জাহিদ হাসান
কঠিন বিপদের মধ্যেও প্রবল মানসিক শক্তি নিয়ে টিকে থাকেন অনেকে। শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হলেও বুদ্ধিদীপ্ত কর্মযজ্ঞের মধ্য দিয়ে তারা স্থান করে নেন অনেক সুস্থ মানুষের ওপর। হাজারো প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও মেধা ও সৃজনশীল কাজে তারাই সবার অনুপ্রেরণার উৎস। এমনি ধৈর্যশক্তি ও অধ্যবসায়ের বাস্তব দৃষ্টান্ত হলেন যশোরের সেই অদম্য তামান্না আক্তার নুরা। জন্ম থেকেই দুই হাত ও একটি পা নেই তামান্নার। সব বাধা পেরিয়ে বাঁ পা দিয়ে লিখে তামান্না মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। জীবনের সকল পাবলিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেন। একই সঙ্গে শারীরিক প্রতিবন্ধিতাকে জয় করে পড়ছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সে পা দিয়ে তামান্না বিশ^ জয় করার স্বপ্ন দেখছিলেন; সেই পা দিয়ে এবার তিনি বই লিখেছেন। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে তার লেখা বই ‘ইচ্ছার আলো’। বিষয়টি তিনি নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ করেন। বইটিতে তার জন্মের পর থেকে সকল প্রকার প্রতিবন্ধকতা, প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সকল প্রকার প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরা হয়েছে। তামান্না যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া আলীপুরের রওশন আলী ও খাদিজা পারভীন শিল্পী দম্পতির সন্তান।
তামান্না আক্তার নুরা দৈনিক কল্যাণকে বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আমার প্রথম লেখা বই ‘ইচ্ছার আলো’ প্রকাশিত হয়েছে। বইটি অনুপ্রেরণামূলক। এই বইটি লেখা ছিল আমার একটি স্বপ্ন। শারীরিক অক্ষমতা কখনো স্বপ্নের পথে বাধা হতে পারে না। এটি আমি পাঠকদের মনেপ্রাণে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলাম। অবশেষে আমার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তিনি জানান, আমি গত বছর যখন ভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে যখন বাড়িতে বসেছিলাম; তখন বই লেখার পরিকল্পনা নেই। প্রতিবন্ধীদের কি কি বাধা থাকতে পারে, কি কি সমস্যা হতে পারে। এর উপায় কি? সব এই বইতে তুলে ধরা হয়েছে। তিনি জানান, শারিরিক অক্ষমতা কোন বাধা হতে পারে না মানুষের জীবনে সেটাই ফুটিয়ে তুলেছি। তার এ সফলতার সাথে কারা যুক্ত ছিলেন তিনি এ বিষয়টি বইয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। এছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীসহ সকলের পাশে থাকার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তুলে ধরা হয়েছে। নিজের এক পা দিয়ে আকা বেশ কয়েকটি ছবির মাধ্যমে তার জীবনের সকল বাধা, প্রতিবন্ধকতা ও সাফল্য উল্লেখ করেছেন অত্যন্ত সুনিপুণভাবে। তিনি জানান, ‘এই বইটি শুধু প্রতিবন্ধী তরুণ-তরুণীদের জন্য নয়; সাধারণ ছেলে মেয়েদের জন্যও। যারা অল্পতেই ভেঙ্গে পড়ে; তাদের জন্য এই বইটি অনুপ্রেরণা যুগাবে। সমাজে দৃষ্টিভঙ্গি বদলালে সমাজও পরিবর্তন হবে। ২০২২ সালের আগস্ট মাসে লেখা শুরি করি। এর পরের মাস সেপ্টেম্বরে বইটি অর্থাৎ একমাসে লেখা শেষ হয়। তবে এতোদিন অর্থের অভাবে বইটি পাবলিশ করতে পারেনি। প্রায় এক হাজার কপি প্রকাশিত হয়েছে।’ তিনি জানান, আমার সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করি। তাই আরো লেখালেখি করার ইচ্ছা রয়েছে বলে জানান তিনি। লেখাপড়া শেষ করে বিসিএস ক্যাডার অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তামান্না। আর সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যেই আগামী দিনগুলোর জন্য তিনি এখন থেকেই প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছেন।
তামান্নার প্রকাশিত বইয়ের বিষয়ে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, মেধাবী শিক্ষার্থী তামান্না শিক্ষার্থীদের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আমি জানতে পেরেছি তামান্নার লিখিত প্রথম বই ‘ইচ্ছার আলো’ প্রকাশিত হয়েছে। সকল প্রতিকূলতা ও বাধাকে অতিক্রম করে অদম্য তামান্না কিভাবে নিজেকে অনন্য হিসাবে উপস্থাপন করেছেন সেগুলো খুব দারুণভাবে উপস্থাপন করেছে। চরম ইচ্ছাশক্তি থাকলে কোনো বাধাই কারো প্রতিভাকে দমিয়ে রাখতে পারে না সেটাই তিনি প্রমাণ করেছেন। তামান্নার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি এবং সে অন্যান্যদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। উপাচার্য হিসাবে আমি ইতিপূর্বে তার পাশে ছিলাম এবং আগামীতেও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে সকল প্রকার সহযোগিতা করা হবে। উল্লেখ্য, বইটির প্রকাশনা করেছে তামান্না ফাউন্ডেশন, প্রচ্ছদ ধ্রুব এষ এবং বইটি এখন ২০% ছাড়ে মাত্র ৩০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
