নিজস্ব প্রতিবেদক
‘২০ বছর আগে বিধবা হয়েছি। কোন ছেলে-পেলে নেই। হেনে হনে (এখানে সেখানে) ভিক্ষা করে দিন পার করেছি। সবসময় ভাবতাম আমার যদি একটা ঘর থাকতো! এখন আর আমার সেই সময় নাই। আমার সময় বদলাইয়ে দিছে শেখ হাসিনা। এখন আমার জমিসহ ঘর আছে। নিজের মতো বলার একটা ঠিকানা আছে। জীবনে কখনো ভাবিনি নিজের পাকা ঘরে ঘুমাতে পারবো’। শনিবার বিকালে যশোর শহরের টাউন হল ময়দানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে এসব কথা বলেন যশোর সদর উপজেলার কচুয়া ইউনিয়নের রায়মানিক গ্রামের আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা মাকছুদা খাতুন (৫৫)। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, শিশুদের উন্নয়ন, বিভিন্ন পেশাজীবীর দক্ষতা ও সামর্থ্য বৃদ্ধিতে বর্তমান সরকার গৃহীত নানাবিধ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ উপকারভোগী জনসাধারণের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সদর উপজেলা প্রশাসন। এতে অংশ নেন সদর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, নারী ও শিশুদের উন্নয়ন’সহ সরকারে নানা প্রকল্পের উপকারভোগীরা।
অনুষ্ঠানে মাকছুদা খাতুন আরো বলেন, ‘আমি আশ্রয়ণ প্রকল্পে দুই কক্ষ বিশিষ্ট বাড়ি পেয়েছি। সেখানে আমি অনেক ভালো আছি। আমার কোন ছেলে মেয়ে নেই। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘরে থাকি। আমি শুধু ঘরই না; বিধবা কার্ডও পেয়েছি। সেই কার্ড থেকে নিয়মিত ভাতাও পাই। আগে খেয়ে না খেয়ে থাকতাম; এখন তো খেয়েপুরে বেঁচে আছি। আমার মতো বিধবা নিঃস্তানকে শেখ হাসিনা দেখভাল করাতে আমি হাসিনাকে দোয়া করি। ওনি যেন হাজার বছর বেঁচে থাকেন।’ এসময় কাপা কাপা স্বরে তিনি শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন। চাঁচড়া ইউনিয়নের মাহিদিয়া গ্রামের আনোয়ার মুন্সী (৮১) নামে এক বৃদ্ধা বলেন, ‘শেখ হাসিনা আমাকে একটি বয়স্ক ভাতা দিয়েছে। আমি নিয়মিত বয়স্ক ভাতা পাচ্ছি। সেই টাকা দিয়ে আমি আমার ওষুধ কেনা, চা খাওয়াসহ ইচ্ছা পূরণ করছি। ভাতার টাকা দিয়ে শুধু নিজের ব্যক্তিগত চাহিদা পূরণ করছি; আবার ঐ টাকা থেকে এখন মাঝে মধ্যে আমার নাতি পুতিদেরও মিষ্টি খাওয়ার টাকা দিই।
চাঁচড়া এলাকার প্রতিবন্ধী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবন্ধী ভাতা চালু করাতে, আমি সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে নিয়মিত ভাতা পেয়ে আসছি। এই ভাতার টাকা দিয়ে আমি ছোট্ট চায়ের দোকান দিয়েছি। সেই চায়ের দোকান থেকে যা আয় হয় সেই টাকা দিয়ে পাঁচ জনের সংসার চালাচ্ছি। আমার এই সংগ্রামী জীবনে এগিয়ে আসার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনুপ দাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক নেত্রী। তিনি এমন এক পর্যায়ে আছেন বিশে^র যেখানে গিয়েছেন সেই দেশের নেতৃবৃন্দ শেখ হাসিনার মতামত নিয়েছেন, মতামতকে গুরুত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশের সাফল্যের কারণে, তার যোগ্য নেতৃত্বের কারণেই শেখ হাসিনাকে বিশে^র নেতারা গুরুত্ব দিচ্ছেন। তিনি শেখ হাসিনার সরকারের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা গত ১৪ বছরে দেশে প্রভূত উন্নয়ন করেছেন। তার সময়কালে দেশে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। তার কারণে আমরা বহুদিনের প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু পেয়েছি। এ কারণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ এখন খুব সহজেই রাজধানীতে যেতে পারছেন। ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি এসেছে। যশোরে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। যার সুবিধাভোগী শুধু সদর উপজেলাবাসী নয়; সমগ্র জেলাসহ আশেপাশের কয়েকটি উপজেলাও। এসময় তিনি জানান, সদরে ১০ লাখ বাসিন্দার মধ্যে দুই লক্ষাধিক মানুষ বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, নারী ও শিশুদের উন্নয়ন’সহ সরকারের নানা প্রকল্পের উপকারভোগী। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার, পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার, যশোর পৌরসভার মেয়র মুক্তিযোদ্ধা হায়দার গণি খান পলাশ, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল। অনুষ্ঠানে সদর উপজেলা বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি, কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
