এস এম মিজানুর রহমান, শ্যামনগর (সাতক্ষীরা)
শ্যামনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় যত্রতত্র অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। নিয়ম নীতি ও আইনের তোয়াক্কা না করে সরকারি নদী, খাল ও জলাশয় থেকে এসব বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বিশেষ করে পানি উন্নয়ন বাঁধ সংলগ্ন এলাকায় বা কৃষি জমিতে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ডিজেল ইঞ্জিন ব্যবহার করে স্থানীয়ভাবে তৈরি ড্রেজার মেশিন দিয়ে রাত-দিন বালু উত্তোলন করা হয়। বালু উত্তোলনের ফলে একদিকে যেমন পার্শ্ববর্তী রাস্তা ও জমিতে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হচ্ছে। তেমনি বিকট শব্দে স্থানীয় পরিবেশ-প্রতিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বিরক্ত হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দারা। অভিযোগ রয়েছে বেশিরভাগ এলাকায় স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্র ছায়ায় এসব বালু উত্তোলন হয়।
গত শনিবার দুপুরে শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের খুটিকাটা এলাকার রাস্তা সংলগ্ন বিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মসজিদের কাছে বিলে ড্রেজার দিয়ে ভূগর্ভস্থ থেকে বালু উত্তোলন করতে দেখা যায়। বাইনতলা গ্রামের খোকন মেম্বার এই বালু উত্তলোন করছে বলে এলাকাবাসী জানান। বাইনতলা এলাকার এক ব্যক্তি জানান, নিকটস্থ তিন তলা স্কুল ভবনের কাছ থেকে বালু উত্তলোন করায় আমরা আতঙ্কে রয়েছি কখন যে স্কুলটি ধসে যায়। এলাকাবাসী এ ব্যাপারে সহকারী কমিশনার ভূমি, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্বকে জানালেও কোন আইনগত ব্যবস্থা হয়নি। শুধু পদ্মপুকুর নয় উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে এভাবে আইন অমান্য করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ভূগর্ভস্থ এসব বালু দিয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিচু জমি ভরাট করা হচ্ছে। স্থান, এলাকা ও দূরত্ব ভেদে প্রতি ফুট বালু ৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।
বালু বিক্রির টাকার একটা অংশ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দিতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে ড্রেজার মালিকদের পক্ষ থেকে জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খুটিকাটা গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, শুধু খুটিকাটা নয়, আমাদের পদ্মপুকুর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হয়। এ বিষয়ে কথা বললে প্রভাবশালীদের রোষানলে পড়তে হয়। তাই ক্ষতি হলেও মুখ বুঝে সহ্য করতে হয় আমাদের। বালু উত্তোলনকারী ও ড্রেজার মেশিনের মালিক বলেন, সবাই উত্তোলন করে তাই আমিও মেশিন বানিয়েছি। চুক্তি করে বালু উত্তোলন করছি। সামান্য লাভ হয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফোন দিয়েছিল বন্ধ করে দিয়েছি। খোকন মেম্বার বলেন, এই বালু দিয়ে মাদ্রাসার মাঠ ভরাট করছি। যাতে আমাদের শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা করতে পারে। মাঠ ভরাট হলে মেশিন বন্ধ করে দেব।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক বলেন, ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলনের সব থেকে বড় যে ক্ষতি হয় সেটা হচ্ছে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য নষ্ট হওয়া। এর ফলে ওই এলাকার জনজীবনের উপর স্থায়ী বিরূপ প্রভাব পড়ে। ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন বন্ধ না করা গেলে বাংলাদেশের পরিবেশ-প্রতিবেশের উপর অনেক বড় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে দাবি করেন তিনি। বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০-এর ধারা ৫-এর উপধারা ১ অনুযায়ি, পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোনো মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবেনা। ধারা-৪-এর (খ) অনুযায়ী, সেতু, কালভার্ট, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা, সুন্দরবন অথবা আবাসিক এলাকা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ।
আইন অমান্যকারীকে দুই বছরের কারাদন্ড ও সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার বিধান রয়েছে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসব আইনের কোনো প্রয়োগ দেখা যায় না। শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আক্তার হোসেন বলেন, বিভিন্ন সময় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
আরও পড়ুন: গেমিং ওয়েবসাইটে ঢুকে ফতুর হচ্ছে যুবকরা