নিজস্ব প্রতিবেদক
পৌষের শীতের নরম বিকেল। যশোর শিল্পকলা একাডেমির প্রাঙ্গণে দু-ধারে সারি সারি স্টল। এসব স্টলের টেবিলে থরে-থরে সাজানো বাহারি সব পিঠা। জামাইপুলি, ঝালজামাই, পাটিসাপটা, মালপোয়া, পুলি, নকশি, দুধচিতই, ক্ষীরকুলি, তিলপনির, মালাই পিঠা, মুঠি পিঠা, লবঙ্গ লতিকা, সুন্দরী পাকানসহ প্রায় শত রকমের পিঠা দিয়ে সাজানো হয়েছে স্টলগুলোতে। একটু দূরে শিল্পকলার উন্মুক্ত মঞ্চ। সেখানে চলছে লোকগানের আসর। শিল্পকলা প্রাঙ্গণে এমন আবহ দেখে বুঝতে বাকি রইল না এটা জাতীয় পিঠা ও লোক সংস্কৃতি উৎসব। বাঙালির রসনা বিলাসের অন্যতম উপকরণ পিঠার স্বাদ নিতে প্রথমদিনই উৎসবে যোগ দেন শহরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। দলবেঁধে এই উৎসবে মানুষেরা আসছেন, স্টল থেকে বাহারি সব পিঠার স্বাদ নিয়ে লোকগানের মনোরম পরিবেশনা উপভোগ করছেন।
দেশীয় পিঠার ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে এবং পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে তা ছড়িয়ে দিতে তিনদিন ব্যাপী এই উৎসবের আয়োজন করেছে যশোর শিল্পকলা একাডেমি। উৎসবের প্রথম দিন রোববার বিকেলে উদ্বোধন করেন যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার।
এ সময় তিনি বলেন, ‘আমরা বাঙালি ও বাংলা ইতিহাস ঐতিহ্যেকে সামনে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার টেষ্টা করি। তারই প্রটেষ্টার অংশ হিসাবে আজকের এই পিঠা উৎসব। দীর্ঘ আবহমানকাল ধরে বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্যর মধ্যে পিঠা রয়েছে। কিন্তু কালের পরিক্রমায়, সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মুখে পরেই আমাদের এই ঐতিহ্যেগুলোতে হারাতে বসেছি। কিন্তু আমরা চায় না, এই ঐতিহ্যেগুলো হারিয়ে না যাক। বৈচিত্র মধ্যে মানবজীবনের সম্পূর্ণতা। সবাই একরকম হলে তো আর বৈচিত্র থাকলো না। বৈচিত্রতার মধ্য সার্থকতা। এটা ভালো দিক, সারাদেশে পিঠা উৎসব হচ্ছে। অন্তত এই উৎসবের কারণে আমরা আমাদের গ্রামের সেই পিঠাপুলির ঘ্রাণ নিতে পারছি, স্বাদ নিতে পারছি। তবে, এ উৎসবকে আরো ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ আমাদেরকেই নিতে হবে।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- জেলা শিল্পকলা একাডেমির সহসভাপতি ফারাজী আহমেদ সাঈদ বুলবুল, জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচার অফিসার হায়দার আলী, শিল্পকলা একাডেমির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অনুপম দাস, চঞ্চল সরকার, নির্বাহী সদস্য আতিকুজ্জামান রনি, শহিদুল ইসলাম বাদল প্রমুখ। আলোচনা শেষে প্রধান অতিথি পিঠা মেলার স্টলগুলো পরিদর্শন করেন।
জেলা শিল্পকলা একাডেমির সহ সভাপতি ফারাজী আহমেদ সাঈদ বুলবুল জানান, ‘বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি বিগত কয়েক বছর ধরে পিঠা উৎসব করে আসছে। সেই পিঠার উৎসবের ধরণ হলো একদিন ব্যাপী। তাও পিঠা খাওয়ায়ে আগত অতিথিদের আপ্যায়িত করার মধ্যেই সীমাবন্ধ থাকতো। কিন্তু এবার প্রথম বারের মতো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি তিনদিনের পিঠা মেলা ও লোক সংস্কৃতি উৎসবের আয়োজন করেছে। তিনি বলেন, বাঙালীর যে ঐতিহ্যে পিঠার সংস্কৃতি শহর জীবনে তুলে আনা, নতুন প্রজন্মকে গ্রামীন পিঠার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য মূলত এই আয়োজন। প্রতিদিন লোকজ সংগীত পরিবেশন হবে। এই মেলাতে যশোর শহরের ১৩টি পিঠা উদ্যোক্তা স্টল দিয়েছেন। এই মেলার যশোরের যে যশ খেজুর রস ও গুড়; সেটিও থাকছে। প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে এই উৎসব। তিন দিনের এই উৎসব শেষ হবে ৩০ জানুয়ারি।
এদিকে, উৎসবে বাড়তি আমেজ সৃষ্টি করেছে শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অংশ গ্রহণে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। কচি কাঁচাদের এই প্রতিযোগিতায় শিশুরা তাদের রঙ তুলিতে গ্রামীণ বাংলার দৃশ্য পিঠা পুলি বানানো, গাছি খেজুর গাছ কাটা, রস আহরণসহ বিভিন্ন দৃশ্য চিত্রায়ন করেন।