ঢাকা অফিস
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জানিয়েছেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের “নতুন অধ্যায়” শুরুর বিষয়ে আলোচনা করেছে ঢাকা ও ওয়াশিংটন।
রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী এলিন লাউবাকের নেতৃত্বে আসেন ইউএসআইডির সহকারী প্রশাসক মাইকেল শিফার, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তার।
প্রায় ১ ঘণ্টার বৈঠকে উঠে আসে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এবং দেশটির অভ্যন্তরীণে দ্বন্দ্ব নিয়ে সাম্প্রতিক সীমান্তে নিরাপত্তা ঝুঁকি, গাজায় যুদ্ধ বিরতি কার্যকর করা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অর্থনৈতিক ক্ষতি, র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা ইস্যুতে ৫টি মার্কিন পর্যবেক্ষণ, অর্থনৈতিক বিনিয়োগ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মূল বিষয় হল তারা (মার্কিন) বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের একটি নতুন অধ্যায় শুরু করতে চায়। (বিপরীতভাবে) আমরাও তাদের সাথে সম্পর্কের একটি নতুন অধ্যায় শুরু করতে চাই। ভবিষ্যতে ঘনিষ্ঠ ও গভীর সম্পর্ক উভয় দেশের জনগণের জন্য উপকৃত হবে। কারণ ঢাকা ও ওয়াশিংটন উভয়েই বন্ধনের নতুন অধ্যায় শুরু করতে তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
মাহমুদ বলেন, বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর দণ্ডপ্রাপ্ত খুনি রাশেদ চৌধুরীর প্রত্যাবাসন, রোহিঙ্গা সংকট, গাজা গণহত্যা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, নিরাপত্তা সহযোগিতা ও জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
র্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে মাহমুদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পাঁচটি পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে। যা বাংলাদেশ অনুসরণ করবে, যাতে ওয়াশিংটন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে পারে। তারা আজ আমাদের পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়েছে। তারা র্যাবকে বিস্তারিত জানাবে। বিস্তারিত পেলে আমরা সেগুলো নিয়ে কাজ শুরু করব।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেয়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যতম দণ্ডিত খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি মার্কিন প্রতিনিধি দলের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। জবাবে, মার্কিন পক্ষ বলেছে যে, চৌধুরীকে প্রত্যাবাসনের বিষয়টি মার্কিন বিচার বিভাগের কাছে বিচারাধীন রয়েছে।
মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর অব্যাহত চাপের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। তারা (মার্কিন) আমাদের সাথে একমত যে, রোহিঙ্গাদের সকল নাগরিক অধিকারসহ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনই সংকটের একমাত্র সমাধান। তিনি যোগ করেন যে, মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য নিরাপত্তা হুমকির সৃষ্টি করেছে।
গাজায় যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যে সেখানে নারী ও শিশু নিহত হওয়ার বিষয়টি মেনে যায় না।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মার্কিন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর ফটো সেশনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মিউনিখে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে সাম্প্রতিক বৈঠক নিয়েও আলোচনা হয়েছে। আমরা তাদের (মার্কিন) জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে, আমাদের অবস্থান সম্পর্কে জানিয়েছি।
এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন, মানবাধিকার পরিস্থিতি ও শ্রম অধিকার নিয়ে মার্কিন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি।
এর আগে বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসে খুব সংক্ষিপ্ত মন্তব্যে মার্কিন রাষ্ট্রপতির বিশেষ সহকারী ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলর (এনএসসি) ডিরেক্টর এলিন লাউবাকের বলেন,
ওয়াশিংটন যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয়। আমাদের ভাগ করা অগ্রাধিকার এবং ভবিষ্যতে একসাথে সহযোগিতা করার উপায় সম্পর্কে কথা বলা, আমাদের জন্য আনন্দের বিষয় যে, আমরা ইউএস-বাংলাদেশ সম্পর্ককে মূল্যায়ন করার জন্য অত্যন্ত সমর্থন করি।
এদিকে, ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে বলেছে যে যুক্তরাষ্ট্র একটি সমৃদ্ধ, নিরাপদ এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশকে সমর্থন করে। আমরা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছি, কীভাবে আমাদের দুই দেশ অর্থনৈতিক উন্নয়ন, নিরাপত্তা, শরণার্থী, জলবায়ু, শ্রম ও বাণিজ্য সহ পারস্পরিক স্বার্থ নিয়ে কাজ করতে পারে।
দূতাবাস জানিয়েছে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।
মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গে হাছান মাহমুদ বলেন, আমরা অনেকগুলো বিষয়ে আলোচনা করেছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের একটি বড় উন্নয়ন সহযোগী। গত ৫২ বছরের আমাদের পথচলায়, উন্নয়ন অভিযাত্রায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বড় ভূমিকা রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রেও অন্যতম। বিনিয়োগ নিয়ে আলাপ করেছি, সেটি কীভাবে বাড়ানো যায় সেটাও আলোচনায় ছিল। আমাদের উন্নয়ন অভিযাত্রায় তারা কীভাবে আরও বেশি সহযোগিতা করতে পারে, সেটি নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ে কর্মপদ্ধতি কেমন হবে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন,পরিবেশগত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। ইউএসএইডের মাধ্যমে অনেক প্রজেক্ট আছে, সেটা আরও কীভাবে শক্তিশালী করা যায়, সেটা নিয়ে আলোচনা করেছি। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে, নতুন অধ্যায়ে সম্পর্ক শুরু হোক। আমরাও চাই সম্পর্কে একটা নতুন অধ্যায় শুরু করতে।
এর আগে রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গেও বৈঠক করেন মার্কিন প্রতিনিধিদল।
দলটির প্রতিনিধিরা হলেন : মার্কিন রাষ্ট্রপতির বিশেষ সহকারী ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলর (এনএসসি) ডিরেক্টর এলিন লাউবাকের, ইউএসএআইডির এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর মাইকেল শিফার এবং ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আক্তার।
ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস তাদের ওয়েবসাইটে জানায়, ইন্দোপ্যাসিফিক অঞ্চলে পারস্পরিক স্বার্থের অগ্রগতির জন্য কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার, চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সাথে আলোচনা করবেন তারা। সফরকালে তারা তরুণ অ্যাক্টিভিস্ট, সুশীল সমাজ, শ্রম সংগঠক এবং মুক্ত গণমাধ্যমের বিকাশে নিযুক্ত ব্যক্তিদের সাথেও বৈঠক করার কথা রয়েছে। এরইমধ্যে তারা বেশ কিছু বৈঠক করেছেন।