ক্রীড়া ডেস্ক
সংবাদ সম্মেলনে একই প্রশ্ন প্রথমে অধিনায়ক আফঈদা খন্দকারকে করা হলো। এই বাংলাদেশ দলে সুযোগ পাননি সাবিনা খাতুন, মাসুরা পারভীন, কৃষ্ণা রানী সরকার। তাদের অভাবটা কি ২৯ জুন থেকে শুরু হতে যাওয়া এএফসি ওমেন্স এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে থাকবে কিনা? এ ব্যাপারে আফঈদার উত্তর ছিল, “নো কমেন্টস”।
সেই প্রশ্নই যখন কোচ পিটার বাটলারের দিকেও ছুঁড়ে গেল, বাটলার কিন্তু কূটনীতিক উত্তর দিলেন। তিনি বললেন, এই দলে উমহেলা মারমার মতো ফরোয়ার্ড রয়েছেন। কিন্তু তার কথা কেন কেউ আলোচনা করছে না।
এশিয়ান কাপ বাছাই খেলতে বুধবার ভোর রাতে ঢাকা ছাড়বে বাংলাদেশ। যে দলের প্রস্তুতিটা গত ৬ এপ্রিল শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার পিটার বাটলার ২৩ সদস্যের চূড়ান্ত দল ঘোষণা করেছেন বাফুফে ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে। বাংলাদেশ এবারের এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে খেলবে ‘সি’ গ্রুপে। যেখানে প্রতিপক্ষ হিসেবে রয়েছে মিয়ানমার, বাহরাইন ও তুর্কমেনিস্তান।
আগামী বছর অস্ট্রেলিয়ায় বসছে ওমেন্স এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্ব। এতে অংশ নেবে ১২টি দল। এই ১২ দলের মধ্যে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া, বর্তমান চ্যাম্পিয়ন চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান সরাসরি খেলবে। আর বাকি ৮টি দল আসবে বাছাইপর্ব থেকে। বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার সেই অভিযানেই এবার যাচ্ছে মিয়ানমারে।
বাছাইপর্বে ৩৪টি দেশকে ৮টি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে। ৬টি গ্রুপে ৪টি করে দল এবং ২টি গ্রুপে রয়েছে ৫টি করে দল। প্রতিটি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন দল সরাসরি চূড়ান্ত পর্বে খেলবে। এছাড়া বাছাইপর্বের সেরা দুটি রানার্স আপ দলও চূড়ান্ত পর্বে খেলার সুযোগ পাবে।
‘সি’ গ্রুপের ফিফা র্যাঙ্কিং অনুসারে বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে আছে। র্যাঙ্কিংয়ে সবচেয়ে এগিয়ে মিয়ানমার। তাদের অবস্থান ৫৫। দলটি এর আগে পাঁচবার এশিয়া কাপ খেলেছে। বাহরাইনের র্যাঙ্কিং ৯২। তারাও দুই বার এশিয়ান কাপ বাছাইপর্ব খেলেছে। বাংলাদেশের বর্তমান ফিফা র্যাঙ্কিং ১২৮। প্রতিপক্ষ দলগুলোর বিবেচনায় সবচেয়ে দুর্বল বলা যায় তুর্কমেনিস্তানকে। যাদের র্যাঙ্কিং ১৪১।
বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ ২৯ জুন। প্রতিপক্ষ বাহরাইন। ২ জুলাই বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে মিয়ানমারের। এরপর শেষ ম্যাচে ৫ জুলাই বাংলাদেশ খেলবে তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে। বাংলাদেশ আগে দুবার এশিয়ান কাপ বাছাই খেলেছে। কিন্তু সেই অভিজ্ঞতা মোটেও সুখের নয়। এর মধ্যে ২০১৩ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় থাইল্যান্ডের কাছে হেরেছিল ৯-০ গোলে। ইরানের কাছে ২-০ গোলে এবং ফিলিপাইনের কাছে ৪-০ গোলে হারে।
