জেলা আ.লীগের শীর্ষনেতৃত্বে ক্ষমতা দখলের অসম প্রতিযোগিতায় ঝুলে আছে কমিটি ঘোষণা
জাহিদ হাসান
সম্মেলন হওয়ার দুই মাস পেরিয়ে গেছে। ঘোষণা করা হয়নি নতুন কমিটি। তাই নেতৃত্ব শূন্য অবস্থায় চলছে যশোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ। আশাহত হয়েছেন পদ-প্রত্যাশী ও নেতাকর্মীরা। তাদের মাঝে ক্ষোভও বিরাজ করছে। পদপ্রত্যাশীরা জানিয়েছে, জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে ক্ষমতা দখলের অসম প্রতিযোগিতার কারণে ঝুলে আছে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি ঘোষণা। এদিকে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন কমিটির নেতৃত্বের পাশাপাশি বিভিন্ন পদে স্থান দিতে জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রভাবশালী নেতারা নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
দীর্ঘ জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত ১২ জুলাই প্রায় ১৭ বছর পর যশোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এদিন রাত ১১ টা পর্যন্ত শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহে এই সম্মেলন হয়। দ্বিতীয় অধিবেশন চলার সময় উন্মুক্তভাবে সভাপতি- সম্পাদক হতে ইচ্ছুকদের মঞ্চে এসে নাম লিখতে আহ্বান জানান কেন্দ্রীয় নেতারা। এসময় সভাপতি পদে ২৭ জন এবং ৪৬ জন সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী নাম লেখান। পরে কেন্দ্রীয় নেতা ও জেলার নেতারা যশোর সার্কিট হাউজে সভাপতি সম্পাদক প্রত্যাশীদের যাচাই বাছাই করে। সেখানে জেলার শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সমঝোতা না হওয়াতে কমিটি ঘোষণা না করেই চলে যান। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নীতি নির্ধারকদের সাথে আলোচনা করে এক সপ্তাহের মধ্যে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হলেও দুই মাসে তা আলোর মুখ দেখেনি।
পদপ্রত্যাশী পাঁচজন নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যশোর জেলা আওয়ামী লীগ কার্যত দুটি গ্রুপে বিভক্ত। একটি অংশের নেতৃত্বে দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার এমপি। অন্যটি যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ। এই দুই নেতা নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে স্বেচ্ছাসেবক লীগের শীর্ষ দুই পদ নিজেদের কবজায় রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তাদের নিজেদের পছন্দমতো প্রার্থীদের গুরুত্ব দিতে যেয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এই কমিটি দিচ্ছে না। শাহীন চাকলাদারের শীর্ষ দুই পদে সভাপতি প্রার্থী হলেন নওয়াপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির তুহিন ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি এস এম নিয়ামত উল্লাহ। নাবিলের সভাপতি প্রার্থী হলেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি আসাদুজামান মিঠু ও সাধারণ সম্পাদক পদে সদরের লেবুতলা ইউপির চেয়ারম্যান আলিমুজ্জামান মিলন। এর পাশাপাশি সভাপতি প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মোস্তফা কামালের নামও। সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে চায় আগের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ইমামুল কবীর, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সুব্রত বিশ্বাস এবং যুবলীগনেতা গাজী টিপু।
এই বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার এমপি বলেন, ‘নির্বাচনে সহযোগী সংগঠনগুলো মাঠে থাকলে দল ভারী হয়। নির্বাচনের আগে কমিটি দেওয়ার ব্যাপারে নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জেলার সভাপতিকে নিয়ে আমরা দলটাকে শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ করে যাচ্ছি। যারা অনুপ্রেবেশকারী তারা দলের শীর্ষনেতাদের নিয়ে আজেবাজে কথা ছড়াচ্ছে। এরাই আমাদের দলের মধ্যে বিষফোঁড়া। তিনি বলেন, কাজী নাবিল তো দলের সাংগঠনিক কোন পদপদবীতে নাই। ওনি পদ পদবি কিভাবে দিবেন ? কাউন্সিলররা আছে; তৃণমূল যাকে চাই তাদেরকেই কেন্দ্রীয় নেতারা মূল্যায়ন করবেন।
সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী এস এম নিয়ামত বলেন, দীর্ঘদিন মেয়াদ উত্তীর্ণ থাকার পরে সম্মেলন হলো; সেই সম্মেলন থেকে কমিটি হয়নি। আমার মতো অনেকেই হতাশ হয়েছিলো। সামনে নির্বাচন। নির্বাচনের আগে যশোরের মতো জায়গায় আওয়ামী লীগের এই বৃহৎ সহযোগী সংগঠনের কমিটি থাকবে না; সেটা হয় না। আশা করি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ দ্রুতই কমিটি ঘোষণা করবেন।
সভাপতি প্রার্থী আসাদুজামান মিঠু বলেন, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বেশি বিচক্ষণ। তারা যেদিন কমিটি দিবে বা সেটা ভালো মনে করে সেটাই হবে। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এ কে এম আফজালুর রহমান বাবু বলেন, ‘যশোরে কমিটি দেওয়া নিয়ে ভাবা হচ্ছে; দ্রুতই কমিটি দেওয়া হবে। জেলার শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সমঝোতা না হওয়াতে কমিটি দিতে দেরি হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি মন্তব্য করেননি। আর সংগঠনটির সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন (সাচ্চু) বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মেয়াদ উর্ত্তীণ ছিলো; একটু সময় করে যাচাই বাছাই করছি। চলতি মাসেই বা আগামি মাসের প্রথম সপ্তাহে কমিটি হতে পারে বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, সর্বশেষ ২০০৬ সালে যশোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে আসাদুজামান মিঠুকে সভাপতি ও নূরে আলম সিদ্দিকী মিলনকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। দীর্ঘদিন মেয়াদোত্তীর্ণের পর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী সংসদের সভাপতি গাজী মেজবাউল হক সাচ্চু ও সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবুর নির্দেশে গত বছরের ২৮ জুন কমিটি ভেঙে দেয়া হয়। এরপর নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে একই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠানের তারিখ ঘোষণা করা হয়। তার পরে সেটিও অজ্ঞাত কারণে বাতিল হয়। এর পর চলতি বছরের ১২ জুলাই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।