কল্যাণ ডেস্ক
সাধারণ মানুষের কাছে এখনও পৌঁছায়নি জুলাই সনদের বার্তা। তারা জানেন না, রাষ্ট্র সংস্কারে জুলাই সনদে কী রয়েছে বা এর বিষয়বস্তু কী? বিশ্লেষকরা বলছেন, শুরু থেকেই জুলাই সনদ তৈরির আলোচনায় জনগণকে সম্পৃক্ত করা হয়নি। ফলে সনদটি গ্রহণ বা বর্জন করলে এর ফলাফল কী হবে, তা নিয়ে জনগণের মধ্যে নেই কোনো আলোচনা।
জুলাই সনদ নিয়ে কোনো কথা শুনেছেন নাকি—এমন প্রশ্ন মানিকগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলের একজন সাধারণ মানুষকে করা হলে তিনি বললেন, না, আমরা শুনিনি কিছু। ফের প্রশ্ন করা হয়, যদি গণভোট হয়, গণভোট সম্পর্কে কোনো ধারণা আছে কি না? তিনি বললেন, গণভোট হবে কি হবে না, এটা পরের কথা।
মধ্যবয়সী অন্য একজনকে একই প্রশ্ন করা হলো, জুলাই সনদ নিয়ে দেশে এত কথা হচ্ছে, কিছু শুনেছেন কি না? উত্তরে বললেন, না, আমার তেমন কিছু জানতে পারিনি। কিন্তু জানলে হয়তো বুঝতে পারতাম।
মানিকগঞ্জ শুধু নয়, দেশের বিপুল অংশের মানুষের জুলাই সনদ, তার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া, প্রভাব ও গুরুত্ব নিয়ে স্পষ্ট ধারণা নেই। জনসাধারণের কাছে এই বিষয়গুলো বোধগম্য করে পৌঁছানোর মূল দায়িত্ব সরকার ও রাজনৈতিক দলের। এর কতটুকু করা গেছে?
বিশ্লেষকরা বলছেন, যে দেশ আর জনগণের কথা ভেবে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করার তোড়জোর তাদেরকেই যদি এর তাৎপর্য বোঝানো না যায় তাহলে, মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হওয়ার দায় এড়াতে পারবেন না সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ মোহাম্মদ শাহান বলেন, এখন আমরা ৪৮টি জিনিসের একটা প্যাকেজ এনে মানুষকে বললাম যে, ভাই দেখো এখন তোমার এটা পছন্দ হয় কি না। ধরেন, ২৮ সাথে অ্যাগ্রি করি বা ২০টির সঙ্গে অ্যাগ্রি করি না। এখন এই ২৮টির কোনটির গুরুত্ব কতখানি বা ২০টির গুরুত্ব কোনটির কতখানি, এই বিশ্লেষণ করার সময়ও কি আমি মানুষকে দিয়েছি?
তিনি আরও বলেন, তিন মাস সময় আছে, রাজনৈতিক দল ও ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে মানুষজনের কাছে গিয়ে জুলাই সনদ সম্পর্কে খুব ভালো করে বিশ্লেষণ করতে হবে, যে আসলে কী করতে যাচ্ছি।
রাজনীতি বিশ্লেষক আলতাফ পারভেজ বলেছেন, গণভোট এখন স্বাধীন মতামতের বদলে চাপের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। তার মতে, গণভোটের মাধ্যমে জনগণকে যেন বাধ্য করা হচ্ছে মতামত দিতে। ওপর থেকে ৪৮টি বিষয় চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, যার ওপর জনগণের মত প্রকাশ করতে বলা হচ্ছে।
তিনি বলেন, জনগণের প্রতিনিধিত্ব করছে রাজনৈতিক দলগুলো। যদি তারা মনে করে প্রস্তাবিত ৪৮টি বিষয়ে তাদের মতামত উপেক্ষা করা হয়েছে বা তারা এতে সম্মত নয়, তাহলে গণভোটে না-ভোটও পড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে পুরো জুলাই সনদই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে।
জুলাই সনদের বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে সুপারিশমালা এখন প্রধান উপদেষ্টার হাতে। অন্তবর্তী সরকারই ঠিক করবে রাজনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে বাস্তবায়নের কোন পথ বেছে নেয়া হবে।
আরও পড়ুন: বিএনপির ‘প্রার্থী চূড়ান্তের’ কথা বললেন তারেক, একক প্রার্থীর পাশে চান সবাইকে
