নিজস্ব প্রতিবেদক: শ্রদ্ধাঞ্জলির ফুলের ডালিগুলো একের পর এক বধ্যভূমির স্মৃতিস্তম্ভে রাখা হচ্ছে। ধর্ম-বর্ণ, রাজনৈতিক দলের পক্ষ-বিপক্ষ, কিংবা শ্রেণি-পেশা-নির্বিশেষে বিভিন্ন দল, সংগঠনের প্রতিনিধি ও ব্যক্তিরা শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। আর নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে স্মরণ করছেন ভয়াল ও নৃশংস সেই হত্যাযজ্ঞের ঘটনা। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে যশোরে শহরের রায়পাড়াস্থ বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভের বুধবারের দৃশ্য ছিল এমন। এদিন সকাল থেকেই জড়ো হতে থাকেন নানা বয়সী মানুষ। সকাল আটটা থেকে শুরু হয় শ্রদ্ধা জানানো। শোক, বিনম্র শ্রদ্ধা আর গভীর ভালোবাসায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করেন দেশের প্রথম শত্রুমুক্ত জেলা যশোরের সর্বস্তরের মানুষ। এসময় স্বাধীন বাংলাদেশে মৌলবাদী তথা সাম্প্রদায়িক আস্ফালনকে সমূলে উৎপাটন করে সব অপচেষ্টা রুখে দেওয়ার দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে। একইসাথে সাম্প্রদায়িকতা রুখে দেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে নতুন দিনের স্বপ্ন দেখার ডাক দেন।
সকাল ৮টায় বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধাঞ্জলির মাধ্যমে দিবসের সূচনা করেন জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান। এরপর পুলিশ প্রশাসনের পক্ষে পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার পুস্পস্তবক অর্পণ করেন। পর্যায়ক্রমে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের পক্ষ থেকে অ্যাডভোকেট শেখ রবিউল আলম, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড, জেলা সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নাজমুস সাদিক রাসেল, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন, যশোর উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী, জেলা যুবলীগের পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু, কাজী নাবিল আহমেদ এমপির পক্ষে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, যশোর পৌরসভার পক্ষ থেকে মেয়র হায়দার গণী খান পলাশ, অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের নেতৃত্বে জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ, অ্যাডভোকেট রবিউল আলমের নেতৃত্বে জেলা জাসদ, এমএম কলেজের পক্ষ থেকে প্রফেসর মর্জিনা আক্তার শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে প্রেসক্লাব যশোর, যশোর সংবাদপত্র পরিষদ, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন (জেইউজে), সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোর, যশোর জেলা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন যশোর জেলা শাখা। শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে দৈনিক কল্যাণ পরিবার। উপস্থিত ছিলেন সম্পাদক ও প্রকাশক বীর মুক্তিযোদ্ধা একরাম-উদ-দ্দৌলা, উপদেষ্টা সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা রুকুনউদ্দৌলাহ, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এহসান-উদ-দৌলা মিথুন ও ব্যবস্থাপনা সম্পাদক এজাজ উদ্দিন টিপুসহ অন্যান্যরা। শ্রদ্ধা জানিয়েছে দৈনিক স্পন্দন, দৈনিক প্রতিদিনের কথা পরিবার।
এছাড়া যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, যশোর মেডিকেল কলেজ, যশোর পলেটেকনিক ইনস্টিটিউট, জেলা শিক্ষা অফিসার এ কে এম গোলাম আযম, ২৫০ শয্য বিশিষ্ট যশোর জেনারেল হাসপাতাল, জেলা গণপূর্ত অধিদপ্তর, জিলা স্কুল, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, এলজিইডি, জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, ডা. আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপাল কলেজ, প্রাণী সম্পদ বিভাগ, যশোর কলেজ, জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, জেলা কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন, আইডিইবি, বিআরডিবি, জেলা পরিসংখ্যা অফিস, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়, পল্লী বিদুৎ সমিতি-১, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর, জেলা মাদকদ্রব্য অধিদপ্তর, সরকারি সিটি কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজ, জেলা বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট,
যশোর আমিনিয়া কামিল মাদরাসা, শংকরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বাসদ মার্কসবাদী, বাম গণতান্ত্রিক জোট, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ, স্বপ্নদেখা সমাজ কল্যাণ সংস্থা, বাংলাদেশের কমিউস্টপার্টি, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন, অগ্নিবীণা কেন্দ্রীয় সংসদ, রাঙা প্রভাত নারী ও শিশু উন্নয়ন সংস্থা, রাঙা প্রভাত কিন্ডারগার্টেন স্কুল, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, শিল্পকলা একাডেমি, প্রথম আলো বন্ধুসভা, থিয়েটার ক্যানভাস, ব্যঞ্জন যশোর, পূজা উদযাপন পরিষদ, বাংলাদেশের ওয়ার্কস পার্টি, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন, জেলা যুব মৈত্রী, ছাত্র মৈত্রী ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউট যশোর, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ, মুসলিম একাডেমিসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে পরে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ শেষে জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কর্মীরা একাত্তরের পরাজিত শক্তির মূল উৎপাটনে ঐক্যবদ্ধ থেকে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে শপথ গ্রহণ করেন। শপথবাক্য পাঠ করান সংগঠনের সদস্য সাজ্জাদুর রহমান খান বিপ্লব।
এদিকে, নানা আয়োজনে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করেছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি)। যবিপ্রবিতে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের কর্মসূচি শুরু হয় সূর্যোদয়ক্ষণে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সম্মুখে কালো পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণের মাধ্যমে। দিবসটি উপলক্ষে যবিপ্রবি পরিবারের সদস্যরা কালোব্যাজ ধারণ করেন। বাদ জোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের রূহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের প্রাক্কালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের সাথে রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনী বাংলাদেশের শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকদের হত্যা করে। বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করতে পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাযজ্ঞ সংগঠিত হয়। পরবর্তীতে এই দিনকে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ ঘোষণা করা হয়।
আরও পড়ুন: তারের জটলায় জীবন ঝুঁকিপূর্ণ