নিজস্ব প্রতিবেদক
আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের হাতে থাকা বৈধ অস্ত্র জমা ও অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। সেই সাথে তিনি কিশোর গ্যাং ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের আটকের দাবি জানিয়ে বলেন, বিভিন্ন এলাকায় ১৭ বছর ধরে আওয়ামী লীগ নেতাদের লালিত পালিত কিশোর গ্যাং মাথাচাড়া দিচ্ছে। ফিরে আসছে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা। এখনই এদের গ্রেফতার করা না হলে সন্ত্রাসী কর্মকা- ঘটিয়ে এলাকা অশান্ত করে তুলবে। রোববার (১১ আগস্ট) দুপুরে প্রেসক্লাব যশোরে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে আগুন দেয়ার ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত এবং তদন্ত প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর যশোরে হিন্দু সম্প্রদায়সহ আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িঘর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিএনপির নেতাকর্মীরা রাত জেগে পাহারা দিয়েছে। তারপরও বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটেছে। এটি ১৭ বছরের অত্যাচার নির্যাতনের প্রতিক্রিয়া। বিএনপির হাতে তো প্রশাসনিক ক্ষমতা নেই যে, চাইলে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। তারপরও চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের নির্দেশে সারাদেশে দলীয় নেতাকর্মীরা শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগের ক্যাডার-সন্ত্রাসীদের হাতে বৈধ ও অবৈধ অস্ত্রের যে ভান্ডার গড়ে উঠেছে সেগুলো দিয়ে তারা এখন অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে।
অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, ১৬ বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে ফেরা যশোর বিএনপির কর্মী মেহের আলীকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গ্রামে গঞ্জে এখনও আওয়ামী দুর্বৃত্তরা তাদের অবৈধ অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক নার্গিস বেগমের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপি ও দলে বিভিন্ন ইউনিটের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, দল, ধর্ম, বর্ণের ভিত্তিতে কারও ওপর কোন ধরণের অত্যাচার, নির্যাতন করা যাবে না। বিএনপির পক্ষ বিষয়টি কঠোরভাবে দেখভালের জন্য যশোরের প্রতিটি উপজেলায় ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। একাজে ব্যর্থ হলে বিএনপির নেতাকর্মীদের দল থেকে বহিষ্কারও করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, গত ১৭ বছরে দূর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের দেশের রাজনীতি কলুষিত হয়েছে। সংকীর্ণ চিন্তার থেকে রাজনীতির ফায়দা লুটতে যেয়ে দিন শেষে আমরা দেশটাকে সারা বিশে^র কাছে নেতিবাচক ভাবে তুলে ধরেছি। যা গণঅভ্যুত্থানের পর আরও প্রকট আকারে ধারণ করেছে।
তিনি বলেন, দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানের মাধ্যমে যে দলটি জনগণের ঘৃণা, ক্ষোভে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। সেই পরাজিতরা দেশে সনাতন ধর্মালম্বীদের নির্যাতনের অভিযোগ তুলে ভিন্ন পরিস্থিতি তৈরি করে অস্থিতিশীল পাঁয়তারা করছে। তবে এসব ষড়যন্ত্র করে কোনো লাভ হবেনা। দেশের আপামর জনগণ তথা সনাতন ধর্মালম্বীরা সব ষড়যন্ত্র রুখে দিতে প্রস্তুত।
