বিশেষ প্রতিনিধি
সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে তেঁতুলিয়া গ্রামে ১৮ শতকের মুসলিম স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন তেঁতুলিয়া জামে মসজিদ। খুলনা-পাইকগাছা সড়কের পাশে এ মসজিদটি স্থানীয়ভাবে মিয়ার মসজিদ, কেউবা তেঁতুলিয়া জামে মসজিদ নামে পরিচিত।
মসজিদের মূল নাম তেঁতুলিয়া খান বাহাদুর কাজী সালামতউল্লাহ জামে মসজিদ। মসজিদের গায়ে প্রাপ্ত শিলালিপি হতে জানা যায়, ১২৭০ বঙ্গাব্দে মুঘল আমলের জমিদার সালামতুল্লাহ খান কলকাতার টিপু সুলতান মসজিদের আদলে এই মসজিদটি নির্মাণ করেন।
মসজিদটিতে কোনো জানালা না থাকলেও মসজিদে প্রবেশের জন্য রয়েছে ৯ ফুট উঁচু এবং ৪ ফুট চওড়া ৭টি দরজা। ১২টি পিলারের উপর চুন সুরকি ও চিটাগুড়ের গাঁথুনিতে নির্মিত মসজিদের ছাদে ৬টি গম্বুজ রয়েছে। প্রত্যেকটি গম্বুজের মাথায় আবার অসাধারণ ব্রুজ রয়েছে। মসজিদটিতে বড় ৪টি মিনার রয়েছে। প্রত্যেকটি মিনারের পাশে দুটি ছোট মিনার উপরে উঠে গেছে।
উত্তর-দক্ষিণ পাশের দেয়ালে রয়েছে আরও একটি মিনার, পশ্চিম-পূর্ব পাশে আরও দুটি মিনার রয়েছে। সবমিলিয়ে মসজিদটিতে ছোটবড় ১৮টি সুউচ্চ কারুকার্য খচিত মিনার রয়েছে। মসজিদটির উত্তর পাশে দুই একর জমির একটি বড় দিঘী রয়েছে। মসজিদ থেকে দিঘীর তলদেশ পর্যন্ত সান বাঁধানো সিঁড়ি রয়েছে।
মসজিদে ও ছাদের কার্নিশে, পিলারে ও মিনারে মোগল স্থাপত্যের কারুকার্য খচিত বিভিন্ন নকশা মনোমুগ্ধকরা অবস্থার সৃষ্টি করেছে। মসজিদের চারপাশে ৪ ফুট উচ্চতার প্রাচীর রয়েছে। মধ্য উনবিংশ শতকে বাংলার একটি প্রত্যন্ত গ্রামে এ ধরনের দ্বিস্তম্ভ বিশিষ্ট স্থাপনা দেখা যায় না। মসজিদের মেঝে থেকে ছাদের উচ্চতা কমপক্ষে সাড়ে ১০ ফুট।
তেঁতুলিয়া জামে মসজিদের ভেতর ও বাইরে মিলিয়ে শতাধিক মুসল্লি একত্রে নামাজ আদায় করতে পারেন। তিন থেকে চারশ’ বছরের পুরাতন ঐতিহাসিক তেঁতুলিয়া জামে মসজিদটি ১৯৮৭ সাল থেকে বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদফতর রক্ষণাবেক্ষণ করছে। বর্তমানে অযত্ন ও অবহেলায় সৌন্দর্য হারাচ্ছে মুসলিম স্থাপত্যের অনন্য এ নিদর্শন।
স্থানীয়রা জানান, মোগল আমলের পুরাকীর্তি হিসেবে বহুদূর থেকে দর্শনার্থীরা তেঁতুলিয়া খান বাহাদুর কাজী সালামতউল্লাহ জামে মসজিদটি দেখতে আসেন। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বর্তমানে মসজিদটিতে মুসল্লিদের নামাজ আদায়ে জায়গা হয় না।
মসজিদের ওজুর জায়গাটিও বর্তমানে ধ্বংস প্রায়। দিঘীর দুটি সানের একটি বিলীন হয়ে গেছে। অপরটি ধসে পড়ছে। আগামী প্রজন্ম যাতে এই পুরাকীর্তি তেঁতুলিয়া জামে মসজিদটি দেখে যেতে পারে, সেজন্য সরকারের কাছে সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
মসজিদটির দেখাশোনায় জড়িত মুসল্লি হারুনুর উর রশিদ জানান, মসজিদটি একটি খিলানের ওপর তৈরি। কলকাতার একটি মসজিদের আদলে নির্মিত হয়েছে মসজিদটি। কারুকাজ খচিত এ ধরনের মসজিদ খুলনা বিভাগে নেই।
৩৫ বছর ধরে দায়িত্বে থাকা মসজিদটির খতিব শেখ মো. আব্দুর রব জানান, এরশাদ আমলে সরকারের অধীনে চলে যাওয়ার পর প্রাচীর ও মেঝে সংস্কার করা হয়েছিল। তারপর আর কোনো কাজ হয়নি। বারবার আবেদন করেও কোনো সাড়া মেলেনি। এটা শুধু মুসলিমদের ঐতিহ্য নয়, পুরাকীর্তি হিসেবে অমুসলিমদেরও গর্বের। ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে থাকা মসজিদের দ্রুত সংস্কার দাবি করেন তিনি।