এম এ রাজা
বছরের শেষ সময় এখন বিদ্যালয়গুলো ভর্তি কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। তাইতো যশোর শহরের ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অবিভাবকরা ভর্তি-যুদ্ধে নেমে পড়েছেন। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি তাদের বাবা-মায়ের ঘুমও হারাম হয়ে গেছে। প্রিয় সন্তানকে পছন্দের স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা করছেন।
তবে বেসরকারি পর্যায়ের প্রাথমিক স্তরের শিক্ষায় অতিরিক্ত ফি আর মানসম্মত পরিবেশের সংকটে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। যেখানে ভালো পড়াশোনার পরিবেশ আছে, সেখানকার ফি সাধারণ পরিবারের নাগালের বাইরে। আবার তুলনামূলক কম ফিতে পাওয়া স্কুলগুলোতে শিক্ষারমান ও সুযোগ-সুবিধা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। সরকারি স্কুলগুলোতে ভর্তির ক্ষেত্রে রয়েছে নানা সীমাবন্ধতা। তৃতীয় শ্রেণির নিচে ভর্তি করা যায় না, এছাড়া আসন সংখ্যাও থাকে সীমিত। তাই অভিভাবকদেরকে আরও চাপে ফেলেছে।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করার জন্য বিভিন্ন নীতিমালা আছে। তবে কত টাকা ভর্তি ফি বা বেতন নিতে পারবে তার জন্য কোন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই– জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা
সম্প্রতি যশোরে তিন সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জিলা স্কুল, যশোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও যশোর শিক্ষা বোর্ড সরকারি মডেল স্কুলের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। বিদ্যালয়গুলোতে তৃতীয় শ্রেণির নিচে কোন ভর্তির সুযোগ নেই। তৃতীয় শ্রেণির ভর্তিতেও রয়েছে আসনের সীমাবন্ধতা। জিলা স্কুলে দুই শিফটে ২১৭ জন, সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ২১৬ জন ভর্তির সুযোগ পাবেন। এছাড়া শিক্ষা বোর্ড স্কুলে মাত্র ৫৫ জন লটারিতে ভর্তির সুযোগ পাবেন।
এছাড়া শহরের কেন্দ্রিক প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ‘পড়ার মান’ ভালো না ভ্রান্ত ধারণা থেকে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দিকে ঝুঁকছে উচ্চ বিত্ত শ্রেণির অভিভাবকরা। এই সুযোগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের ইচ্ছামতো ভর্তি ফি, সেশন চার্জ ও মাসিক বেতন আদায় করছে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষাবিদরা।
প্রাথমিক স্তরের শিক্ষায় বিপরীতমুখী দুই চিত্র বর্তমানে অভিভাবকদের বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভালো মানের পরিবেশ, দক্ষ শিক্ষক ও আধুনিক সুবিধাযুক্ত বেসরকারি স্কুলে ভর্তি হতে চাইলে দিতে হচ্ছে আকাশছোঁয়া ফি। অনেক ক্ষেত্রে ভর্তি ফি, সেশন চার্জ, মাসিক বেতন, ড্রেস-বই, কপি মিলিয়ে খরচ দাঁড়াচ্ছে কয়েক মাসের পারিবারিক আয়ের সমান। সাধারণ ও মধ্যবিত্ত অভিভাবকদের জন্য এটি বড় ধরনের আর্থিক চাপ।
শুধুমাত্র প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় না, মাদ্রাসা শিক্ষা কেন্দ্রীক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। যা রীতিমতো একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।-উপশহর কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শাহীন ইকবাল
অন্যদিকে তুলনামূলক কম ফি’র স্কুলগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে না কাক্সিক্ষত মানের শিক্ষা। শ্রেণিকক্ষ সংকট, পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকা, কারিকুলাম কার্যক্রম সীমিত, এসব কারণে সন্তানকে এসব প্রতিষ্ঠানে দিতে অনীহা অভিভাবকদের। কিন্তু বিকল্পও খুব কম।
যশোর শহরের কয়েকজন অভিভাবক জানিয়েছেন, গত কয়েক বছরে প্রাথমিক স্তরের স্কুলগুলোর ফি বেড়েছে ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত। একইসঙ্গে বেড়েছে বিভিন্ন ‘অতিরিক্ত খরচ’, যার যুক্তি অনেক সময় তারা খুঁজে পান না।
যশোর জেল রোডে অবস্থিত এনএম খান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রিক্তা রানী দাস বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান ভালো না এটা একটা ভ্রান্ত ধারণা। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সমাজের সকল স্তরের মানুষ প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হয়। তাই অনেকে তাদের বাচ্চাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে চাই না।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান ভালো না এটা একটা ভ্রান্ত ধারণা। এনএম খান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রিক্তা রানী দাস
উপশহর কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শাহীন ইকবাল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শহর কেন্দ্রিক বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। বর্তমানে এটার হার অনেক বেশি। এছাড়া আমাদের সমাজের উচ্চ বিত্তরা প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর প্রতি আস্থা হারিয়েছেন। আর এ সুযোগগুলো কাজে লাগিয়ে নামে বেনামে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। শুধুমাত্র প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় না, মাদ্রাসা শিক্ষা কেন্দ্রিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। যা রীতিমতো একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। তবে এসব প্রতিষ্ঠান গুলোর নীতিমালা ও তদারকি জোরদার করা জরুরি, না হলে শিক্ষা ব্যবস্থায় বৈষম্য আরও বাড়বে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করার জন্য বিভিন্ন নীতিমালা আছে। তবে কত টাকা ভর্তি ফি বা বেতন নিতে পারবে তার জন্য কোন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই। এরজন্য আলাদা একটা একটা কমিটি আছে। কমিটি নির্ধারণ করে ভর্তি ফি কেমন হবে।
