নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন। গুরুতর অবস্থায় দুজনকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শনিবার দুপুরের পর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের প্রতিবাদে সন্ধ্যায় যশোর-চৌগাছা সড়ক অবরোধ করে যানচলাচল বন্ধ করে দেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। রাত ৮টার দিকে যবিপ্রবি’র ভিসি ও পুলিশ এসে ঘটনার নিষ্পত্তির আশ্বাস দিলে তারা অবরোধ তুলে নেন। এদিকে, শান্তি সমাবেশকারীদের উপর হামলার ঘটনায় যবিপ্রবি ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করা হয়েছে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আফিস ইনান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতরা হলেন, যবিপ্রবি ছাত্রলীগের সহসভাপতি আল মামন সিমন (২৮), ছাত্রলীগ কর্মী আশরাফুল আলম (২৩)। ঘটনার পর আল মামুন সিমন শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের প্রক্টরের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।
যবিপ্রবি ছাত্রলীগের সহসভাপতি আল মামুন সিমনের কর্মীরা জানান, শনিবার ক্যাম্পাসে আওয়ামী লীগের উন্নয়ন ও শান্তি সমাবেশ করে ছাত্রলীগ। কিন্তু সমাবেশ শেষ হলে যবিপ্রবি ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানার নির্দেশে চাপাতি, রড, লোহার পাইপ, বাঁশের লাঠি নিয়ে মনিরুল ইসলাম হৃদয়, রায়সুল ইসলাম রানা, বেলালসহ আরো অনেকে সমাবেশকারীদের উপর হামলা করেন। এসময় আল মামুন সিমন, আশরাফুল আলম গুরুতর আহত হন। পরে বিকেল ৫টার দিকে তাদেরকে যশোর জেনারেল হাসাপাতালে নিয়ে আসেন। যবিপ্রবি ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেলরানার পক্ষীয় কর্মীরা জানান, আল মামুন সিমনের লোকজন সভাপতিকে না জানিয়ে ক্যাম্পাসে আওয়ামী লীগের উন্নয়ন ও শান্তি সমাবেশের আয়োজন করে। এর কারণ শুনতে গেলে তারা হামলা চালায়। এতে আমাদের আশরাফুল আলমসহ (২৩) আরও কয়েকজন আহত হন। এমন কি তারা হাসপাতালে নেয়ার সময় অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখে। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ক্যাম্পাসে মারামারির ঘটনার প্রতিবাদে সন্ধ্যা ৬টার দিকে যশোর-চৌগাছা সড়ক অবরোধ শুরু করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ফলে সড়কটিতে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে রাত ৮টার দিকে যবিপ্রবি’র ভিসি প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন ও পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন। অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা।
যশোর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) বেলাল হোসাইন বলেন, একটি অনুষ্ঠান ঘিরে ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে কথা কাটিকাটি হয়। এক পর্যায়ে তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনায় দুপক্ষেই কমবেশি কয়েকজন আহত হয়েছে। তিনি জানান, ঘটনার পরে কিছুক্ষণের জন্য যশোর-চৌগাছা আঞ্চলিক সড়কটি অবরোধ করে বিক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীরা। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে সড়কটি স্বাভাবিক হয়। এই ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি। এ বিষয়ে যবিপ্রবি’র ভিসি প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন জানান, ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে তা হবে না। জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে জানানো হয়েছে। স্থানীয় সাংসদও রিজেন্ট বোর্ডের মেম্বর কাজী নাবিল আহমেদ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে।
হামলার ঘটনায় যবিপ্রবি ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত, শোকজ :
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করা হয়েছে। শনিবার বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আফিস ইনান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত অনাকাঙ্খিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সংগঠনবিরোধী, শৃংখলা পরিপন্থী ও সংগঠনের মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়, এমন কর্মকা-ে জড়িত থাকার অভিযোগে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করা হলো। একই সাথে কেন পরবর্তী সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তার যথোপযুক্ত লিখিত জবাব আগামী সাতদিনের মধ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দপ্তর সেলে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বিজ্ঞপ্তিতে যবিপ্রবি ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিতের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ঘটনা উল্লেখ করেনি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একাংশের নেতারা জানিয়েছেন, শনিবার ক্যাম্পাসে ঘটনার জের ধরে যবিপ্রবি ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে যবিপ্রবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকরামুল কবির দ্বীপ সাংবাদিকদের জানান, ক্যম্পাসে সোহেল রানার অনুসারী হিসেবে পরিচিত মনিরুল ইসলাম হৃদয়, রায়সুল ইসলাম রানা, বেলাল, রকি, মুসফিক, লাব্বি, সোয়েব, রাব্বি, রাফি, সোহেল রানা, শাহিনুর, লিমন, মোহাম্মদ রাফি, মেহেদী রাব্বি চাপাতি, রড, লোহার পাইপ, বাঁশের লাঠি, স্ট্রাম্প নিয়ে সমাবেশকারীদের উপর এই হামলা করে। এসময় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আল মামুন সিমন ও আশরাফুল আলম নামে এক ছাত্রলীগ কর্মী গুরুতর আহত হন। পরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসাপাতালে নিয়ে আসেন। পরে আহতদের যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রতিবাদে যশোর-চৌগাছা সড়ক অবরোধ করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ফলে সড়কটিতে বর্তমানে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে গত ৩ সেপ্টেম্বর যবিপ্রবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকরামুল কবির দ্বীপকে যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে ইস্যু বানিয়ে সভাপতি সোহেল রানা ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর ফয়সাল সাময়িক বহিস্কার করেন। তখন অভিযোগ ওঠে প্রতিপক্ষ দ্বীপকে বহিস্কার করতে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী’ কাজ করেছেন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। পরে দ্বীপের উপর আনীত অভিযোগ তদন্ত করে মিথ্যা প্রমাণ পায় কেন্দ্রীয় কমিটি। এজন্য তার বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করে কেন্দ্রীয় কমিটি। আর শনিবার ‘সরকারের উন্নয়ন ও শান্তি সমাবেশকারীদের’ উপর ছাত্রলীগ সভাপতি অনুসারীদের হামলার পর কেন্দ্রীয় কমিটি যবিপ্রবি ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করে।
২০২২ সালের ৩১ জুলাই রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্যরে সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের মো. সোহেল রানাকে সভাপতি ও পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের তানভীর ফয়সালকে সাধারণ সম্পাদক করে ১১ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। সম্প্রতি ক্যাম্পাসে বেশ কয়েকটি বিতর্কিত ঘটনায় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে। তার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ কমিটি স্থগিত ও শোকজ নোটিশ করেছে।
