জাহিদ হাসান
গেল বছরে ভালো কিছু করেছে সেটি আমি মনে করি না। আওয়ামী লীগের উপজেলা কমিটি ও সহযোগী সংগঠনের কমিটিগুলো দেয়া নিয়ে বিব্রত পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছে। বিভিন্ন দিবসে কেন্দ্র থেকে আওয়ামী লীগ পোস্টার পাঠালেও বণ্টন হয়নি। সব উপজেলার কমিটি এখনো পূর্ণাঙ্গ হয়নি। যদি কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ হতো; তা হলে সাংগঠনিক গতিশীলতা পেত। একটা সাফল্য হলো দলীয় সভানেত্রীর যশোরের জনসভা। তবে এটা যশোর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে না। এটার সফল দাবিদার খুলনার সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন। সবমিলিয়ে গত বছর জেলা আওয়ামী লীগ যেভাবে যাওয়ার কথা ছিলো সাংগঠনিকভাবে সেভাবে যেতে পারেনি। যশোর জেলা আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা ও দুর্বলতা রয়েছে।
কথাগুলো বলছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুল মজিদ। তবে নতুন বছরে উদ্যোমী হয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আসন্ন সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। সংগঠনের একজন সহসভাপতি মজিদ যশোর আওয়ামী লীগের অবস্থা নিয়ে এভাবে মূল্যায়ন করছিলেন।
তবে বিগত সময়ের চেয়ে বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগ সুশৃঙ্খল ও শক্তিশালী দাবি করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার এমপি দৈনিক কল্যাণকে বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কোন গ্রুপিং নেই। যেকোন সময়ের চেয়ে বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগ শক্তিশালী। আওয়ামী লীগ তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজপথে ছিল; থাকবে। দলের সাংগঠনিক কমিটির বিষয়ে কেন্দ্রীয় ও জেলার নেতাদের সাথে কথা বলেই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হবে বলে জানান তিনি।
বিদায়ী বছরের শুরুতে যশোরের রাজনীতি শান্ত থাকলেও শেষের দিকে বেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা জেলা বিএনপি পুলিশের বাঁধা কাটিয়ে একের পর এক সভা-সমাবেশ করে। অন্যদিকে বিএনপির সভা-সমাবেশ প্রতিহত করার নামে দলীয় কার্যালয়সহ শীর্ষ নেতাদের বাড়ি ভাংচুরের মাঠ দখলের রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়ায় জেলা আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া দলের মধ্যে কোন্দল, গ্রুপপরিবর্তন নেতাকর্মীদের বিশৃঙ্খলা কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন বিষয়ে বছরজুড়েই আলোচনায় ছিল জেলা আওয়ামী লীগ। বছরের শেষের দিকে শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে সমাবেশের মধ্যে দিয়ে কিছুটা উজ্জীবিত হতে দেখা যায় নেতাকর্মীদের। তবে সমালোচনার মধ্যেও বছর জুড়েই করোনা, শীত, বিভিন্ন কর্মসূচিতে খাদ্য সামগ্রী-বস্ত্র বিতরণ করে প্রশংসা কুড়ানোর কাজও করেছেন জেলা আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠন।
এদিকে, গেল বছরের ৩১ জুলাই যশোর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির একতরফা স্বাক্ষরে মণিরামপুর, ঝিকরগাছা ও বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে হৈ চৈ পড়ে যায়। সভাপতির একতরফা স্বাক্ষরে ঘোষিত মণিরামপুর, ঝিকরগাছা ও বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি প্রকাশ হয়। যেখানে স্বাক্ষর ছিল না জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার এমপির। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলে নানা বিতর্ক। পরে ২ আগস্ট দলের ধানমণ্ডির কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হকের আহুত জরুরি সভায় ওই কমিটি বাতিল করা হয়। যশোর সদর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাজহারুল ইসলাম মাজহারের বিরুদ্ধে ইছালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে হত্যার হুমকির অভিযোগ উঠে। মুঠোফোনে হুমকির কথোপকথনের অডিও যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে। ওই সময়ে যুবলীগনেতার এই ঘটনাটি বেশ সমালোচিত হয়। এছাড়া গেল বছর জুড়েই আওয়ামী লীগের গ্রুপিং রাজনীতিতে ছিলো গ্রুপ পরিবর্তন। গেল বছরে শাহীন চাকলাদারের সঙ্গে রাজনীতি করা নেতাকর্মীরা গ্রুপ পাল্টে এমপি কাজী নাবিল আহমেদ শিবিরে যোগ দেন। সম্প্রতি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহারুল ইসলাম তার গ্রুপ ছেড়েছেন।
এছাড়া সাংগঠনিকভাবে গত বছরও ব্যর্থতার বছর পর করেছে জেলা আওয়ামী লীগ বলে স্বীকার করেছে শীর্ষ কয়েক নেতাও। সাংগঠনিক শৃঙ্খলার অভাবে দলীয় প্রোগামে ১৫ থেকে ২০ জনের বেশি উপস্থিত হন না জেলার নেতারাও। এমনটি কয়েকবার গণমাধ্যমের শিরোনামও হতে দেখা গেছে। এছাড়া দলীয় কোন্দলে যশোরের ৮ উপজেলার মধ্যে ৫টিতে আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। অভিযোগ কতিপয় নেতার একক আধিপত্য বিস্তার ও ক্ষমতার অপব্যবহারে বেড়েছে গ্রুপিং। তৃণমূল ঢেলে সাজাতে না পারায় সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হচ্ছে সংগঠন।
নাম না প্রকাশে জেলা আওয়ামী লীগের এক সহ সভাপতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নেতারা জেলার সভাপতি-সম্পাদকদের উপজেলার নেতাদের সঙ্গে কথা বলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে দিতে নির্দেশনা দেন। তারপরও একক আধিপত্য বিস্তারের জন্য কমিটি পূর্ণাঙ্গ করছেন না তারা। এসব বিষয়ে দলের এই দুই শীর্ষ নেতা উদ্যোগ না নিলে কিভাবে হবে। জেলার সভাপতি-সম্পাদকের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে জেলা ও উপজেলা নেতাদের মধ্যে বেড়েছে গ্রুপিং। একই সাথে তাদের ব্যর্থতায় তৃণমূল ঢেলে সাজাতে না পারায় সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হচ্ছে জেলার সংগঠনগুলো। তবে বছরের শেষের দিকে শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে সমাবেশের মধ্যে দিয়ে কিছুটা উজ্জীবিত হতে দেখা যায় নেতাকর্মীদের।