শনিবার, সেপ্টেম্বর ২০
, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক
লোড ওজন করতে স্কেলের গণ্ডিতে সিরিয়ালে ঢুকছে একের পর এক পণ্যবাহী ট্রাক। আইন অনুযায়ী যে ট্রাকে ওভারলোড নেই সেটি ওজন শেষে ক্লিয়ারেন্স নিয়ে চলে যাচ্ছে। আর ওভারলোডবাহী ট্রাকে অটোমেটিক সিস্টেমে জরিমানা হয়ে স্লিপ বের হচ্ছে। ফলে ট্রাকটি ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে জরিমানার স্লিপ না নিয়ে ঘুরে গিয়ে মহাসড়ক ধরে দিব্বি চলে যাচ্ছে ওভারলোডেড ট্রাকগুলো। এ যেনো মগের মুল্লুক! প্রতিদিনের এমনই চিত্র যশোরের বেনাপোলে নবনির্মিত ওজন স্কেল পয়েন্টে।
ওজন স্কেল চালু করতে বেনাপোল ট্রাকমালিক সমিতি, সিএন্ডএফ অ্যাসোসিয়েশন ও শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের বাধার মুখে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ঘটনায় এক প্রকার অসহায় হয়ে পড়েছেন স্কেলটির ইজারাদার কর্তৃপক্ষ ও দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ আনসার সদস্যরা। নিরাপত্তাহীনতার কথাও বলছেন তারা।
ঘটনার শুরু ১ অক্টোবর। এদিন ওজন স্কেলটি পুরোদমে চালু করার দিন ‘অংশীজনী সভার’ আয়োজন করে যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। নির্ধারিত দিনে সেখানে উপস্থিত হন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ স্থানীয় প্রশাসন ও হাইওয়ে কর্তৃপক্ষ। অনুষ্ঠান শুরুর আগেই লোকজন নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন বেনাপোল কাস্টম ক্লিয়ারিং এন্ড ফরওয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতি ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। বাধ সাধেন স্কেল উদ্বোধনে। একপর্যায়ে তাদের বাধার মুখে একপ্রকার নিরুপায় হয়ে স্কেল কার্যক্রমের উদ্বোধন না করেই ফিরে আসেন সওজ কর্তৃপক্ষ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনাপোল স্কেল লোড কন্ট্রোল স্টেশনে সরেজমিনে কথা হয় এক আনসার সদস্যের সঙ্গে। তিনি বলেন, সরকার এখানে আমাকে ডিউটি দিয়েছে। ডিউটি করছি। তবে যে কারণে ডিউটি করছি তার কোনো ফল নেই। বিনা কারণে আমরা এ কষ্ট প্রতিদিন করছি।
দায়িত্বরত অপর এক স্টাফ জানান, ট্রাক আসছে ওজন করছি। ওভারলোডের ট্রাকে জরিমানার স্লিপ বের হচ্ছে। তবে তা না নিয়েই একপ্রকার ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে চলে যাচ্ছে। কঠোর হলে বিভিন্ন সংগঠনের লোকজন এসে হট্টগোল করছে। তিনি বলেন, জরিমানা আদায় করতে গেলে আতিকুজ্জামান সনি, শামছুর রহমান, খায়রুজ্জামান মধু ও শহিদুল ইসলামের লোকজন আমাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত ঝামেলা করছেন। স্থানীয় না হওয়ায় আমরা একপ্রকার হুমকির মধ্যে আছি। বেনাপোল ওজন স্কেলের ইজারাদার ইউডিসি কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের অ্যাডমিন মহিদুল ইসলাম বলেন, স্কেলের কার্যক্রম চালু করতে আমরা এখানে এসেছি। তবে একদিনও জরিমানা আদায় করা সম্ভব হয়নি। এখানে মোট ৪২ জন স্টাফ শিফট অনুযায়ী কাজ করেন। আনসার সদস্য রয়েছেন ৭ জন। বিদ্যুৎ বিল, জেনারেটর খরচসহ প্রতিমাসে তাদের বেতন-ভাতা প্রায় ১০ লাখ টাকা। কার্যক্রম পুরোদমে চালু না হওয়ার ফলে আমাদের বেতন-ভাতাও আটকে আছে।

বেনাপোল কাস্টম ক্লিয়ারিং এন্ড ফরওয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামছুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। যারা দায়িত্বে আছেন তারাই ভালো বলতে পারবেন।

বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুজ্জামান মধু বলেন, আমার মনে হয় ওজন স্কেলটি চালু হোক সেটি যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগ চায় না। যদি চাইতো তাহলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতো। আমরাও চাই ওজন স্কেলটি চালু হোক। সরকার লাভবান হোক।

যশোরের বেনাপোলে নবনির্মিত ওজন স্কেল পয়েন্টে।

বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি একেএম আতিকুজ্জামান সনি বলেন, আমরা একসঙ্গে তিনটি পোর্টে (ভোমরা, নওয়াপাড়া ও বেনাপোল) ওজন স্কেল চালু করার কথা বলেছি। বেনাপোলে আগে চালু হলে এ বন্দরে ব্যবসায়ে ধস নামবে। আমরা বৈষম্য চাই না। যে কারণে আপাতত এই ওজন স্কেল চালু করার বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছি।

নাভারণ হাইওয়ে থানার ওসি রোকনুজ্জামান বলেন, ট্রাকে লোড কম দেখিয়ে আলাদাভাবে হাইওয়ে পুলিশকে দেখাতে সিএন্ডএফ থেকে লোডের স্লিপ সরবরাহ করা হয়। যে কারণে ওভারলোড দেখেও স্লিপের কারণে আমরা মামলা দিতে পারছি না। এতে রোডের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। অতিদ্রুত বেনাপোলের ওজন স্কেলটি চালু করার দাবি এই কর্মকর্তার।

যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মাহবুব হায়দার খাঁন বলেন, অন্যান্য স্থলবন্দরের চেয়ে বেনাপোলে ট্রাকে ওভারলোড সহনীয় পর্যায়ে আছে। তবুও এ বন্দরে নির্মাণ করা ওজন স্কেলটি চালু করতে ১ সেপ্টেম্বর আমরা অংশীজনী সভার আয়োজন করেছিলাম। সেখানে বিভিন্ন সংগঠনের লোকজন এসে হট্টগোল বাধিয়ে সভা পণ্ড করে দেয়। ফলে ওজন স্কেলটি পুরোদমে চালু করা সম্ভব হয়নি।

সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া বলেন, ওজন স্কেলটি পুরোদমে চালু করতে সময় লাগছে। তবে এটি চালি করতে বাধাদানকারীদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি। দ্রুতই চালু হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
মনিকো ডিএনকো জেভির প্রকৌশলী মুন্না আজিজ জানান, ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের (বাংলাদেশ) আওতায় বেনাপোল এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশনটি নির্মাণ করা হয়। সড়কসহ এর নির্মাণ খরচ ছিল প্রায় সতেরো কোটি। নির্মাণ শেষে এটি হস্তান্তর করা হয় ২০২২ সালে।

Share.
Leave A Reply