কল্যাণ ডেস্ক
শীত এলেই অনেকে দৌড়ানোর অভ্যাস বন্ধ করে দেন। ঠান্ডা হাওয়া, কুয়াশা আর কম তাপমাত্রার কারণে বাইরে বের হওয়াই কঠিন মনে হয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন সঠিক প্রস্তুতি নিলে শীতকালই হতে পারে দৌড়ানোর সেরা সময়। চিকিৎসকরা বলছেন ঠান্ডা আবহাওয়া শরীরের সহনশীলতা বাড়ায়, মেটাবলিজম বাড়ায়, মন ভালো রাখে এবং হার্ট ও জয়েন্টকে আরও শক্তিশালী করে। তাই সঠিক লেয়ার পরে, নিয়ম মেনে দৌড়ালে শীতের সকালের দৌড় হতে পারে আপনার স্বাস্থ্যরক্ষার সবচেয়ে সহজ ও উপকারী ব্যায়াম।
শীতে দৌড়ানোর ৭টি স্বাস্থ্য উপকারিতা
১. মেটাবলিজম বাড়ায় ও চর্বি পোড়াতে সাহায্য করে
ঠান্ডা পরিবেশে শরীরকে উষ্ণ রাখতে অতিরিক্ত এনার্জি লাগে। ফলে ক্যালোরি পোড়ার হার বাড়ে এবং চর্বি কমাতে সহায়তা করে।
২. মানসিক দৃঢ়তা বাড়ায়
শীতের হাওয়া, ঠান্ডা সকাল ও চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করে দৌড়ানো মানসিক শক্তি, শৃঙ্খলা ও আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।
৩. হার্ট ও ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বাড়ায়
শীতে দৌড়ানোর সময় হার্ট ও ফুসফুসকে বেশি পরিশ্রম করতে হয়। এতে রক্তসঞ্চালন ভালো হয়, হার্ট শক্তিশালী হয় এবং ফুসফুসের ক্ষমতাও বাড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, ঠান্ডা পরিবেশে ব্যায়াম শরীরে সাময়িকভাবে কার্ডিয়াক ওয়ার্কলোড বাড়ায়, যা দীর্ঘমেয়াদে সহনশীলতা উন্নত করে।
৪. মেজাজ ভালো রাখে ও সিজনাল ডিপ্রেশন কমায়
বাইরের আলো, সতেজ বাতাস এবং দৌড়ানোর সময় নিঃসৃত এন্ডোরফিন শীতকালীন মনমরা ভাব দূর করে। এতে ঘুম ভালো হয়, স্ট্রেস কমে এবং মানসিক সতেজতা বাড়ে।
৫. মানসিক ফোকাস বাড়ায়
কনকনে ঠান্ডা বাতাস মাথা পরিষ্কার করে। এর ফলে মনোযোগ, কনসেনট্রেশন ও মানসিক স্পষ্টতা বাড়ে।
৬. ঘুমের মান উন্নত করে
ঠান্ডা পরিবেশে দৌড়ানোর পর শরীর ক্লান্ত হলেও মন রিল্যাক্স থাকে। তাছাড়া দিনের আলোতে থাকা সার্কাডিয়ান রিদম ঠিক রাখে, তাই রাতের ঘুম গভীর ও আরামদায়ক হয়।
৭. জয়েন্ট ও মাংসপেশি শক্তিশালী করে
শীতের অসমান বা নরম ভূমিতে দৌড়ালে স্ট্যাবিলাইজিং মাংসপেশিগুলো বেশি কাজ করে। এতে জয়েন্ট শক্তিশালী হয়, ব্যালেন্স বাড়ে এবং ভবিষ্যতে ইনজুরির ঝুঁকি কমে।
দৌড়ানোর আগে যেসব সতর্কতা মানতে হবে: শীতে দৌড়ানো স্বাস্থ্যকর হলেও কিছু ঝুঁকি থাকে। তাই নিচের বিষয়গুলো মাথায় রাখা জরুরি—
ইনডোর ওয়ার্ম-আপ করুন: ডায়নামিক স্ট্রেচ, হালকা জাম্পিং বা মোবিলিটি ওয়ার্ক আউট করে মাংসপেশি গরম করুন।
আবহাওয়া দেখে বের হন: বেশি কুয়াশা, বরফ, বৃষ্টির সময় বা অতিরিক্ত ঠান্ডায় দৌড়ানো ঝুঁকিপূর্ণ।
পানি পান করতে ভুলবেন না: ঠান্ডায় তৃষ্ণা কম লাগে, কিন্তু শরীর ডিহাইড্রেট হয়—তাই দৌড়ানোর আগে ও পরে পানি পান করুন।
শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য মুখ ঢেকে রাখুন: ঠান্ডা বাতাসে শ্বাস নিতে কষ্ট হলে স্কার্ফ বা মাস্ক ব্যবহার করুন।
দিনের আলোতে দৌড়ান: দৃশ্যমানতা ভালো থাকে এবং বরফ বা ভেজা রাস্তায় পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমে।
হাইপোথার্মিয়া এড়াতে ভেজা কাপড় দ্রুত বদলান: ব্যায়াম শেষে দ্রুত শুকনো পোশাকে পরিবর্তন করুন।
হৃদরোগের ঝুঁকি থাকলে অতিরিক্ত সাবধানতা: হঠাৎ স্পিড বাড়াবেন না। ধীরে শুরু করে ধীরে বাড়ান।
শ্বাসযন্ত্রে সমস্যা থাকলে সতর্ক থাকুন: অ্যাজমা বা ঠান্ডা বাতাসে সাড়া দিলে মুখ ঢেকে দৌড়ান।
যদি দৌড়ানোর সময় বুকে ব্যথা, মাথা ঘোরা, হাত-পায়ে অসাড়তা অনুভব করেন তৎক্ষণাৎ থামুন এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিন। শীত মানেই দৌড় থামিয়ে দেওয়ার সময় নয়। বরং সঠিক পোশাক, প্রস্তুতি ও নিরাপত্তা জেনে নিলে শীতকাল হতে পারে দৌড়ানোর জন্য সবচেয়ে উপকারী মৌসুম। এটি শুধু আপনার মেটাবলিজম ও শারীরিক ফিটনেসই বাড়ায় না মেজাজ, ঘুম, মানসিক দৃঢ়তা ও হৃদরোগ প্রতিরোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই সাহস করে একদিন বের হয়ে দেখুন শীতের সকালের দৌড় আপনাকে কতটা নতুন এনার্জি ও সুস্থতা উপহার দিতে পারে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
