ ডিসেম্বর লিবিয়ায় অবস্থানরত আসামি বিপ্লব হোসেন কাজের কথা বলে কৌশলে সুমন হোসেনকে রাজধানী ত্রিপলীতে যান। সেখানে একটি ঘরে সুমন হোসেনকে আটকে রেখে মারধর ও টাকা দাবি করেন বিপ্লব হোসেনকে। মোবাইল ফোনে ছেলের কাছ থেকে নির্যাতনের কথা জানতে পেরে বিপ্লব হোসেনের পিতা ইব্রাহিম ও ভাই ইকবালের কাছে ছুটে যান শওকত আলী। কিন্তু তারাও তার কাছে টাকা দাবি করেন। ফলে ছেলেকে মুক্ত করতে তাদেরকে কয়েকদফায় মোট ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ৮৫০ টাকা দেন শওকত আলী। এরই মধ্যে বিপ্লব হোসেনের হেফাজত থেকে কৌশলে পালিয়ে লিবিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশের অ্যাম্বাসিতে আশ্রয় নেন সুমন হোসেন। পরে অ্যাম্বাসির মাধ্যমে দেশে ফিরে আসেন তিনি। ছেলে দেশে ফিরে আসার পর তার কাছ থেকে সবকিছু শুনে ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ দিয়ে বিচার দাবি করেন শওকত আলী। এরপর ইউপি চেয়ারম্যান আসামি ইব্রাহিম ও ইকবালকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেন। এ সময় তারা টাকা ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকারও করেন। কিন্তু তারা আর টাকা ফেরত দেননি।
কোতয়ালি থানা পুলিশের এসআই ইয়াসিফ আকবর জয় জানিয়েছেন, মামলা হওয়ার পর আসামি ইব্রাহিম ও ইকবালকে বিকেলে তাদের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
