নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোর শহরের শ্রমজীবী মেহনতি মানুষদের নিয়ে ইফতারের আয়োজন করেছে স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থা। শুক্রবার শহরের খড়কিস্থ সংগঠনের কার্যালয় চত্বরে এ ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় দুস্থ অসহায় মানুষদের পাশে বসে একসাথে ইফতার করেন আইডিয়ার সকল সদস্য ও আমন্ত্রিত অতিথিরা। ধনী গরিব ভেদাভেদ ভুলে সকলের সাথে এক কাতারে বসে ইফতার করতে পেরে সন্তুষ্টির কথা জানান শ্রমজীবী মেহনতি মানুষেরা।
আয়োজকরা জানান, যশোরের খড়কিতে অবস্থিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থা প্রতি শুক্রবার ‘আইডিয়া ফ্রাইডে মিল’ কার্যক্রম পরিচালনা করে। যার মাধ্যমে প্রতি শুক্রবার দুপুরে স্বেচ্ছাসেবকরা নিজেদের রান্না করা খাবার যেমন পোলাও-মাংস, কখনো সাদাভাত মাংস, মাছ নিয়ে বেরিয়ে পরে রাস্তায়। শ্রমজীবী, দরিদ্র, অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিতদের মুখে তুলে দেয়া হয় এই প্যাকেজজাত করা এই খাবার। কিন্তু রমজান মাস শুক্রবার হওয়াতে আইডিয়া’র ফ্রাইডে মিল তাই বদলে গেলো ইফতারের আহারে। রমযানের জন্য ফ্রাইডে মিলের ১২৯ তম পর্বে আইডিয়া কার্যালয়ে সুসজ্জিত টেবিলের উপরে প্রতি প্লেটে সাজানো হয় ২০ পদের নানানসব ইফতার। আর সারিবদ্ধভাবে রাখা চেয়ারে বসে থাকা নানা বয়সী এবং সব শ্রেণির মানুষ তৃপ্তির সঙ্গে করেন ইফতার। ইসলাম ধর্মের আদর্শে ইফতারের এই আয়োজনেও ছিলো না কোন ভেদাভেদ।
আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও যশোর মাইকেল মধুসূদন কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক শাহীন বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেকের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা ও সম্মিলিত প্রয়াসই পারে বহু মানুষের প্রশান্তির কারণ আনতে। ঠিক তেমনি একটি প্রকল্প আইডিয়া ফ্রাইডে মিল। আজ থেকে ১২৮ সপ্তাহ আগের শুক্রবারে মাত্র এক হাজার টাকা দিয়ে আমার ছেলেমেয়েরা এই কাজ শুরু করেছিলো। বিনাপুঁজি, বিনা সঞ্চয় শুধু আত্মবিশ্বাস, নিষ্ঠা নিয়ে ওদের দেওয়া স্বেচ্ছাসেবায় মাঝে মাঝেই যোগ হয়েছেন নানান সুহৃদ। এভাবেই চলমান আছে আইডিয়া ফ্রাইডে মিল। প্রতিবছর রমযানে একটা ইফতার আমরা রাখি আমাদের আশেপাশে খেটে খাওয়া শ্রমজীবী ও মেহনতি মানুষের সাথে করার জন্য। আজ ১২৯ তম সপ্তাহে এবছরের সেই দিন সম্পন্ন হলো।’
আইডিয়া ফ্রাইডে মিলের কোর্ডিনেটর শাহারিয়া ইয়াসমিন বলেন, ‘আইডিয়ার স্বেচ্ছাসেবকদের কাছে শুক্রবার একটি উৎসব আয়োজনের দিন। রমযান মাসে তা দ্বিগুণ আনন্দ আনে যখন ইফতারিতে অসংখ্য অভুক্ত মানুষের কাছে আমরা খাবার পৌঁছে দিয়ে থাকি। তিনি বলেন, প্রতি রমজানে খড়কি অঞ্চলে রোজাদারদের মাঝে বিনামূল্যে পানি বিতরণ করে আসছে সংগঠনটি। পাশাপাশি এই এলাকায় পানির সঙ্কট মেটাতে পাঁচটি গভীর নলকূপও স্থাপন করেছেন তারা। এছাড়া রমজানে নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মাঝে মাস জুড়ে কম দামে পণ্য বিক্রি করে সংগঠনটি।
ইফতারে আগত সেলিম হাসান পেশায় একজন দর্জি। তিনি জানান, ‘আমাদের ইফতারি বলতে পানি আর দুমুঠো চিড়া। আজকের এই আয়োজনে তৃপ্তির সাথে ইফতার করলাম, সাথেই এতো সম্মান দেয় হলো সেটাই শান্তি। রবিউল নামে আরেক শ্রমজীবী বলেন, ‘এরা সারা মাস পানি দেয় এলাকায়। ইফতারের সময় এদের দেওয়া ঠান্ডা পানি খেয়ে তৃপ্তি হয়। আজ আমাদের দাওয়াত দিয়ে নিয়ে এসছে আর ভরপেট ইফতারি করালে। ভীষণ খুশি হয়েছি।’ ইফতারে আমন্ত্রিত অতিথি ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের যশোর সদরের সাতমাইল শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার শাহনেওয়াজ আনোয়ার লেনিন বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যেও উর্ধ্বগতিতে চিড়েচ্যাপ্টা যখন মানুষের জীবন তখন এমন আয়োজন বেশ ইতিবাচক। সবশ্রেণি পেশার মানুষ একসাথে ইফতার করতে দেখে মানসিক তৃপ্তির কথা জানান তিনি।