সম্পাদকীয়
প্রতারকরা শাখা-প্রশাখা বিস্তার করেছে। এমন কোন দিক নেই, সেদিকে তারা হাত বাড়ায়নি। এতে সর্বস্তরের মানুষ সীমাহীন ক্ষতির শিকার হচ্ছে। কৃষকরা ক্ষেতে সার ও কীটনাশক ব্যবহার করে প্রতারিত হচ্ছে। নকল মধুতে তো এখন বাজার সয়লাব। খেজুরের গুড়ও নকল হয়ে গেছে। সম্প্রতি ধরা পড়েছে গবাদি পশুর নকল ওষুধ। যশোরেই তৈরি হচ্ছে কোরিয়া, চায়না ও ভারতের লেবেল দিয়ে মোড়ক করা গবাদি পশুর ওষুধ। সেই ওষুধ পৌঁছে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। নিশ্চিন্তে সেসব ওষুধ গবাদি পশুর ওপর প্রয়োগও চলছে দেদার।
২০ মার্চ যশোরের উপশহর ই-ব্লকে ইম্পেরিয়াল ইউনাইটেড ফার্মা লিমিটেড নামক একটি গবাদি পশুর পুষ্টি প্রিমিক্স উৎপাদন কারখানায় ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালালে এমন তথ্য বেরিয়ে আসে। এছাড়াও অভিযান চালিয়ে অনুমোদনহীন ওষুধ উৎপাদনের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানের মালিক মোশারফ হোসেনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে অনুমোদন ছাড়াই গবাদি পশুর ওষুধ উৎপাদন করে আসছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে দেখা যায় প্রতিষ্ঠানটি ২৭ প্রকার ওষুধ উৎপাদন করে থাকে। কিন্তু এর মধ্যে ছয় প্রকার ওষুধ উৎপাদনের অনুমোদন রয়েছে। বাকি ২১ প্রকার ওষুধ অনুমোদন ছাড়াই উৎপাদন ও বাজারজাত করছে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিষ্ঠানটির মালিক মোশারফ হোসেনের তথ্য অনুযায়ী খুলনা বিভাগের ১০ জেলাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়মিত তার প্রতিষ্ঠানের এই ওষুধ সরবরাহ হয়ে থাকে। প্রতি বছর প্রায় ৭০ লাখ টাকার ওষুধ উৎপাদন করে তার প্রতিষ্ঠান ইম্পেরিয়াল ইউনাইটেড ফার্মা লিমিটেড।
নকল ওষুধে রোগ চিকিৎসা হওয়া তো দূরের কথা উল্টো প্রতিক্রিয়ায় পশুর ক্ষতি হওয়ায় স্বাভাবিক। এখনকার দিনে গবাদি পশু পালন অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এই ব্যয়ে পালিত পশু যদি নকল ওষুধে ক্ষতির শিকার হয় তাহলে কৃষকের সর্বস্বান্ত হতে হবে। তবু শেষ রক্ষা ব্যাপক ক্ষতির আগেই ভ্রাম্যমাণ আদালত টের পেয়ে ব্যবস্থা নিয়েছেন। মোশারফ হোসেন নামের এই প্রতারক যাতে পুনরায় এমন অপরাধ করার সুযোগ না পায় সেদিকে কর্তৃপক্ষকে দৃষ্টি রাখতে হবে। শুধু যশোরে নয়, এমন প্রতারক যে দেশের অন্য স্থানেও আছে তাতে সন্দেহ নেই। সব জায়গার প্রতারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। নতুবা একদিন দেখা যাবে কৃষকসহ গবাদি পশুর খামারীরা পথের ফকিরে পরিণত হবে।
আরও পড়ুন:বাঙালির অদম্য সাহসের উদ্বোধন