এসএম মিজানুর রহমান শ্যামনগর (সাতক্ষীরা): জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এবার সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ নির্ধারিত সময়ের ১৫ দিন আগেই শুরু হচ্ছে। প্রতিবছর ১ এপ্রিল ভাবে শুরু হয় মধু সংগ্রহ। এবার আগেভাগেই মধু সংগ্রহ শুরু হবে পশ্চিম সুন্দরবনের মধু ভান্ডার বলে খ্যাত সাতক্ষীরা রেঞ্জ কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে।
বনবিভাগ সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট জেলায় বিস্তীর্ণ সুন্দরবন অবস্থিত হলেও মূলত বেশি মধু সংগ্রহ করা হয় সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ থেকে। এ কারণে, প্রায় ২০০ বছর যাবত সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে অনুষ্ঠান করে প্রতিবছর ১ এপ্রিল মধু সংগ্রহ করতে যান মৌয়ালরা। আর তা চলতে থাকে ৩০ জুন পর্যন্ত। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কয়েক বছর ধরে সুন্দরবনের মধু ফুল খ্যাত খলিশা ফুলের মধু আগের চেয়ে ১৫/২০ দিন আগেই সংগ্রহ করার উপযুক্ত হয়। আর ওই সময় মাছ ধরার অনুমতি নিয়ে মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে জেলেরা গোপনে মধু সংগ্রহ করে নিয়ে যান। ফলে মৌয়ালরা বনবিভাগের অনুমতি নিয়েও প্রত্যাশিত মধু সংগ্রহ করতে পারেন না। এ কারণে মৌয়ালদের অভিযোগে ও বন বিভাগের সিদ্ধান্তে এবার মধু সংগ্রহের সময় ১৫ দিন এগিয়ে ১৫ মার্চ করা হয়েছে।
দাতনেখালী গ্রামের মৌয়াল শহীদ শেখ জানান, সুন্দরবনে সবচেয়ে ভালো মানের মধু পাওয়া যায় খলিশা ফুল থেকে। বসন্তের শুরুতেই সুন্দরবনে খলিশা ফুল ফুটতে শুরু করে। এরপর ফোটে গরান ও অন্যান্য ফুল। মানের দিক থেকে খলিশা ফুলের মধু পরেই গরানও অন্যান্য ফুলের মধু। মৌসুমের একেবারে শেষে আসে কেওড়া ও গেওয়া ফুলের মধু।
শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার রবিউল জানান, সুন্দরবনের মধুর মধ্যে খলিশা ফুলের মধু খুবই সুস্বাদু ও সুমিষ্ট। এ কারণে খলিশা ফুলের মধু বিদেশে রফতানি করা হয়। বিশ্বজুড়ে খলিশা ফুলের মধুর চাহিদা রয়েছে বেশি।
মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অসীম কুমার মৃধা জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কয়েক বছর ধরে খলিশা – ফুলের মধু আগের চেয়ে ১৫-২০ দিন আগেই সংগ্রহ করার উপযুক্ত হয়। আর ওই সময় মাছ ধরার অনুমতি নিয়ে জেলেরা গোপনে মধু সংগ্রহ করে। প্রত্যাশিত মধু সংগ্রহ করতে না পেরে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। মৌয়ালরা এ বিষয়ে বনবিভাগকে অবগত করলে বনবিভাগ এবার মধু সংগ্রহের সময় ১৫ দিন এগিয়ে এনেছে। এবার ১৫ মার্চ থেকে মধু সংগ্রহ করা হবে বনবিভাগ সূত্র হতে বলে জানা গেছে।
বনবিভাগ সূত্র জানা যায়, গতবছর মধু ও মোম আহরণের জন্য ১ হাজার ১২ টি অনুমতিপত্র বা পাস দেয়া হয়েছিল। এসব পাসের বিপরীতে ৬ হাজার ৭৯৭ জন মৌয়াল সুন্দরবনে মধু সংগ্রহের জন্য যান। ওই সময় মৌয়ালরা ৩ হাজার ৩৭৬ দশমিক ৯০ মেট্রিক টন মধু ও ১১৩ দশমিক শূন্য ৯ মেট্রিক টন মোম আহরণ করেন। এ ব্যাপরে বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন অফিসার ফরেস্টার নুরুল আলম জানান, এবার জাকজমক করেই মধু সংগ্রহ অনুষ্ঠান হবে।
সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের বন কর্মকর্তা এসিএফ হাসান জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বেশ কয়েক বছর ধরে খলিশা ফুল আগে ফুটছে। ফলে মধুও আগে পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে সব দিক বিবেচনা করে বনবিভাগ মধু সংগ্রহ শুরুর তারিখ ১ এপ্রিলের আগেই ১৫ মার্চ নির্ধারণ করেছে।