নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরে কর্মদক্ষতার সফলতায় গত ৮ মাসের ৬ মাসই সেরা হয়েছেন জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ওসি রূপন কুমার সরকার। অবশিষ্ট দু’টি মাসের সাফল্যের তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন বেনাপোল থানার ওসি সুমন কুমার ভক্ত। সেখানে জেলা সদরের গুরুত্বপূর্ণ পুলিশ স্টেশন কোতোয়ালি থানার ওসির সাফল্য শুন্য। এই ওসির কর্ম এলাকায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, অপরাধী আটকসহ আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ভূমিকা রেখে ডিবি সফলতার পরিচয় দেখালেও কোতোয়ালির ওসি সেখানে ব্যর্থ হয়েছেন।
সূত্র মতে, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের সীমান্ত ঘেঁষা জেলা যশোর। সীমান্তের ওপার থেকে প্রতিদিনই মাদকসহ বিভিন্ন চোরাচালানের পণ্য আসে দেদারসে। এছাড়া যশোরে প্রায়ই ঘটে খুন, চাঁদাবাজি, বোমাবাজি, ছিনতাই, ছুরিকাঘাতের ঘটনা। এই সকল অপরাধ অপকর্ম দমনে মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করে পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃংখলাবাহিনী। এজন্য সেরাদের পুরস্কৃত করেন পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার। পুলিশের অন্যান্য দপ্তরের প্রধান কার্যক্রমে সেরা হয়ে পুরস্কার পেলেও ‘ব্যর্থ’ কোতোয়ালির ওসি আব্দুর রাজ্জাক।
সূত্র মতে, কেউ কোন অপরাধের শিকার হলে তাৎক্ষণিক থানা পুলিশের কাছে সহায়তা চায়। যশোর শহরসহ সদর উপজেলায় সবসময়ই খুন, চাঁদাবাজি, মাদক কারবারিসহ অন্যান্য অপরাধ বেশি সংঘটিত হয়। আইনশৃংখলা স্বাভাবিক রাখতে কোতোয়ালি থানার বিশেষ ভূমিকা থাকে। বলা যায় কোতোয়ালি থানার ওসি’র দায়িত্ব ও কার্যক্রম অন্যান্যদের চেয়ে বেশি। অথচ তিনি দায়িত্ব ও কার্যক্রমে পিছিয়ে রয়েছেন বলে পুলিশের সাফল্যের খতিয়ান বিশ্লেষণে তথ্য মিলেছে। এজন্য সাফল্যের খাতায় তার নাম তলানিতে!
২০২৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর কোতোয়ালি থানায় যোগ দেন ওসি আব্দুর রাজ্জাক। তিনি যে মাসে যোগদান করেন সেই মাসেই কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়েছে ১১১টি। তার মধ্যে খুন, চাকুপার্টি ও ধর্ষণের মত ঘটনাও রয়েছে। আবার অক্টোবর মাসে কোতোয়ালি থানা এলাকায় খুন হয়েছে পুলিশের খাতায় দুইটি। চাকুপার্টির দু’টি মামলা হলেও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে চারটি। গাড়ি ও সিঁদেল চুরির ঘটনা ঘটেছে ৯টি। অস্ত্র আইনে তিনটিসহ মোট মামলা হয়েছে ১০৭টি। নভেম্বর মাসে পুলিশের খাতায় একটি খুন উল্লেখ থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বিঘœ ঘটার ঘটনায় দুইটি মামলা ও অস্ত্রসহ ৮৫ মামলা হয়েছে। খুন না থাকলেও আইন শৃঙ্খলা বিঘœ ঘটনায় চারটিসহ ৮৭ মামলা রুজু হয়েছে ডিসেম্বর মাসে।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে পুলিশের খাতায় তিনটি খুন হলেও আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন ঘটার মামলা হয়েছে আরো তিনটি। একটি ধর্ষণ ও আটটি চুরিসহ ওই মাসে মামলা হয়েছে ৮৫টি।
ফেব্রুয়ারি মাসে খুন হয়েছে ৬টি। আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন, দস্যুতা ও অস্ত্র উদ্ধারসহ মামলা হয়েছে ১০৮টি। মার্চ এবং এপ্রিল মাসে একাধিক অপরাধ সংঘটিত হলেও কোতোয়ালি থানার ওসির ভূমিকা সন্তোষজনক ছিল না। এপ্রিল মাসে নৃত্যশিল্পী খাদিজা খাতুন মিতুর লাশ বুকভরা বাঁওড় থেকে উদ্ধার করে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। ওই ঘটনার সাথে জড়িত মৃন্ময় কুমার নিলয়কে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আটক করে ডিবি পুলিশ। ৩০ এপ্রিল একইদিনে উদ্ধার হয়েছে দুটি লাশ। এরমধ্যে সদরের বসুন্দিয়া ইউনিয়নের সাদুল্লাহপুর গ্রামস্থ ভৈরব নদের মধ্যে থেকে উদ্ধার করা হয় ইমন হোসেনের (২৮) মৃতদেহ। খবর পেয়ে সেখানে গিয়েছিলেন কোতোয়ালি থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক। কিন্তু তার দায়িত্বশীল ভূমিকার সংকটের সুযোগে পিবিআই পুলিশের পরিদর্শক মোনায়েম কবীর এবং ডিবি পুলিশের এসআই খান মাইদুল ইসলাম অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় সনাক্ত করেন। পাশাপাশি ডিবি এবং পিবিআই দৌঁড়ঝাপ শুরু করেন খুনিদের সনাক্ত এবং আটকে। একই দিন সকালে সাতমাইলে রেললাইনের পাশে অজ্ঞাতনামা এক যুবকের লাশ দেখে জাতীয় সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল করে স্থানীয়রা।
উল্লেখ্য, গত ৮ মাসের মধ্যে ৬ মাস জেলার শ্রেষ্ঠ এবং সফলতার মাপকাঠিতে প্রথম হয়েছেন জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ওসি রুপন কুমার সরকার। আর দুইবার শ্রেষ্ঠ হয়েছেন বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি সুমন ভক্ত। কিন্তু সফলতার কোন তালিকায় নেই কোতোয়ালি থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাকের নাম। তার কার্যক্রম নিয়ে বিভিন্ন মহলে আছে আলোচনা-সমালোচনা।
এই ব্যাপারে জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন বলেছেন, হত্যাসহ বড় ধরণের সকল ঘটনায় ডিবিকেই সংশ্লিষ্ট করা হয়ে থাকে। কারণ তাদের কাছে ছোটখাটো কোন মামলা থাকেনা। তাই ডিবি অধিকাংশ ঘটনায় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানো হয়। এজন্য ডিবির ওসি সেরা হচ্ছেন।
