সুনীল ঘোষ: সবকিছু চালু থাকলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ নিয়ে সবখানে আলোচনা সমালোচনা চলছে। করোনার উর্ধমুখী সংক্রমণ ঠেকাতে স্কুল-কলেজ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিভিন্ন মহলে জোর বিতর্কও চলছে। শিক্ষার্থীদের ঘটা করে টিকাদানের পরও স্কুল-কলেজ বন্ধের সিদ্ধান্ত স্ববিরোধী ও বিতর্কিত বলেও অনেকে মন্তব্য করেছেন। আন্দোলন ভীতি থেকেও হঠকারী এমন সিদ্ধান্ত-বলেছেন কেউ কেউ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়ে মতামত জানতে যোগাযোগ করলে বিভিন্ন মহল থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। এদিকে, ইউনিসেফও স্কুল বন্ধ না রাখতে আহবান জানিয়েছে। সম্প্রতি এক বিবৃতিতে সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় উন্নয়নশীল ও স্বল্প আয়ের দেশগুলোর বিপুল সংখ্যক শিশু ইতোমধ্যে ঝরে পড়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন বলেছেন, শিশুর সুরক্ষার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর। তাদের ঝুঁকির বাইরে রাখতেই সরকার স্কুল-কলেজ বন্ধ রেখেছে। সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে বঙ্গবন্ধু কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কখনো কালক্ষেপণ করেন না। তিনি বলেন, মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে প্রশাসনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে সচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।
জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা স্কুল-কলেজ খুলে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু আমাদের সরকার শুনছে না। রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্যে সরকার স্কুল-কলেজ ও রাজনৈতিক সভা সমাবেশে বন্ধ করে রেখেছে। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত। কিন্তু হাট-বাজার, শপিংমল ও যানবাহন খোলা রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যিক মেলাও চলছে। কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। তিনি বলেন, এতে স্পষ্ট হয়, বিরোধী দলের আন্দোলন কর্মসূচি ঠেকাতে সরকার নানা বিধিনিষেধ দিয়ে রেখেছে। স্কুল-কলেজে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠদানের পক্ষে তিনি মত দেন।
জাসদের কেন্দ্রীয় কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট রবিউল আলম বলেন, সরকারের স্কুল-কলেজ বন্ধের সিদ্ধান্তকে সঠিক বলে মনে করেন। তিনি জানান, প্রতিটি বিষয়কে সবকিছুর সাথে তুলনা করা ঠিক না। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরতরা যতটা সচেতন, শিশুরা ততোটা সচেতন না মন্তব্য করে তিনি বলেন-একারণেই সরকার স্কুল-কলেজ বন্ধ রেখে শিশুদের তাদের ঝুঁকির বাইরে রেখেছে। তবে বাণিজ্যিক মেলা চালু রাখার জোর বিরোধীতা করে তিনি বলেন, যশোরসহ দেশের সব মেলা বন্ধ রাখা উচিত।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবীর জাহিদ বলেন, ২৯ জানুয়ারি আমাদের বামজোটের বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি ছিল। বিকেলে পার্টি অফিসের সামনে নেতাকর্মীরা যখন মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তখন পুলিশ এসে বাধা দেয়। তাদেরকে জানানো হয় সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় কোনো মিছিল করা যাবে না।
তিনি বলেন, আমরা তখন পুলিশ বাহিনীর কাছে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিই-যদি জমায়েত নিষিদ্ধ হয়, তাহলে বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করে শহরে একটি মেলা কীভাবে চলছে। কিন্তু পুলিশ কোনো সদুত্তর দেয়নি। তিনি মনে করেন, সবকিছুই যখন সচল রয়েছে, সেই অর্থে পরিপূর্ণভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল কলেজ চালু রাখা সম্ভব। এছাড়া তিনি মন্তব্য করেন, সরকার আইন জারি করে কিন্তু তারাই আইন মানে না।
সিপিবি’র যশোর জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল হোসেন বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল-কলেজ খুলে দেয়া উচিত। তিনি প্রশ্ন ছুঁড়ে বলেন, সরকারের নির্দেশনা মানা হলে যশোরে পুনাকের মেলা কীভাবে হচ্ছে। তিনি বলেন, শিশুদের শিক্ষার বাইরে রেখে জাতির ভবিষ্যৎ ও আগামীর নেতৃত্ব গড়ে তোলা সম্ভব না। তিনিমনে করেন, সরকার ছাত্র আন্দোলনকে ভয় পায় বলেই স্কুল-কলেজ বন্ধ রেখেছে।
গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল যশোরের আহবায়ক পলাশ পাল বলেন, টিকা কার্ড দেখিয়ে ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠান করা যাচ্ছে, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে কিন্তু রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থা আমলাতান্ত্রিক হয়ে উঠছে। এরফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুল্যবোধ হারিয়ে যাচ্ছে। তিনি আগামীর ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত মন্তব্য করে বলেন, এখনো শিক্ষার যতটুকু পরিবেশ আছে, আগামী দুই-পাঁচ বছরে তাও উধাও হয়ে যাবে।
কিন্তু সরকারি স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকলেও খোলা রয়েছে বেসরকারি ও এনজিওদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়া সবকিছু খোলা রেখে শুধুমাত্র স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় যশোরের চা-পান বিড়ির দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। অনেকে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ছেন।
গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার যশোরের সমন্বয়ক তসলিম উর রহমান বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের মাধ্যমে এক সাথে দুইটি কার্যসাধনের চেষ্টা করা হয়েছে। আর সেটি হলো-শিক্ষা ব্যবস্থা ধবংসের ষড়যন্ত্র। এরসাথে দেশি-বিদেশি পক্ষ জড়িত। বর্তমান সরকার ছাত্র আন্দোলন ভয় পায়। কারণ ছাত্ররা যেকোন সময় ফুঁসে উঠতে পারে। তাই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সংগ্রাম থেকে দূরে রাখতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। তিনি মনে করেন সরকারের একটি স্ববিরোধী সিদ্ধান্ত। কারণ একদিকে প্রচারের জন্য তারা ঘটা করে শিক্ষার্থীদের টিকা দিলো। আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধও করে দিলো। ১২ বছরের নিচের বয়সের শিক্ষার্থীরা টিকার আওতায় আসেনি। যদি তাদের ক্লাস বন্ধ রাখা হতো তাহলে সেটির একটি যৌক্তিকতা থাকতো। তিনি আরও বলেন, করোনার রেডজোনে যশোরে চলছে পুনাকের মেলা। কিন্তু এক্ষত্রে ক্ষেত্রে কোন বাধা নেই। স্কুল-কলেজ চালু রাখার ক্ষেত্রে যত সব সমস্যা।