নিজস্ব প্রতিবেদক
দেড় বছরের শিশু সাভান সিদ্দিক শায়ানকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে পিতা আবু বক্করকে (৩৬) কারাগারে যেতে হয়েছে। ইন্টার্ন চিকিৎসকের সাথে ‘মারমুখি আচরণের’ অভিযোগ তুলে তাকে মঙ্গলবার পুলিশে সোপর্দ করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে এটিকে নজিরবিহীন বলছেন অনেকেই। সচেতন মহলের ভাষ্য, বিষয়টি মীমাংসাযোগ্য ছিল। কর্তৃপক্ষ আন্তরিক হলে দুই পক্ষে আলোচনা করে ঘটনাটির ইতি টানা যেত।
যশোর শহরের বকচর জোড়া মন্দির এলাকার বাসিন্দা আবু বক্কর জ্বরে গুরুতর অসুস্থ ছেলেকে মঙ্গলবার সকাল ১০ টার দিকে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করেছিলেন।
শিশুটির বৃদ্ধা নানী হালিমা বেগম বলেন, শায়ান গত দুই দিন জ্বরে আক্রান্ত। মঙ্গলবার সকালে নাতিছেলের অবস্থা গুরুতর হলে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। ওয়ার্ডে আসার কিছু সময় পর দায়িত্বরত চিকিৎসক ওষুধ লিখে দিয়ে বলেন, এগুলো নিয়ে আসুন। ওষুধ আনার পর চিকিৎসকের রুমে নিয়ে গেলে তারা বলেন, আমরা আসছি-নার্সদের কাছে ওষুধ দেন। এদিকে শিশু শায়ান ছটফট করায় কিছু সময় পর আবারো ডাক্তারের কাছে গেলে তারা উত্তেজিত হয়ে কথা বলেন। তর্ক বিতর্কের একপর্যায়ে রবিউল ইসলাম নামে এক ইন্টার্ন চিকিৎসক আমাকে বেয়াদব বলে তাড়িয়ে দেন। তখন শিশু শায়নের বাবা আবু বক্কর তাদের সাথে তর্কবিতর্কে জড়িয়ে পড়লে কিছু সময় পর ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে তাকে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের রুমে নিয়ে যান এবং আটক করে থানায় নিয়ে যান।
ঘটনার সময় উপস্থিত ইন্টার্ন চিকিৎসক সাবিত হাসান পিয়াল বলেন, তারা এসে শুরু থেকে চিকিৎসকদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন। দায়িত্বরত চিকিৎসকরা বিষয়টি আমলে না নিয়ে হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. আফসার আলী, রেজিস্ট্রার শাহরিয়ার শারমিন, ইন্টার্ন চিকিৎসক রবিউল ইসলাম, হাসিবুর রহমান, নাজমুল হুদা প্যারিস ও আমি শিশুটির ট্রিটমেন্ট শুরু করি। ডা. আফসার আলী শিশুটির চিকিৎসাপত্র লিখে দেয়ার পর হাসপাতালের সাপ্লাইকৃত ওষুধ দেয়া হয় এবং কিছু ওষুধ কিনে আনতে বলা হয়। পরবর্তীতে চিকিৎসকরা অন্য রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার সময় তারা চিকিৎসকদের সাথে উত্তেজিত হয়ে কথা বলেন। নিষেধ করার পরও তারা চিকিৎসকদের সাথে খারাপ আচরণ করেন ও উচ্চস্বরে কথা বলেন। এতে ওয়ার্ডে থাকা রোগী ও রোগীর স্বজনরা আতংকিত হয়ে পড়লে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হারুন অর রশিদ জানান, হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসকদের সাথে উত্তেজিত হয়ে কথা বলা ও তর্কবিতর্কের কারণে ওই ওয়ার্ডের রোগী ও তাদের স্বজনদের মাঝে আতংক সৃষ্টি হয় এবং এতে হাসপাতালের সম্মান ক্ষুণ্ন হওয়ায় তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে হাসপাতালের বেশ কয়েকজন রোগীর স্বজন ইন্টার্ন চিকিৎসকদের দুষছেন। সদরের চান্দুটিয়া থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা আয়েশা বেগম, সদরের বাগডাঙ্গার আমিরুল ইসলাম, সদরের ফরিদপুর গ্রামের নূরনবীসহ বেশ কয়েকজন বলেন, ইন্টার্ন চিকিৎসকরা এমন একটা ভাব নেন যে, তারা মনে করেন সরকারি হাসপাতালে ফ্রিতে চিকিৎসা সেবা নেয়া অপরাধ। একবারের জায়গায় দুইবার গেলেই তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।
নাম না বলার শর্তে হাসপাতালের বেশ কিছু সিনিয়র স্টাফ নার্স জানান, ইন্টার্ন চিকিৎসকরা নার্সদের সাথেও খারাপ আচরণ করেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ যেখানে সর্বোচ্চ সম্মান দেন সেখানে ইন্টার্ন চিকিৎসদের কাছে এটা কাম্য নয়।
তবে এ বিষয়ে হাসপাতালের আরএমও পার্থ প্রতীম চক্রবর্তী বলেন, তাদেরকে সর্তক করা হবে। আগামীতে এমন অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
