মো. রিয়াদ বিন সেলিম (২৪)। বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়ায়। কখনো সেনা অফিসার। কখনো ডিবি পুলিশ। আবার কখনো পরিচয় দেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা। বাস্তবে মাধ্যমিক স্কুলের গণ্ডি পার না হওয়া এই রিয়াদ একজন ধূর্ত প্রতারক।
পেশায় গাড়িচালক হলেও নিজেকে প্রতিরক্ষা বিভাগসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন ইউনিটের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে মামলা, গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া ছিল তার পেশা।
একাধিক ভুক্তভোগীর অভিযোগ পেয়ে নজরদারির মাধ্যমে বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) দিবাগত মধ্যরাতে নগরীর চান্দগাঁও থানাধীন হাজীর পোল এলাকার একটি বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৭)।
তবে বিষয়টি জানাজানি হয় শনিবার (১১ মার্চ)। রিয়াদ বিন সেলিম পটিয়া পৌরসভার পাইকপাড়া এলাকার মো. সেলিম উদ্দীনের ছেলে।
র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল মো. মাহবুব আলম জানান, সেলিম পেশায় মূলত একজন গাড়িচালক। গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) কর্মরত একজন কর্মকর্তার ব্যক্তিগত ড্রাইভার হিসেবে চাকরি করেন। প্রথমে ডিবি অফিসার পরিচয়ে প্রতারণা শুরু করেন।
২০১৯ সালে সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন পদবীর ভুয়া একটি পরিচয়পত্র বানিয়ে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার কোরের আওতাধীন বিভিন্ন ঠিকাদারের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা লাভের চেষ্টা করেন। একইসঙ্গে কখনো ইঞ্জিনিয়ার, কখনো চট্টগ্রামের বেসরকারি ইষ্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার, কখনো এস আলম গ্রুপের শীর্ষ কর্মকর্তা, আবার কখনো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা পরিচয় দিতেন। বিভিন্ন ব্যক্তির কাজ করে দেওয়ার আশ্বাসে টাকা নিতেন তিনি।
র্যাব জানায়, সম্প্রতি আবু সুফিয়ান নামে এক ব্যক্তিকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠিয়ে মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির হুমকি দেন সেলিম। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী র্যাব-৭ এ লিখিত অভিযোগ করলে সেলিমের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি করে র্যাব। চান্দগাঁও হাজীর পোল এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে সেনাবাহিনীর ক্যামোফ্লাজ রঙের একটি ব্যাগ থেকে ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি তার কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত নকল পরিচয়পত্র জব্দ করে র্যাব।
র্যাবের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা নুরুল আবছার জানান, প্রতিরক্ষা বিভাগসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব ইউনিটের পরিচয় ব্যবহার করে ফেলায় অবশেষে প্রতারক সেলিমের শখ জাগে র্যাব কর্মকর্তা হওয়ার। এজন্য নিজের মুঠোফোন নম্বরের সঙ্গে র্যাব ফোর্সেস এর মনোগ্রাম যুক্ত করে।
র্যাবের সরকারি মোবাইল নম্বরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ০১৭৭৭.. সিরিজের একটি সিম সংগ্রহ করে। নিজেই হোয়াটসঅ্যাপ ও কন্টাক্টে ‘এডি অপারেশন র্যাব’ লিখে তা সেভ করে রাখে। এরপর নম্বরটি ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার ও মামলার কথা বলে প্রতারণা করে আসছিল সেলিম।
শুধু তাই নয়, চট্টগ্রামের বিভিন্ন রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধিকে হোয়াটসঅ্যাপ-মেসেঞ্জারে চট্টগ্রামের র্যাব কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে আসছিল সেলিম। তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে নগরের চকবাজার থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: মৌলভীবাজারে বিএনপির কর্মসূচিতে হামলা, সাবেক এমপিসহ আহত ২৫
১ Comment
Pingback: কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় কিশোরীকে ধর্ষণচেষ্টা, গ্রেপ্তার ২