সিন্ডিকেট সদস্যদের গা ঢাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোর শহরের ষষ্ঠীতলার বুনোপাড়ায় নকল ফেনসিডিল তৈরির শক্তিশালী সিন্ডিকেট নিয়ে দৈনিক কল্যাণে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় তোলপাড় শুরু হয়েছে শহরজুড়ে। পাশাপাশি পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যরা দফায় দফায় ওই এলাকায় অভিযান চালিয়েছেন। কিন্তু কাউকে আটক করতে পারেননি তারা। গা ঢাকা দিয়েছে অপরাধীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, যশোর শহরের ষষ্ঠীতলা বুনোপাড়াসহ আশপাশ এলাকার একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে নকল ফেনসিডিল তৈরি করে বিক্রি করে আসছিল। তাদের তৈরি করা নকল ফেনসিডিল বিক্রিতে বাধা দিতে পারে এমন সন্দেহে গত কয়েকদিনের মধ্যে বেশ কয়েকজন নিরীহ নারী-পুরুষকে আটক করে তৈরি করা ফেনসিডিল দিয়ে মামলা দিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা। ফলে এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম আতংক বিরাজ করছিল। এমনই ঘটনা জানতে পেরে দৈনিক কল্যাণ পত্রিকায় সোমবার সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের পর নকল ফেনসিডিল তৈরিকারীরা এলাকায় গা ঢাকা দেয়।
এদিকে ভোর থেকেই জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা (ডিএসবি), জেলা গোয়েন্দা (ডিবি), কোতোয়ালি থানা ও চাঁচড়া ফাঁড়ি পুলিশ ওই এলাকায় দফায় দগফায় অভিযান চালায়। কিন্তু কাউকে আটক করতে পারেনি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সতর্ক হয়ে যায় নকল ফেনসিডিল তৈরিকারীরা। ফলে প্রশাসনিক অভিযানের বিষয়টি আগে থেকেই তাদের কাছে পৌঁছে যায় বলে স্থানীয়দের ধারণা। অনেকেই অন্যের বাড়ির মধ্যে পালিয়ে থাকে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ- আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানকালে ওই অপরাধীরা এলাকাতেই অবস্থান করছিল। তারপরও অভিযান পরিচালনাকারীরা দেখতে পায়নি ওই অপরাধীদের।
এই ব্যাপারে চাঁচড়া ফাঁড়ি ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক আকিকুল ইসলাম বলেছেন, ওই এলাকায় অভিযান অব্যাহত ভাবে চলছে। তিনি আরো বলেছেন, অপরাধী যেই হোক না কেন কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা।
জেলা গোয়েন্দা সংস্থার (ডিবি) ওসি রূপণ কুমার সরকার জানান, অভিযান ঠিক না, তবে বিষয়টি আমাদের নজরদারিতে রয়েছে। ফেনসিডিল তৈরি হলে, সংশ্লিষ্টদের শিগগিরই আটক করা হবে।
প্রসঙ্গত, শহরের ষষ্ঠীতলার বুনোপাড়ার মৃত শফি মিয়ার ছেলে হাফিজুর রহমান মরা ছিলেন চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারি ছিলেন। ২০১৬ সালের ১৭ নভেম্বর রাতে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন মরা। তার মৃত্যুর পর মরার স্ত্রী রেখা বেগম আরেক যুবককে বিয়ে করে স্বামীর ‘উত্তসূরি’ হিসেবে দেদারছে চালিয়ে যাচ্ছে মাদকের কারবার। একই সাথে রেখা নিজেই ফেনসিডিল তৈরি করে বিক্রি করছেন এবং বাইরে সাপ্লাইও দিচ্ছেন। এছাড়া মরার ছোট ভাই রবিউল ইসলাম, রবিউলের স্ত্রী আকলিমা বেগম, মেয়ে এরিনা খাতুন, আরেক ভাই মৃত সাইফুল ইসলামের স্ত্রী হাসিনা বেগমসহ অনেকে এ সিন্ডিকেটের সদস্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, ৫০ গ্রাম কোডিন ফসফেট পাউডার দিয়ে তৈরি করা যায় প্রায় ৫০০ বোতল ফেনসিডিল। খয়েরি রঙের এই পাউডার হেরোইনের চেয়েও দামি। এক চা-চামচ পাউডার দিয়ে ১০ লিটার ফেনসিডিল তৈরি করা যায়। এই পাউডারের সাথে অন্যান্য উপকরণের মধ্যে রয়েছে চিনির ঘন সিরা, স্পিরিট ও কর্পূরের মতো একটি পদার্থ যা স্বাস্থ্যের জন্য চরম ক্ষতিকর।