এম আর মাসুদ, ঝিকরগাছা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ) চত্বরে মোটরচালিত হুইলচেয়ারে নিত্যদিনই দেখা মেলা শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী সেই বিশ্বজিৎ দাসকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ল্যাপটপ নিয়েছেন। রোববার যশোরের ঝিকরগাছা ইউএনও বিতান কুমার মন্ডল তাকে এটা দেন। গত ৩ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবসে দৈনিক কল্যাণ পত্রিকায় তাকে নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশ করা হয়।
বিশ্বজিৎ দাস আইবিএর প্রথম সেমিস্টারে পড়েন। দিনে শ্রেণিতে পাঠগ্রহণ, হোস্টেলে যাতায়াতে ব্যস্ত থাকলেও আঁধার নামলেই তার হুইলচেয়ারের চাকাকে ছুটতে হয় ৪০-৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত। কারণ, হুইলচেয়ারের চাকা না ঘুরলে যে থেমে যাবে বিশ্বজিতের স্বপ্ন, অন্ধকারে মলিন হবে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর যাত্রা। সে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার রাজবাড়িয়া গ্রামের শ্যামপদ দাস ও সুষমা দাসের ছেলে বিশ্বজিৎ দাস। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। জন্ম থেকেই তার দুই পা অচল। মেরুদণ্ডের হাড় বাঁকা। সোজা হয়ে বসতেও পারেন না। মা-বাবা বাঁশ-কঞ্চি দিয়ে ঝুড়ি-ডালা বোনেন। তবে শারীরিক ও আর্থিক এই প্রতিবন্ধকতা তার সাফল্যের পথে কখনো বাধা হতে পারেনি।
তিনি পিইসি, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করেন। এসএসসি পরীক্ষায় শার্শা উপজেলায় প্রথম স্থান অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ প্রথম সেমিস্টারে (চার মাস পর) দিতে হবে ১৪ হাজার টাকা। একপর্যায়ে সেখানে বিশ্বজিৎ ফুডপান্ডার মাধ্যমে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করার কাজ নেন। এ কাজে সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা-সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ফুডপান্ডার খাদ্যসামগ্রী পৌঁছাতে তাকে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। এর বিনিময়ে যা আয় হয়, তা দিয়ে লেখাপড়ার খরচ চলে।
দৈনিক কল্যাণ পত্রিকার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বিশ্বজিৎ বলেন, ল্যাপটপটি দিয়ে আমার লেখাপড়ার কাজের পাশাপাশি কিছু আউটসোর্সিং কাজ করে আয় করতে পারবো।
ঝিকরগাছার ইউএনও বিতান কুমার মন্ডল বলেন, ‘কয়েকদিন আগে দৈনিক কল্যাণে প্রকাশিত সংবাদে বিশ্বজিতের সম্পর্কে জানতে পারি। আমার অফিসের খরচ বাঁচিয়ে এটা কেনা হয়েছে। ল্যাপটপটি হলে তার উপকার হবে জেনেই দেয়া হয়েছে। কাজটি করতে পেরে ভালো লাগছে’।