এরপর ২০২১ সালেও বাংলাদেশের ফুটবলে এতটুকু উন্নতি হয়নি। উজবেকিস্তানে অনুষ্ঠিত ওই প্রতিযোগিতায় জর্ডান, ইরানের কাছে হারে একই ব্যবধানে ৫-০ গোলে। শুধু হংকংকে ৫-০ গোলে হারিয়েছিল। এবার অবশ্য প্রেক্ষাপট ভিন্ন। নারী সাফজয়ী দলটি গত মে মাসে জর্ডানে তিন জাতি টুর্নামেন্টে অংশ নেয়। যেখানে স্বাগতিক জর্ডান ও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে ড্র করে। এই ফলাফল আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে দলকে।
অধিনায়ক আফঈদা খন্দকার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন সেই কথা, “কোচ এসব নিয়ে বিভিন্ন সময় আমাদের ভিডিও দেখিয়েছেন। বাহরাইন বা অন্য দলগুলো কিভাবে খেলে সেই কৌশল জানিয়েছেন। আমরা প্রস্তুতি ভালো নিয়েছি। ইনশাল্লাহ জয়ের জন্যই মিয়ানমারে খেলতে নামব।”
কোচ পিটার বাটলারের এই দলে যদিও রক্ষণভাগে সর্বোচ্চ পাঁচজন ফুটবলার। তবে জর্ডানে খেলা দলটিই প্রায় অপরিবর্তিত রেখেছেন তিনি। দুই গোলকিপার স্বর্ণা রানী ও মিলি আক্তারের সঙ্গে দুটি সাফ জেতা ডিফেন্ডার নীলুফা ইয়াসমিন নীলা ফিরেছেন। বাদ পড়েছেন দুই গোলকিপার মেঘলা রানী ও ফেরদৌসী আক্তার এবং মিডফিল্ডার শান্তি মার্ডি।
ফরোয়ার্ড লাইনে অভিজ্ঞ সাবিনা খাতুন ও কৃষ্ণা রানী সরকার থাকলে দলটা এশিয়ার যে কোনও প্রতিপক্ষের জন্যই চ্যালেঞ্জ হতে পারতো। এদের বাদে তহুরা খাতুন, শাহেদা আক্তার রিপা, ঋতুপর্ণা চাকমা, সুরভী আকন্দ প্রীতি বা মোসাম্মৎ সাগরিকারা বাহরাইন, মিয়ানমারের মতো কঠিন প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের চ্যালেঞ্জ কিভাবে সামলাবেন সেই উত্তর সময়ই বলে দেবে।
সাবিনাদের প্রসঙ্গে কোচ কোনও কথা সেভাবে বলেননি। এড়িয়ে গেছেন। তবে পিটার বাটলার আশাবাদী মিয়ানমারে এই বাংলাদেশ দলটা ভালো কিছুই করবে, “আমি আশাবাদী ও আত্মবিশ্বাসী এই দল নিয়ে। কারণ দলটা বেশ কিছু প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এই দলের পাইপলাইন ভালো। বেশ কিছু তরুণ প্রতিভাবান ফুটবলার নজর কেড়েছে। এই মেয়েদের ভালো কিছু করার তাড়না আছে। ওরা যদি মাঠে নিজেদের শতভাগ উজাড় করে দিতে পারে, আশা করি মিয়ানমারে বাংলাদেশের একটা ভালো ফলই হবে। তবে আমরা ধাপে ধাপে যেতে চাই। আমাদের প্রথম লক্ষ্য বাহরাইনকে হারানো।”
জর্ডান থেকে ফেরার পর দল নিয়ে একটু বেশিই আশাবাদী কোচ, “জর্ডান থেকে ফেরার পর ১৩টি সেশন করিয়েছি মেয়েদের। রিকভারি ও ট্যাকটিকাল ফেস নিয়ে দারুণ কাজ হয়েছে। মেয়েরা দুর্দান্ত অনুশীলন করেছে। মিসেস কিরণ ও সভাপতিকে ধন্যবাদ যে আমাদের চেয়ে র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা শক্তিশালী দেশগুলোর সঙ্গে খেলার সুযোগ করে দিয়েছে। যে কারণে উন্নতিটা হয়েছে চোখে পড়ার মতো। ”
বাংলাদেশ দল : রুপনা চাকমা, শিউলি আজিম, শামসুন্নাহার সিনিয়র, মনিকা চাকমা, মারিয়া মান্দা, ঋতুপর্ণা চাকমা, তহুরা খাতুন, শামসুন্নাহার জুনিয়র, মোসাম্মৎ সাগরিকা, আফঈদা খন্দকার, শাহেদা আক্তার রিপা, মোসাম্মৎ মুনকি আক্তার, স্বপ্না রানী, কোহাতি কিসকু, সুরভী আকন্দ প্রীতি, মোসাম্মৎ সুলতানা, স্বর্ণা রানী মন্ডল, জয়নব বিবি রিতা, হালিমা আক্তার, নবিরণ খাতুন, মিলি আক্তার, উমহেলা মারমা, নীলুফা ইয়াসমিন নীলা।