নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরে সরকারি সার আত্মসাতের অপরাধে বিএডিসির সাবেক সহকারী ভান্ডার কর্মকর্তা আজগর আলীকে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের বিভিন্ন ধারায় মোট ১৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড প্রদান করেছেন আদালত। একই সাথে আত্মসাতকৃত সারের ৩ কোটি ৭৪ লাখ ৮১ হাজার ১৬ টাকা ৩২ পয়সা তাকে অর্থদণ্ড করে তা রাষ্ট্রের অনুকূলে জমা প্রদানের জন্য আদেশ দেওয়া হয়েছে। এই মামলার অপর দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদেরকে খালাস দেওয়া হয়। মঙ্গলবার যশোরের স্পেশাল জজ (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ সামছুল হক এই রায় প্রদান করেন।
দুদকের পিপি অ্যাড. মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, সাজাপ্রাপ্ত আসামি আজগর আলী যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার আরাজী সিলিমপুরের আরশাদ আলী মোল্লার ছেলে। রায় ঘোষণার সময় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
খালাসপ্রাপ্তরা হলেন, যশোর বিএডিসি’র তৎকালীন উপ-সহকারী পরিচালক বর্তমানে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ায় কর্মরত মো. ফাহাদ আল-মামুন ও অভয়নগর উপজেলার শংকরপাশা গ্রামের মেছের আলী মল্লিকের ছেলে সার ডিলার মমিন উদ্দিন।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, যশোরের চাঁচড়াস্থ বিএডিসি গুদামে সহকারী ভান্ডার কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন আজগর আলী। তিনি ২০১১ সালের ২১ ডিসেম্বর থেকে ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ওই গুদামে কর্মরত থাকাকালে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের সহায়তায় ৩২০ মেট্রিক টন এমওপি সার আত্মসাৎ করেন। যার তৎকালীন মূল্য ৭৬ লাখ ৩৪ হাজার ৫৬০ টাকা। এ ঘটনায় বিএডিসি’র যুগ্ম পরিচালক (সার) রতন কুমার মন্ডল ২০১৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলাটি তদন্ত করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক ওয়াজেদ আলী গাজী। তদন্তকালে এজাহারভুক্ত আসামি আজগর আলীকে আটক করা হয়। তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। তার জবানবন্দিতে প্রকাশ পায়, এ ঘটনার সাথে বিএডিসি’র উপ-সহকারী পরিচালক ফাহাদ আল-মামুন এবং অভয়নগরের নওয়াপাড়ার দুই জন সার ব্যবসায়ী এম এ রাশেদ ও মমিন উদ্দিন জড়িত। এছাড়া তদন্তকালে টিএসপি, এমওপি এবং ডিএপি সার মোট ৮৪৪ দশমিক ৮০ মেট্রিক টন আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া যায়। যার মূল্য ৩ কোটি ৭৪ লাখ ৮১ হাজার ১৬ টাকা ৩২ পয়সা। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজগর আলী, ফাহাদ আল-মামুন, এম এ রশিদ ও মমিন উদ্দিনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন দুদক কর্মকর্তা ওয়াজেদ আলী গাজী। মামলায় আসামি আজগর আলীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক তাকে দ-বিধির ৪০৯ ধারায় ৭ বছরের সশ্রম কারাদ- ও ১০ হাজার টাকা অর্থদ- অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড, ৪২০ ধারায় ৫ বছরের সশ্রম কারাদ- ও ৫ হাজার টাকা অর্থদ- অনাদায়ে আরও ৪ মাসের কারাদণ্ড এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় ২ বছরের কারাদণ্ড ও ৩ হাজার টাকা অর্থদ- অনাদায়ে আরও ২ মাসের কারাদণ্ড প্রদান করেন। আসামিকে প্রদত্ত সকল ধারার দণ্ড একত্রে চলবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া তাকে আত্মসাতকৃত সারের ৩ কোটি ৭৪ লাখ ৮১ হাজার ১৬ টাকা ৩২ পয়সা অর্থদণ্ড করে তা রাষ্ট্রের অনুকূলে জমা প্রদানের জন্য আদেশ দেওয়া হয়। একই সাথে মামলার অপর দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদেরকে খালাস প্রদানের আদেশ দেন বিচারক। আরেক আসামি এম এ রাশেদ মামলা চলাকালে মৃত্যুবরণ করায় পূর্বেই তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
