২০২২ সালে ৫৩২ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এরমধ্যে স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থী রয়েছেন ৪৪৬ জন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮৬। ২৭ জানুয়ারি স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা : সমাধান কোন পথে? শীর্ষক সমীক্ষা প্রকাশকালে এ তথ্য দিয়েছে আঁচল ফাউন্ডেশন। তারা বলছে, আত্মহত্যা মূলত সম্পূর্ণভাবে প্রতিরোধযোগ্য। কিন্তু এই বিষয়টি যেনো এখন আমাদের প্রতিদিনের একটি সাধারণ নিউজে পরিণত হয়েছে। এই বিষয়ে সচেতনতা একটি জীবনকে বাঁচিয়ে দিতে পারে।
বিভিন্ন কারণে দেশে আত্মহত্যার প্রবণতা দিনকে দিন যেন বাড়ছে। বিষয়টি নিয়ে অনেকে অনেক রকম করে ভাবছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘মানুষ বাঁচুক ভালোবাসায়’ শিরোনামে ‘নো সুইসাইড’ নামে একটি সংগঠন আত্মহত্যা প্রতিরোধী সম্প্রতি ক্যাম্পেইন করে আত্মহত্যা প্রতিরোধে প্রচারণা চালান। ক্যাম্পেইনে যে কথাটি উঠে আসে তা হলো, আত্মহত্যা যে করতে চায় তার একাকিত্ব দূর করতে তার কাছে সব সময় ইতিবাচক বিষয় তুলে ধরতে হবে।
ক্যাম্পেইনে উঠে আসা এ বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ব্যবস্থা বলে মনে হয়। কেননা যার জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা সৃষ্টি হয়- সে একাকি থাকার সুযোগ পেলে আত্মহননের সিদ্ধান্তটি দ্রুত কার্যকর করতে তার জন্য সহায়ক হয়। আমরা এমন একটি সমাজে বাস করি, যেখানে মানুষের প্রতি সহমর্মিতা নেই। এ কারণে বিচ্ছিন্নতাবোধ তৈরি হচ্ছে, যা আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তখন মানুষের সহমর্মিতা না পাওয়ার ফলে ওই ব্যক্তি অন্যদের থেকে দূরে চলে যায়। এ সময় যদি সাহায্যের হাত বাড়াতে পারি তাহলে আত্মহত্যা থেকে পরিত্রাণ সম্ভব।
আত্মহত্যা একটি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত হতে পারে না। এর পেছনে রাষ্ট্রের দর্শন, অর্থনীতি ও রাজনীতি জড়িত। রাষ্ট্রে যখন বেকারত্ব বাড়ে এবং অবিচার হয় তখন আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ে। আমরা যদি এর দায়িত্ব না নেই তাহলে এ হার আরো বাড়বে। যারা হতাশায় আছে তাদেরকে বুঝতে হবে জীবন অনেক সুন্দর। একবার ব্যর্থ হওয়া মানে সব শেষ নয়। জীবনে অনেক সুযোগ আসবে।
আত্মহত্যা কোনোভাবেই ব্যক্তিগত নয়। এ কারণে প্রচলিত আইনে আত্মহত্যার চেষ্টাকারীকে সাজার মুখে পড়তে হয়। আর ইসলাম ধর্মে তো একটি বড় গোনাহ। এ ধর্মে বিশেষভাবে বলা হয়েছে যে, আত্মহত্যা করবে সে কবিরা গোনাহ অর্থাৎ বড় গোনাহের কাজ করবে। তাহলে আমাদের বুঝতে বাদ থাকছে না যে কোনোক্রমেই আত্মহত্যা করা যাবে না। নানাভাবে নানা কৌশলে তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে আত্মহত্যা করার ভেতর কোনো কৃতিত্ব নেই। এ ধরাধামে বেঁেচ থেকে ঘাত-প্রতিঘাতের ভেতর দিকে এগোতে হবে। মানুষ হয়ে যখন জন্ম নেয়া হয়েছে তখন চলার পথ কোথাও কুসুমাস্তীর্ণ কোথাও কন্টকিত। কন্টকিত পথ চলতে গিয়ে এই যে অবস্থা তাতে জীবনের স্বাদ আছে, বৈচিত্র আছে। এ ভাবে জীবন না হলে তো সে জীবন মূল্যহীন হয়ে যায়।