মাগুরা প্রতিনিধি
মাগুরার শ্রীপুর উপজেলায় চলছে একাধিক অবৈধ ইটভাটা। আবার এ সকল ভাটায় অবৈধভাবে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ফলে বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ ও ফসলের মাঠ। ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইনে লাইসেন্স ব্যতিত ইট প্রস্তুত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ধারা ৮-এর ‘ঘ’তে বলা আছে, কৃষিজমি ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষেধ। কিন্তু ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইনের তোয়াক্কা না করে ড্রাম চিমনি ব্যবহার করে কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। যা সম্পূর্ণ আইন পরিপন্থি। তবুও বছরের পর বছর ওই সব ভাটা বহাল তবিয়তে ইট তৈরি করে চলেছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি না নিয়ে অবৈধভাবে চলছে এ সকল ইটভাটা। উপজেলার শত শত কৃষক জিম্মি হয়ে পড়েছে এসব ভাটার মালিকদের কাছে।
কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষক পরিবার। নেই কোন প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের তদারকি। পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি কৃষি জমিও নষ্ট হচ্ছে ইটভাটার কারণে। বায়ুদূষণের কারণে এলাকায় শ্বাসকষ্ট রোগীদের সংখ্যা বেড়েই চলছে। এ ছাড়া ধুলাবালু থেকে অ্যালার্জি, চুলকানিসহ বিভিন্ন চর্মরোগ দেখা দিচ্ছে।
ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রশাসন সাময়িক জরিমানা করলে বা চিমনি ভেঙে দিলেও কয়েক দিনের মধ্যেই আবারও ইটভাটা প্রস্তুত হয়ে যায়।
সরেজমিনে উপজেলার সদর ইউনিয়নের সারঙ্গদিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কের পাশে ফসলের মাঠজুড়ে ড্রাম চিমনির মেসার্স কনিকা ব্রিকস নামের একটি ভাটায় কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি চলছে। ত্রি-ফসলি জমি থেকে থেকে কাটা হচ্ছে মাটি। যা রীতিমত অবৈধ। পুড়ানোর জন্য ভাটায় স্তপ করে রাখা হয়েছে গাছের গুঁড়ি ও চেরাই কাঠ।
ওই এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ডিসেম্বরের শুরুতে ভাটার প্রস্তুতি শুরু হয়। এরপর টানা মার্চ মাস পর্যন্ত এ ভাটায় কাঠ ব্যবহার করে ইট তৈরি হয়।
মালিক মুশফিকুর রহমান কালন বলেন, আমি জানি আমার ইটভাটাটি অবৈধ। তাছাড়া উপজেলায় যতগুলো ভাটা আছে সবই অবৈধ। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এ সকল ইটভাটা চালাতে হয়। সরকারের কাছে আমরা বৈধতা চাই। কিন্তু সরকার তো দিচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, প্রতি বছর ভাটা শুরুর আগে ‘ম্যানেজ’ করতে হয় তাদের।
মুঠোফোনে কথা হয় পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান বাপ্পি সরদারের সাথে তিনি বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা নিজেদের আর্থিক লাভের জন্য অবৈধ ইটভাটা বন্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তবে এক্ষেত্রে পরিবেশ বান্ধব ইটভাটা চালুর উদ্যোগ নিতে হবে। যদি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে অবৈধ ইট ভাটা বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ না নেয়া হয় তাহলে সবুজ আন্দোলন শ্রীপুর উপজেলা শাখার নেতৃত্বে পরিবেশ অধিদপ্তর ঘেরাও করা হবে।
মাগুরা জেলা প্রশাসক আবু নাসের বেগ জানান, এ সকল ইটভাটা বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: শালিখায় কালের সাক্ষী মুঘল আমলের মসজিদ