ঢাকা অফিস :
শীতকালে সারা দেশে বিদ্যুতের চাহিদা থাকে সব থেকে কম। এবার সেই শীতের মধ্যেই যশোরসহ সারা দেশে লোডশেডিং শুরু হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় গড়ে প্রতি ঘণ্টায় বিদ্যুতের চাহিদা ৯ হাজার মেগাওয়াটের কিছু বেশি, আর উৎপাদন হচ্ছে ৮ হাজার মেগাওয়াট। ১ হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিংয়ের প্রভাব পড়ছে যশোরসহ সারা দেশে। ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলে লোডশেডিং হয়েছে সোমবার ও মঙ্গলবার।
দ্রুত জ্বালানিসংকট কাটাতে না পারলে আগামী গ্রীষ্মে সারা দেশে বড় ধরনের বিদ্যুৎ বিপর্যয় হতে পারে। ডলারসংকটের কারণে তেল ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করা যাচ্ছে না। এতে সরকারি-বেসরকারি তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো বন্ধ রয়েছে। দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন কমে যাওয়া ও বিদেশের স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ থাকায় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ৮ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট থেকে কমে ৪ হাজার ৫০০ মেগাওয়াটে দাঁড়িয়েছে। ডলারসংকটের কারণে কয়লা আমদানি না করতে পারায় রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৬৬০ মেগাওয়াটের চালু থাকা ইউনিটটি বন্ধ হয়ে গেছে। আমদানিনির্ভর জ্বালানি ঘাটতির কারণে চাহিদার অন্তত ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ কম উৎপাদন করছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।
১ হাজার মেগাওয়াট ঘাটতি : দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা নিয়ে গঠিত ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডে (ওজোপাডিকো) লোডশেডিং ছিল ৯০ মেগাওয়াট। ঢাকার দুই বিতরণ সংস্থা ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) ও ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো)। এর মধ্যে ডিপিডিসি ঢাকার দক্ষিণ ও নারায়ণগঞ্জে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। আর ডেসকো ঢাকার উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। ঢাকার এই দুই বিতরণ সংস্থা চাহিদার চেয়ে কম বিদ্যুৎ পাওয়ায় গতকাল লোডশেডিং করেছে।
ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান চাকমা বলেন, ‘আমাদের বিতরণ অঞ্চলে ১৫০ মেগাওয়াট লোডশেডিং ছিল। চাহিদার চেয়ে কম বিদ্যুৎ পাওয়ায় লোডশেডিং করতে হয়েছে।’
বড় লোডশেডিং পল্লী বিদ্যুতে : বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) অধীন ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি রয়েছে। দেশে মোট গ্রাহক রয়েছে ৪ কোটি ৪৩ লাখ। এর মধ্যে আরইবির একারই গ্রাহকের সংখ্যা ৩ কোটি ৪১ লাখ। দেশের ৬৩টি জেলাতেই আরইবির গ্রাহক রয়েছে। আরইবির গ্রাহকের বড় অংশই গ্রাম ও মফস্বলের গ্রাহক। গত কয়েক দিন সারা দেশে আরইবির ৮০টি সমিতিতেই লোডশেডিং ছিল। সোমবার আরইবি সারা দেশে ৪৫০ থেকে ৫০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করে।
শীতেও কেন লোডশেডিং : গরমে গড়ে ১২ হাজার থেকে ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকে। শীতে এই চাহিদা ৮ হাজার থেকে ১০ হাজারে নেমে আসে। ২৪ ঘণ্টায় গড়ে ঘণ্টাপ্রতি শীতে চাহিদা থাকে ৯ হাজার মেগাওয়াট। আর এ সময়ে গড়ে উৎপাদন হচ্ছে ৮ হাজার মেগাওয়াট।
দেশে স্থাপিত বিদ্যুতের ক্ষমতা ২৩ হাজার ৪৮২ মেগাওয়াট। স্থাপিত ক্ষমতায় দেশে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে গত বছরের ১৬ এপ্রিল ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট। এর অর্থ চাহিদা থাকলে পিডিবি অন্তত এই পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করার সক্ষমতা রয়েছে।
পিডিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সোমবার সারা দেশে দিনে সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ৯ হাজার মেগাওয়াট আর রাতে সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১০ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। দিনের বেলায় অন্তত ১ হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়েছে সারা দেশে। আর সন্ধ্যার পর লোডশেডিং বেড়ে ১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে।
হাতে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎকেন্দ্র ও উৎপাদন-সক্ষমতা থাকলেও বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না জ্বালানির অভাবে। পিডিবি বিদ্যুতের মূল্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, সংস্থাটির বর্তমান লোকসান ৪০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার ১৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেবে, বাকি অর্থের সংস্থান নেই। এ কারণে পিডিবিকে কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করে পরিস্থিতি সামলাতে হবে। আর এতে তীব্র লোডশেডিংয়ের কবলে পড়তে যাচ্ছে দেশ।