অনিন্দ্য ইসলাম অমিত আরও বলেন, বিএনপি বর্তমান সরকারে নেই। দেশে একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন হয়েছে। কী পরিস্থিতিতে এই সরকারকে দায়িত্ব নিতে হয়েছে সেটি দেশের জনগণ ভালো করে জানে। দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব বর্তমান সরকারের। পুলিশ বাহিনী যেহেতু এখনও পুরোপুরি দায়িত্ব পালন করছে না সেকারণে বিএনপি জনগণের দায়বদ্ধতার কারণে তাদের পাশে যাচ্ছে। যেকারণে যশোরে এখনো কোনো বড় ঘটনা ঘটেনি। তবে দায়িত্বপালন করতে গিয়ে যেটি মনে হচ্ছে এ ব্যবস্থা সাময়িক নয় এটি আরও মধ্য মেয়াদি করতে হবে। এজন্য বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে শহর থেকে গ্রাম, গ্রাম থেকে ওয়ার্ড ব্যাপী সুরক্ষা কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর যশোরে যে কিছু ঘটনা ঘটেছে তার সাথে আমাদের দলের লোকজন জড়িত তা নয়। এখানে যারা বিগত সরকারের সময়ে ক্ষমতার কাছাকাছি থেকে অরাজকতা করেছে সেই কিশোর গ্যাং, চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা করছে। ওই সময়ে কিশোর গ্যাং যারা পরিচালিত করতো তারা সরকার পতনের পর ঠিকই পালিয়েছে, তবে তাদের সন্ত্রাসীরা এখন বের হয়ে এসে সন্ত্রাসী কর্মকা- করছে। বিএনপির পক্ষ থেকে দলীয়ভাবে যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার অভিযোগ রয়েছে। তবে তারা কোনোপ্রকার সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জড়িত ছিলোনা বলে তিনি দাবি করেন।
তিনি বলেন, আমাদের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পরিবার মানুষকে হিন্দু-মুসলমানের ভেদাভেদ শিখিয়েছে এমনটা নয়। আমরা যেমন আমাদের পরিবারের কাছ থেকে শিখেছি, ঠিক বিএনপি তার নেতাকর্মীদের মানুষকে মানুষ হিসেবে চিনতে শিখিয়েছে। কিন্তু একশ্রেণীর মানুষ দেশের যেকোনো সংকটের সময়ে সনাতন ধর্মালম্বীদের সামনে এনে ভিন্ন পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়। মুসলমান ও হিন্দুদের ভেদাভেদ সৃষ্টি করে ফায়দা লুটতে চায়।
তিনি বলেন, গত ৫ তারিখে ভিন্ন পরিস্থিতির কারণে দেশ যখন অস্থিতিশীল পর্যায়ে চলে যায় তখন আমরা বিএনপি নেতাকর্মীরা সনাতন ধর্মালম্বীদের বাসা-বাড়ি উপসানালয়ে পাহারার ব্যবস্থা করি। এখনও যশোরের ৮ উপজেলাতে আমাদের নেতাকর্মীরা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। গতকালও রূপদিয়ায় ৫ শতাতিক সনাতন ধর্মালম্বীদের নিয়ে সম্প্রীতি সভা করা হয়েছে। সেখানে ১২ টি মন্দির কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন। তারা আমাদেরকে স্পষ্ট করে বলেছেন, আমাদের যে পূজা-অর্চনা হয় তা মুসলমানদের টাকায়। বাংলাদেশে কেউ যদি নেতিবাচক চরিতার্থ করছে চায় তা আমরা প্রতিহত করবো বলে জানান।
অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, যশোরে সাম্প্রদায়িত সম্প্রীতি, রাজনৈতিক সহাবস্থান বজায় থাকুক সেই কাজ বিএনপি করছে। এজন্য আমরা দলমত নির্বিশেষে সবশ্রেণীপেশার মানুষের নিরাপত্তার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিচ্ছি। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে, আমাদের এ উদারতা ও গণতান্ত্রিক মানসিকতার সুযোগে বিগত সরকারের আমলের সেই চিহ্নিত সন্ত্রাসী-কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা আজান দিয়ে বেরিয়ে আসছে। তারা ইতিমধ্যে আমার একজন কর্মীকে খুন করেছে। এখন শহর ও গ্রামে অস্থিরতা ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, এসব সন্ত্রাসীরা যাতে আমাদের দলে ভিড়তে না পারে সে বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কোনো অনুপ্রবেশকারীর বিএনপিতে জায়গা নেই। এ বিষয়ে যশোরবাসীকে সচেতন থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট মো. ইসহক, গোলাম রেজা দুলু, আব্দুস সালাম আজাদ, মিজানুর রহমান খান, মারুফুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম, একে শরফুদ্দৌলা ছোটলু, হাজী আনিছুর রহমান মুকুল, মুনীর আহম্মেদ সিদ্দিকী বাচ্চু, কাজী আজম, নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এহসানুল হক সেতু, জেলা যুবদলের সভাপতি এম তমাল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রবিউল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা আমীর ফয়সাল, ছাত্রদলের সভাপতি রাজিদুর রহমান সাগর, সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাচ্চুসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী।