নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, বিএনসিসি, রোভার স্কাউট ও ইসলামী আন্দোলনের সদস্যরা স্বেচ্ছায় ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এতে সড়কে শৃঙ্খলা এবং স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। রাস্তায় পুলিশ দায়িত্ব পালন করায় গত দুইদিন বেশ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল।
এদিকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং সরকার পতনের চলমান পরিস্থিতির মধ্যে শহরের বিভিন্ন এলাকায় ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে রাস্তা ও রাস্তার পাশে ধ্বংসস্তুপ ছিল। এতে চলাচলে নাগরিকদের অসুবিধা হচ্ছিল। আবার নোংরা পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সে স্থানগুলোও পরিষ্কার করেছেন শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবীরা।
গতকাল বুধবার সকালে যশোর শহরের ব্যস্ততম মুজিব সড়ক, জজ কোর্ট মোড়, দড়াটানা মোড়, চিত্রার মোড়, মনিহার পুরাতন বাস টার্মিনাল, পালবাড়ি মোড়, হাসপাতাল মোড়, নিউমার্কেটসহ বেশকয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীকে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। ছাতা মাথায়, হাতে লাঠি নিয়ে চালকদের দিকনির্দেশনা দেন। তারা হেলমেটবিহীন মোটরসাইকেল চালকদের হেলমেট পরার জন্য অনুরোধ করেন। সড়কের মাঝখানে দাঁড়িয়ে নিজ নিজ লেন ব্যবহারের নির্দেশনা দেন। ফলে যানজটমুক্ত ছিল শহর।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকে থমথমে ছিল গোটা যশোর শহর। অনেক দোকানপাট ছিল বন্ধ। তবে বুধবার বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা ছিল। অফিস-আদালত ও কর্মস্থলে উপস্থিতি আগের দিনের চেয়ে বেশি দেখা গেছে।
যশোর মুসলিম একাডেমির শিক্ষার্থী শেখ রশিদ বলেন, দেশটা আমাদের। এই সংকটময় সময়ে আমাদেরই কাজ করতে হবে। তাই শহরের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে রাস্তায় নেমেছি।
সাইদ তাসরিফ হাসান নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আগে দেখতাম যশোরে ট্রাফিক পুলিশ, কমিউনিটি পুলিশের সাথে ইজিবাইক চালক, রিকশা চালকদের বাগবিত-া হতো। আমাদের সাথে কারও ঝামেলা হয়নি। বরং যানবাহন চালকেরা স্বাগত জানিয়েছেন।
জজকোর্ট মোড়ে ইজিবাইক চালক নিয়াজ উদ্দিন বলেন, আগে ট্রাফিক পুলিশ আর কমিউনিটি পুলিশ আমাদের গাড়িতে লাঠি দিয়ে বাড়ি দিয়ে গ্লাস ভেঙে দিত। একটু এদিক-ওদিক হলেই থাপ্পড় দিত। কিন্তু ছাত্ররা যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে আমরা এতে খুশি।
রেলগেট এলাকার রিকশাচালক তোতা বলেন, গত দুইদিনে যশোরে কোন রাস্তায় চাঁদাবাজি বা চাঁদা নিতে দেখিনি কাউকে। আগে কমিউনিটি পুলিশরা আমাদের কাছ থেকে গোপনে টাকা নিত। আজ কেউ নেয়নি।
মোটরসাইকেল চালক নিজাম গাজী বলেন, যাদের হেলমেট নেই তাদের হেলমেট পরার জন্য অনুরোধ করা হয়।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সরকারি মহিলা কলেজের প্রধান সমন্বয়ক জেসিনা মুর্শীদ প্রাপ্তি বলেন, বুধবার সকাল থেকে আমাদের পাঁচ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষার্থীরা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ট্রাফিক পুলিশের কাজ করেছে। সাধারণ মানুষ আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপর খুবই খুশি।
তিনি আরও বলেন, রোদে পুড়ে আমাদের অনেক কষ্ট হয়েছে। তবে এ কষ্ট সাধারণ জনগনের প্রশংসায় দূর হয়ে গেছে। সাধারণ মানুষ এমন একটা শৃঙ্খলাপূর্ণ সড়ক চাই।
অন্যতম সমন্বয়ক মাসুম বিল্লাহ বলেন, আমাদের বুধবারের কর্মসূচি ছিল যশোরের ট্রাফিক কন্ট্রোল এবং ধ্বংসস্তুপ পরিষ্কার করে চলাচলের উপযোগী করা। পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ১৫০ জন শিক্ষার্থী পরিচ্ছন্নতা ও অন্যরা ট্রাফিকের কাজে নিয়োজিত ছিল।
বাংলাদেশ রোভার স্কাউটের সদস্য জিএম আল হেলাল মাহমুদ অন্তর, আল শাহরিয়ার আকাশ, হৃদয় হাসান, উর্মি জাহান, রিতু খাতুন, তামিম হোসেন সদর হাসপাতালের সামনে, জজ কোর্টমোড়, চিত্রার মোড়ে ১০ টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত যানজট নিরাসনে কাজ করেন। (মাঝে দেড়টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত খাবারের বিরতি ছিলো)। তারা বলেন, এর আগেও ট্রাফিক সপ্তাহ পালন করার সময় ট্রাফিকের সাথে সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন।
জেলা রোভার সম্পাদক আবু সাইদ, রোভার স্কাউট লিডার জিয়াউল ইসলাম ও শাহিনুর রহমান শাহিন জানান, তাদের ১৪ জন স্কাউট যানজট নিরাসনে কাজ করছেন। তারা বলেন, আমরা চাই সুন্দরভাবে দেশ চলুক। সবাই সচেতন হলে একটি সুন্দর দেশ গঠন করা সহজ হবে।
আনসার ও ভিডিপির টিম লিডার শেখ টিপু সুলতান জানান, তাদের ৪৮জন সদস্য বিভিন্ন স্থানে যানজট নিরাসনে কাজ করছেন। তিনি বলেন, আট ও ছয় সদস্য করে বিভিন্ন মোড়ে তারা দায়িত্ব পালন করছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রাশেদ খান বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা ঘোষণা দিয়েছেন- শিক্ষার্থীদের সাধারণ মানুষের পাশে থাকতে। আমরা তাতে সাড়া দিয়েছি। শিক্ষার্থীদের অনেকগুলো টিম বিভিন্ন এলাকায় কাজ করছে। নতুন সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত আমরা সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে সাধ্যমতো পাশে থাকবো।
