চলছে তৃণমূল পর্যায়ে পুনর্গঠন কাজ
আবদুল কাদের: সংগঠনকে শক্তিশালি করতে তৎপর হয়ে উঠেছে যশোর জেলা বিএনপি। এজন্য অঙ্গসংগঠন, সহযোগি সংগঠন ও ইউনিয়ন পর্যায়ে দলকে চাঙ্গা করতে কমিটি পুনর্গঠন করছে দলটি। ইতোমধ্যে ৩০ শতাংশ কমিটি গঠনের কাজ সম্পন্য হয়ে গেছে। বাকি কাজ সম্পন্যের জন্য দ্রুত গতিতে সাংগঠনিক তৎপরতা চলছে বলে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সরকারি নিষেধাজ্ঞায় সমাবেশের কর্মসূচি থেকে দূরে থাকলেও প্রধান দাবি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন আদায়ে কোনো ছাড় দিতে রাজি নয় বিএনপি। এবার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আন্দোলন সফলের উপযোগী সংগঠন গড়তে কার্যক্রম শুরু করেছে। মহামারির মধ্যেও বন্ধ নেই দলটির কার্যক্রম। মাঠ পর্যায়ে প্রতিদিনই কর্মসূচি যেমন চলছে তেমনি মূল দলের পাশাপাশি অঙ্গ দলের কমিটি গঠনের কাজও এগিয়ে চলেছে।
বিএনপি এখন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবি আদায়ের লক্ষ্য নিয়ে এগোতে চায়। লক্ষ্য পূরণে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধিই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে কর্মসূচি সাড়া পেয়ে পরবর্তী পদক্ষেপের প্রত্যাশা পূরণে আশাবাদী হয়ে উঠেছে জেলা পর্যায় থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও। তাই সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধিতে বিভিন্ন পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
জেলা বিএনপির সিনিয়র একাধিক নেতা জানান, করোনা মোকাবিলায় নয়, বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচি থামিয়ে দিতেই বিধিনিষেধ ঘোষণা করেছে সরকার। তাই বিএনপি সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধিতে স্বাস্থ্য সচেতন থেকে কর্মকান্ড চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যশোরের ১০৫টি ইউনিয়নে বিএনপির সাংগঠনিক ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে ৩০টিতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন শুরু হয়ে গেছে। সবগুলো কমিটি এখন দ্রুত সময়ের মধ্যে পুনর্গঠনের কাজ চলছে। অন্যদিকে অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে যুবদল, ছাত্রদল, কৃষক দলকে ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা দল, শ্রমিক দল, মহিলা দল, মৎস্যজীবী দল, ওলামা দল ও তাঁতী দলের পুনর্গঠন কাজও শিগগিরই শুরু করা হবে বলে জানা গেছে।
সূত্র মতে, নিজ দলের সাংগঠনিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বৃহৎ রাজনৈতিক ঐক্য গড়তে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ করছে বিএনপি। অভিন্ন দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের উদ্দেশ্যে এই ঐক্য গড়ে তুলতে চায় দলটি।
যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সাবেরুল হক সাবু বলেন, বিএনপি মনে করে, বর্তমান আওয়ামী লীগের অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর সব রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার একমাত্র পথ। এর কোনো বিকল্প নেই। এই লক্ষ্যে সব রাজনৈতিক দল, সংগঠন, ব্যক্তি ও জনগণের ঐক্য গড়ে তুলে দুর্বার গণ আন্দোলনের মাধ্যমে এ পরিবর্তন আনতে হবে।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন জানান, গত ২২ ডিসেম্বর যশোরের টাউন হল মাঠে অনুষ্ঠিত বিএনপির সফল সমাবেশের পর পুলিশ আমাদের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ৩টি মিথ্যা মামলা দেয়। এতে আসামি করা হয়েছে ৭০ জনকে। এছাড়া গত ১২ বছরে জেলা বিএনপির বিশিষ্ট সব নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে গড়ে ১০টি থেকে সবোর্চ্চ ৬০টি মামলা রয়েছে । এই জুলামবাজ সরকারের কাছ থেকে জনগণকে বাঁচাতে আন্দোলনের বিকল্প নেই।
যশোর জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান খান বলেন, দেশে নানামুখী সংকট আছে। সবচেয়ে বড় সংকট গণতন্ত্র নেই। সব সংকট সমাধানের একটাই পথ। তা হচ্ছে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা। বিএনপি তাই এই বিষয়টি নিয়েই ভাবছে। আর বর্তমান অনির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে আন্দোলন ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে দাবি আদায় আশা করা যায় না। এজন্য নানা কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি চলমান আন্দোলন আরও বেগবান করতে সংগঠন শক্তিশালী করার কাজও চলছে।
যশোর নগর বিএনপির আহবায়ক সাবেক পৌর মেয়র মারুফুল ইসলাম জানান, আমরা পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে পুনগঠন কাজ শুরু করেছি। বর্তমান সরকারের আমলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা হামলা মামলায় জর্জরিত। তাই সংগঠনকে শক্তিশালি করে সরকার বিরোধী আন্দোলন বেগবান গড়ে তোলা হবে।