নিজস্ব প্রতিবেদক
মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ক্ষমতাচ্যুত পলাতক শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড রায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ, সাধারণ মানুষ ও মানবাধিকার কর্মীরা। তারা বলেন, আগামী দিনে যেন কোন সরকার মানবাধিকার লংঘন না করে এই রায় তার দৃষ্টান্ত হিসেবে থাকবে। দন্ডিতদের দেশে এনে দ্রুত রায় কার্যকর করার দাবি জানান তারা।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, জুলাই-আগস্টে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা যে গণহত্যা চালিয়েছিল, মানবতা বিরোধী অপরাধ করেছিলো তা ক্ষমার অযোগ্য। জুলাই যোদ্ধা হিসেবে আমাদের জন্য ওই অপরাধের রায়টা বহু প্রতীক্ষিত ছিল। আমাদের অসংখ্য সহযোদ্ধা এই আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন। শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ নির্দেশেই গুলিগুলো চালানো হয়েছে। আজ আমাদের জন্য খুবই আনন্দের একটি দিন এবং আমাদের শহীদ জাবের, আমাদের শহীদ মুগ্ধ, শহীদ আবু সাইদসহ সকল শহীদদের আত্মা কিছুটা হলেও শান্তি পাবে। এবং এই রায় অতি দ্রুত কার্যকর করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তৎপরতা রাখা উচিত বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।
জুয়েলযোদ্ধা মারুফ হোসেন সুকর্ণ বলেন, প্রত্যাশা পূরণের বিষয়টি আমি আমার জায়গা থেকে শতভাগ বলবো না। আমরা অল্প কয়েকজন অপরাধীর রায় পেয়েছি আজকে। যেমন শেখ হাসিনার ফাঁসির রায় এটা আমাদের জন্য একটা প্রত্যাশিত বিষয় ছিল এবং আমরা পেয়েছি। কিন্তু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরো অনেক অপরাধীর বিচারিক কার্যক্রম চলমান। বাংলাদেশে একটা ইনসাফ এবং ন্যায় বিচারের রাষ্ট্রে পরিণত হোক এই চাওয়া থেকে আমরা আন্দোলন করেছিলাম। আমাদের শহীদ এবং আহত ভাইদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হোক। তাদের যে স্যাক্রিফাইস, তাদের যে ত্যাগ এবং তাদের প্রতি যে অন্যায়, অবিচার, জুলুম হয়েছে, সেটার একটা সুষ্ঠু বিচার হোক। এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যারা এই গুম, লুণ্ঠন এবং হত্যার সাথে সরাসরি জড়িত ছিল, এদের বিচারিক প্রক্রিয়া অতি দ্রুত শেষ করে তাদের রায় কার্যকর করা হোক এটাই আমাদের চাওয়া।
এনসিপি যশোরের আহ্বায়ক মো. নূরুজ্জামান বলেন, ১৭ বছরের মানুষের জন্য ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা একটা গালি হয়ে গেছে। বলা যায় বাংলাদেশে। যে গুম, খুনসহ অসংখ্য জঘন্য কাজের সাথে তিনি জড়িত ছিলেন। তার কারণে বিরোধী দল দীর্ঘ ১৭ বছর নির্যাতনের শিকার হয়েছিলো। তো তারই প্রেক্ষাপটে আজকে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল যে রায় ঘোষণা করেছে, এতে আমরা জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ সারা বাংলাদেশের মানুষ খুশি। এবং আমরা স্পষ্ট একটা কথা বলতে চাই, আগামীতে কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতা ফ্যাসিস্ট হওয়ার জন্য বিন্দুমাত্রও যেন চিন্তাও না করে। কারণ যদি তারা কেউ আবারো ফ্যাসিস্ট হতে চায়, তাহলে শেখ হাসিনার থেকেও আরো কঠিনতম পরিণতি তাদের জন্য অপেক্ষা করছে। এবং আমরা জাতীয় নাগরিক পার্টি যারা ১৫০০ ছাত্র জনতার রক্তের বিনিময়ে, অসংখ্য মানুষের পঙ্গুত্বের বিনিময়ে বাংলাদেশের যে নতুন বন্দোবস্তের রাজনীতি ধারণ বা লালন করছি, সেই জাতীয় নাগরিক পার্টি আমরা আগামীতে বাংলাদেশের জমিনে কোনো ফ্যাসিস্ট সরকারকে মেনে নিতে পারবো না এবং এই জাতিও আর মেনে নেবে না। আমরা অতিশীঘ্রই এই রায়কে কার্যকর করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
মানবাধিকার সংগঠন রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক বলেন, আমরা আইন এবং আদালতের প্রতি সম্মান এবং শ্রদ্ধাশীল। এবং আমি মনে করি শেখ হাসিনাসহ আরো যাদের বিরুদ্ধে রায় ঘোষিত হয়েছে তা যথার্থই হয়েছে। তার কারণ এটি একটি চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন। ওই সময় যখন ছাত্র জনতাকে হত্যা করা হয়েছে, গুলি করা হয়েছে, এমন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে করা হয়েছে যেটা পুলিশও ব্যবহার করে না। এবং তাদেরকে চিকিৎসা নিতে দেওয়া হয়নি। তাদেরকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। এর চেয়ে জঘন্যতম মানবাধিকার লঙ্ঘন হতে পারে না। আমি মনে করি, এই রায়কে আগামীতে যারা সরকার গঠন করবে তাদের জন্য দৃষ্টান্ত হবে। এটি তাদের জন্য, আগামী সরকারের জন্য, একটা আগাম বার্তা।
