এস এম মিজানুর রহমান, শ্যামনগর (সাতক্ষীরা): তিন মাসের জন্য সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে সাতক্ষীরা উপকূলের ৪০ হাজারের বেশি বনজীবী পরিবার।
সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এমএ হাসান জানান, সাতক্ষীরা রেঞ্জে পর্যটক গাইডসহ নয় থেকে সাড়ে নয় হাজার মানুষ সুন্দরবনের বনজসম্পদ আহরণের সাথে জড়িত। ১ জুন থেকে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ায় বর্তমানে কেউই বনে প্রবেশ করতে পারছেন না। তাদের সরকারিভাবে সহায়তার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো কোন নির্দেশনা আসেনি।
শ্যামনগরের সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তুষার মজুমদার বলেন, শ্যামনগরে নিবন্ধনকৃত ২৩ হাজার মৎস্যজীবী আছে। এর মধ্যে কেউ খাল বিলে, কেউ কেউ নদ-নদীতে আবার কেউ কেউ সাগরে মাছ ধরেন। এদের মধ্যে সমুদ্রে মৎস্য আহরণকারী ৭৯৫টি পরিবার দু’একের মধ্যেই ৫৬ কেজি করে চাল পাবে। ইতোমধ্যে ডিও হয়ে গেছে। এছাড়া ৮৩২৪টি পরিবারের তালিকা পাঠানো হয়েছে। তারা জুলাইয়ের ২০ তারিখের মধ্যে ৩০ কেজি করে চাল পেতে পারেন।
নিজেদের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে শ্যামনগরের পানখালীর জেলে সরোজ বৈদ্য বলেন, সুন্দরবনে মাছ, কাঁকড়া আহরণ করেই আমাদের চলে। তিন মাস পাস বন্ধ থাকবে। এক সপ্তাহ যেতে পারেনি, বনজীবী পরিবারগুলোয় সংকট দানা বাধতে শুরু করেছে। কেউ কেউ কোবাদক, কৈখালি, কদমতলা ও অন্যান্য ফরেস্ট অফিসের সাথে যোগাযোগ করে বনে প্রবেশ করে মাছ কাঁকড়া ধরে কোন রকম খেয়ে পরে বেঁচে আছে।
দাতিনাখালী গ্রামের শফিক বলেন, সুন্দরবনে পাস বন্ধ। ডাঙায়ও কাজ নেই। বেকার বসে আছি। সংসার চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। বাচ্চাদের জন্য ওষুধপত্রও জোটাতে পারছি না। চুরি করে বা বন বিভাগের সাথে চুক্তিতে বনে গেলে কোন কোন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ধরে মামলা দিচ্ছে কি করে পরিবার পরিজন নিয়ে বেচে থাকব ।
নীলডুমুর ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হালিম বলেন, তিন মাস সুন্দরবনে প্রবেশ নিষেধ। জেলে বাওয়ালী পর্যটক কেউই সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবে না। তাই জেলে বাওয়ালীদের সাথে ট্রলার মালিক ও শ্রমিকদেরও দুর্দিন চলছে। কারণ এখানকার ট্রলারগুলো শুধুই পর্যটকদের জন্য। এমতাবস্থায় জেলে বাওয়ালী পর্যটন সংশ্লিষ্টদের সরকারি সহায়তা প্রদানের দাবি জানান তিনি।