নিজস্ব প্রতিবেদক
ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে মনোনয়ন ফরমের অতিরিক্ত দাম নির্ধারণ করে সমালোচনা মুখে পড়েছেন যশোর সদরের বিআরবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম। সদস্য পদে প্রতিটি মনোনয়ন ফরমের দাম ধরা হয়েছে দশ হাজার টাকা। ক্ষুব্ধ শিক্ষক ও অভিভাবকদের দাবি, নির্বাচনী তফসিলে মনোনয়ন ফরমের দাম উল্লেখ না থাকলেও প্রধান শিক্ষক পরে দশ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছেন। নিয়োগ বাণিজ্য, প্রত্যাশা সমাজকল্যাণ সংস্থার টাকা আত্মসাৎ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চাকরি দেয়ার নামে টাকাসহ হাতে নাতে গ্রেপ্তার, এসএসসির নির্বাচনী পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের পর প্রধান শিক্ষক এবার মনোনয়ন ফরমের নামে নতুন ফাঁদ পেতেছেন দাবি এলাকাবাসীর।
ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনের জন্য ৫ অক্টোবর তফসিল ঘোষণা করেন প্রিজাইডিং অফিসার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রবিউল ইসলাম। প্রিজাইডিং অফিসার স্বাক্ষরিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র গ্রহণ ও জমার জন্য ২২, ২৩ ও ২৫ অক্টোবর সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকের কার্যালয় নির্ধারণ করা হয়। ২৬ অক্টোবর দুপুর ১২টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে মনোনয়নপত্র বাছাই ও বৈধ প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন।
বিদ্যালয় সূত্র মতে, তফসিল অনুযায়ী ভোটের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, দাতা সদস্য, সাধারণ অভিভাবক সদস্য, সংরক্ষিত মহিলা অভিভাবক সদস্য, সাধারণ শিক্ষক সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা শিক্ষক সদস্য নির্বাচিত করা হবে।
বিদ্রালয়টির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ইমারত জোমাদ্দার বলেন, প্রধান শিক্ষক শহিদুল বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের কাছ থেকে চাকরি দেয়ার নাম করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সম্প্রতি তিনি ও সভাপতি আব্দুর রউফ স্কুলে নিয়োগ বাণিজ্য করে দুইজনকে নিয়োগ না দিয়ে স্কুলে ‘স্বেচ্ছাশ্রমে’ কাজ করাচ্ছেন।
বিদ্যালয়টির জমিদাতা ও দপ্তরি নজরুল ইসলাম জানান, প্রথমে গোপনে ফরম বিক্রির চেষ্টা করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। যে কারণে তারা কোন প্রকাশ নোটিশও দেয়নি। ১০ হাজার টাকা সদস্য ফরম নির্ধারণ করছে। এটা কোন আইনে আছে তা বোধগম্য নয়।
এব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, নিয়ম মেনে ও ম্যানিজিং কমিটির সদস্যদের সাথে পরামর্শ করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটা আমার একার সিদ্ধান্ত নয়। তারপরও বিষয়টি নিয়ে অতিশিঘ্রই এলাকার মুরব্বিদের সাথে আলোচনায় বসবো। আর বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুর রউফ এর বক্তব্য জানতে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. আহসান হাবীব বলেন, এই বিষয়ে কেউ অভিযোগ করিনি। তবে অবশ্যই নেককারজনক ঘটনা। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। ১০ হাজার টাকা মনোনয়ন ফরম বিক্রির সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিক্ষাকতা পেশাকে পুঁজি করে অপকর্মে লিপ্ত রয়েছেন। সম্প্রতি বিদ্যালয়ে অফিস সহকারী, নিরাপত্তা প্রহরী ও আয়া পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেন। বিজ্ঞপ্তিতে নিজের ছেলেকে অফিস সহকারী ও বাকি দুটি পদে অর্থের বিনিময়ে জনবল নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও ওই দুই পদের জন্য আরো দুইজনের নিকট হতে অর্থ নিয়েছে। তাদেরকে স্কুলে অতিরিক্ত হিসেবে যোগদান করিয়েছেন। অবশ্য তাদের মূল হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে দেয়া হয় না। এর আগে নির্বাচনী পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ ১৭ ছাত্রছাত্রীর ২০১৯ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয়ার নামে টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। যা নিয়ে জেলা প্রশাসক ও শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ করা হয়েছিল। ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে চাকরি দেয়ার নামে মোটা অংকের অর্থ লেনদেনের অভিযোগ ফরিদপুরে পুলিশের হাতে আটক হন তিনি। ওই বছরের ২৮ নভেম্বর জোর পূর্বক অস্ত্রের মুখে ভয়ভীতি দেখিয়ে নয় লক্ষ টাকার দুটি চেকে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। সদরের চাঁচড়া রায় পাড়ার তারাজুল ইসলাম বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। ২০২২ সালের ১১ মে যশোর উপশহরের প্রত্যাশা সমাজকল্যাণ সংস্থার এক কোটি ২৭ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তিনিসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়।