নিজস্ব প্রতিবেদক ও কেশবপুর প্রতিনিধি
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস’র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চেয়ার অধ্যাপক প্রফেসর ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘উন্নত মানের শিক্ষা আমাদের প্রয়োজন। যে শিক্ষায় নিজেদের উন্নত করে দেশের সেবায় নিয়োজিত থাকা যায়। তেমন শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছিলেন আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম প্রবর্তক মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে কবির শিক্ষা পৌঁছে দিতে মধুসূদনকে চর্চা করতে হবে। তাকে নিয়ে গবেষণা করতে হবে। তাই সাগরদাঁড়িতে একটি সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রয়োজন। কেননা এখানেই একটি বিশ^বিদ্যালয় থাকলে মাইকেলের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক চর্চা বৃদ্ধি পাবে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় যশোরের কেশবপুরের সাগরদাঁড়িতে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ২০০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে মধুমঞ্চে আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে বিকেলে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রফেসর ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন ফিতা কেটে, কবুতর ও বেলুন উড়িয়ে ৯দিনব্যাপি মধুমেলার উদ্বোধন করেন। এর পাশাপাশি তিনি মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
অধ্যাপক প্রফেসর ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সাগরদাঁড়িতে একটি সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রয়োজন। বাংলাদেশে আজকাল মুড়ি-মুড়কির দোকানের মতো বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে, সেখানে মহাকবির জন্মভূমি সাগরদাঁড়িতে কেন একটি বিশ্ববিদ্যালয় হবে না- সে বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবির বিষয়ে সহমত পোষণ করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা সাহিত্যকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। এ কারণে ইতিহাসের পাতায় তার নাম লেখা রয়েছে। মধুসূদনের স্মরণে এমন একটি আয়োজন করায় জেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘মধুমেলা যেন নির্মল আনন্দের মেলায় পরিণত হয়। পরিবার পরিজন নিয়ে সকলে যেন মেলা উপভোগ করতে পারে।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন যশোর-৫ আসনের সংসদ সদস্য ইয়াকুব আলী, যশোর-৬ আসনের সংসদ সদস্য আজিজুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. শওকত আরা হোসেন ও যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তুহিন হোসেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহমুদ হাসান বুলু। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার আবু নাছির ও জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা সাধন কুমার দাস। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন,সর্ব ইউরোপীয় বঙ্গবন্ধু পরিষদের (ইংল্যান্ড) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ মেহেদী হাসান টিটোসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার অতিথিরা। মধুমঞ্চে রাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও যাত্রাপালা ‘মায়ের চোখে জল’ মঞ্চস্থ হয়। যশোর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে আগামী ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত সাগরদাঁড়িতে ৯দিনব্যাপি এ মধুমেলা অনুষ্ঠিত হবে।
এবারের মধুমেলায় দর্শণার্থীদের বিনোদনের জন্য মধুমঞ্চে কেশবপুর ও যশোরের শিল্পীগোষ্ঠীর পাশাপাশি দেশবরেণ্য কবি, সাহিত্যিক ও শিল্পীদের পরিবেশনা এবং প্যান্ডেলে সার্কাস, যাদু প্রদর্শনী ও মৃত্যুকূপ রয়েছে। শিশুদের বিনোদনের জন্য রয়েছে নাগরদোলাসহ বিভিন্ন আয়োজন। এছাড়াও থাকছে কুটির শিল্পসহ গ্রামীণ পসরা।
কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তুহিন হোসেন বলেন, এবারের মেলায় সার্কাস, মৃত্যুকুপ, নাগরদোলা ছাড়াও কুঠির শিল্প ও গ্রামীন পসরার প্রায় ৫০০ স্টল বসেছে। কবির জন্মজয়ন্তী ও মধুমেলা উপলক্ষে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে মধুমেলায় উন্মুক্ত মঞ্চে মহাকবির জীবনীর উপর আলোচনা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনের পাশাপাশি সার্কাস, ইঞ্জিন ট্রেন, মৃত্যুকুপ ও বিসিকের স্টল রয়েছে। কবির সৃষ্টি, সাহিত্য ও জীবনীর উপর বিষয় ভিত্তিক আলোচনায় অংশ গ্রহণ করবেন দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও কবি সাহিত্যিকগণ। এ ছাড়া প্রতিদিন সন্ধ্যায় মধু মঞ্চে দেশের বরেণ্য খ্যাতিমান শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করবেন।