এসআই ফারদিন: দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে প্যাকেটজাত দেশি ও আমদানি করা শিশু খাদ্যের দাম। বাড়তি দামের বোঝা পিতার কাঁধে এসে পড়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
তিন মাসের সন্তানের বাবা যশোর পৌর এলাকার ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের বাসিন্দা শামিম রহমান জানান, মায়ের বুকের দুধে শিশুটির চাহিদা মেটে না। এ জন্য বাজার থেকে প্যাকেটজাত গুঁড়ো দুধ কিনে খাওয়ান।
পাঁচ-ছয় মাস আগে দুধসহ আনুষঙ্গিক সামগ্রী কিনতে তার মাসে খরচ হতো দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা। এখন শিশুখাদ্যের দাম প্যাকেটপ্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। পাশাপাশি শিশুটির খাবারের খরচ ৪ হাজারে ঠেকেছে। ফলে স্বল্প বেতনের চাকরিজীবী শামিম আর কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। এর পরও সন্তানের জন্য কিনছেন, তবে কমেছে পরিমাণ।
শহরতলীর নুরপুর গ্রামের এক শিশুর বাবা রবিউল ইসলাম জানান, সব ধরনের খরচ বেড়েছে। শিশুর খাদ্য কিনতে কয়েকবার ভাবতে হচ্ছে। শহরের বেজপাড়ার বাসিন্দা ললিত চন্দ্র জানান, অনেকে বেশি দামে শিশুখাদ্য কিনে খাওয়াতে পারছেন না। বিকল্প হিসেবে চালের গুঁড়া ও গরুর দুধ মিশিয়ে খাবার খাওয়াচ্ছেন।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শিশুখাদ্য বায়োমিলের ১৮০ গ্রামের প্যাকেট সাত-আট মাস আগে ছিল ২০০ থেকে ২১০ টাকা। ৩০ গ্রাম কমিয়ে ১৫০ গ্রামের প্যকেট এখন ২১৫ টাকা। ৪০০ গ্রামের টিনের কৌটা বিক্রি হচ্ছে ৬৯০ থেকে ৭০০ টাকায়, আগে ছিল ৪৮০ থেকে ৪৯০ টাকা। ল্যাকটোজেন ১৮০ গ্রাম ২৩০ থেকে বেড়ে হয়েছে ২৭০ টাকা।
৪০০ গ্রামের পাইমা দুধের কৌটা এখন ৭৪০ থেকে ৭৫০ টাকা হলেও আগে ছিল ৫৫০ টাকা। চাল-দুধ, গম-দুধ, পাঁচ ফল নামের তিন ধরনের ৩৫০ গ্রাম ওজনের প্যাকেটজাত সেরিলাক ৪৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগে ছিল ৪১০ থেকে ৪২০ টাকা। ডানোর ৫০০ গ্রাম দুধ এখন ৩৫০ হলেও আগে ছিল ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা।
৪০০ গ্রামের রেডকাউ ৩৩০ টাকা হলেও আগে ২৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ৪০০ গ্রামের ডিপ্লোমা ৫০০ থেকে ৫২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা ছিল ৩৬০ থেকে ৩৭০ টাকা। ৪০০ গ্রামের ফ্রেশ এখন ৩২৫ টাকা, আগে ২৫০ টাকা ছিল। ড্যানিশ ২৫০ থেকে হয়েছে ৩২০ টাকা। ইলডো ৬০০ থেকে বেড়ে ৭০০, ৩৫০ গ্রামের নিডো ৩৬০ থেকে ৪১০ টাকা হয়েছে। ৫০০ গ্রামের কমপ্ল্যানের প্লাস্টিক জার ৫৬৫ হয়েছে, আগে বিক্রি হয়েছে ৩৬৫ টাকায়। ৫০০ গ্রামের হরলিক্স ৩৬০ টাকা থেকে হয়েছে ৪২০ টাকা।
শহরের চৌরাস্থা মদিনা বেকারির মালিক মিজানুর রহমান জানান, সাত-আট মাস আগে তার দোকানে সপ্তাহে ২৪ থেকে ৩০ প্যাকেট শিশুখাদ্য বিক্রি হতো। এখন বিক্রি কমে গেছে।
দড়াটানা মোড়ের সিদ্দিক বেকারির মালিক মোহাম্মদ আলী জানান, দাম বাড়ায় বেশি পুঁজি খাটাতে হচ্ছে। এর পরও বিক্রি কম। অতিরিক্ত দাম বাড়ার কারণে ক্রেতারা দুধ কেনা কমিয়ে দিয়েছেন।
গ্রামাঞ্চলে স্বল্প আয়ের বেশিরভাগ পরিবারের মায়েরা সন্তানকে বুকের দুধের পাশাপাশি গরুর দুধ, সুজি, মালটা, আনার ও আঙুর খাওয়ান। এগুলোর দাম ঊর্ধ্বমুখী। ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজির সুজি দুই মাসের ব্যবধানে ৯০ থেকে ১০৫ টাকা হয়েছে। তিন মাসের ব্যবধানে ৫০ টাকা লিটারের গরুর দুধ এখন ৬০ থেকে ৭০ টাকা। আঙুর ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি। চার মাস আগে ছিল ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। শিশুদের পছন্দ মালটার রস, এর দামও বেড়েছে। আনার আগে ২৮০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ৪০০।
সদরের তিন শিশুর মা রাজিয়া সুলতানা প্রিয়া, সেলিনা খাতুন ও পপি আক্তার জানান, দাম বাড়ায় তারা বাবাদের শিশুখাদ্য বা ফল কিনতে বলার সাহস পাচ্ছেন না। কারণ, সংসারে খরচ বেড়েছে। এর পরও বাবা-মা চান, সন্তান ভালোভাবে বেড়ে উঠুক।
যশোর আড়াইশ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান ডাক্তার মাহবুবুর রহমান জানান, মায়ের দুধের বিকল্প কোন কিছু নেই। তারপরও অভিভাবকরা বিকল্প হিসেবে প্যাকেটজাত দুধ খাওয়ান। কিন্তু অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে অভিভাবকরা কেনা কমিয়ে দিচ্ছেন বলে শুনছি। তবে শিশুকে অবশ্যই পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে।