নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোর শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক পদে কর্মরত থাকা অবস্থায় আমল কুমার বিশ্বাস ও তার স্ত্রী গৃহিনী বিথীকা শিকদার অবৈধভাবে এক কোটি ৪৪ লাখ টাকা উপার্জন প্রমাণিত হওয়ায় আদালত চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের দায়ের করা দুর্নীতির মামলার তদন্ত শেষে তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদক যশোর কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক মোশাররফ হোসেন রোববার যশোরের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে এই চার্জশিট দাখিল করেন। আগামী ১০ সেপ্টম্বর পরবর্তী শুনানীর দিন ধার্য করেছেন আদালত। অভিযুক্ত অমল কুমার বিশ্বাস বর্তমানে যশোর সরকারি মহিলা কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত আছেন এবং তার স্ত্রী বিথীকা শিকদার গৃহিনী। বিথীকা শিকদার মাগুরা জেলার শালিখা আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদারের আপন বোন।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, আসামীরা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত এক কোটি ৪৪ লাখ ৮০ হাজার ২৮৫ টাকা উপার্জন করেছেন। অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন করে দখলে রাখার অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। আসামীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১), মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ধারাসহ দণ্ডবিধি ১০৯ ধারায় এই চার্জশিট দাখিল করা হয়।
চার্জশিটে বলা হয়েছে, আসামি অমল কুমার বিশ্বাস ১৪তম বিসিএস (শিক্ষা) ক্যাডারে ১৯৯৩ সালের ১৭ নভেম্বর প্রাণিবিদ্যা বিষয়ে সিটি কলেজের যোগদান করেন। বিভিন্ন কলেজে চাকরি করে ২০০৯ সালের ২২ মার্চ যশোর শিক্ষাবোর্ডে উপ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদে যোগদান করেন। পরে ২০১০ সালের ১৭ জুন শিক্ষাবোর্ডে কলেজ পরিদর্শক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর ২০১২ সালের ১২ এপ্রিল তিনি সহযোগী অধ্যাপক এবং ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান। এখন তিনি যশোর সরকারি মহিলা কলেজে অধ্যক্ষ পদে কর্মরত। চার্জশিট অনুযায়ী, শিক্ষাবোর্ডে কর্মরত অবস্থায় তার বিরুদ্ধে অবৈধ পন্থায় টাকা আত্মসাতের একটি অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় অমল কুমার বিশ্বাস ও তার স্ত্রী মিসেস বিথীকা শিকদারের সম্পদ বিবরণী চেয়ে দুদক নোটিশ জারি করে। সে অনুযায়ী তারা ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর তারা দুদকে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। বিবরণীতে অমল কুমার বিশ্বাস ৫৬ লাখ ৪৬ হাজার টাকারস্থাবর ও ২১ লাখ ৭০ হাজার ৪১৪ টাকার অস্থাবর মোট ৭৮ লাখ ১৬ হাজার ৪১৪ টাকার সম্পদ এবং তার স্ত্রী বিথীকা শিকদার ৪ লাখ টাকার স্থাবর ও এক কোটি ৬ লাখ ৪৫ হাজার ২৩০ টাকার অস্থাবর মোট এক কোটি ১০ লাখ ৪৫ হাজার ২৩০ টাকার সম্পদের হিসাব দাখিল করেন। অর্থাৎ দুজনে দুদকে এক কোটি ৮৮ লাখ ৬১ হাজার ৬৪৪ টাকার সম্পদের ঘোষণা দেন।
এরপর দুদক তদন্তকালে অমল কুমার বিশ্বাসের নামে ৫৬ লাখ ৪৬ হাজার টাকার স্থাবর ও ৫৪ লাখ ১১ হাজার ৪৫৭ টাকার অস্থাবর মোট এক কোটি ১০ লাখ ৫৭ হাজার ৪৫৭ টাকার সম্পদ এবং স্ত্রী বিথীকা শিকদারের নামে উক্ত পরিমাণ সম্পদ পাওয়া যায়। আসামি দ্বয়ের মোট প্রাপ্ত সম্পদের পরিমাণ দুই কোটি ২১ লাখ ২ হাজার ৬৮৭ টাকা। সে মোতাবেক তারা দুদকে ৩২ লাখ ৪১ হাজার ৪৩ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছে। এছাড়া এর বিপরীতে পারিবারিক খরচ, চিকিৎসা ব্যয়, বিদেশ ভ্রমণ ও ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া খরচ বাদে উভয়ের বৈধ নিট আয় পাওয়া গিয়েছে ৭৬ লাখ ২২ হাজার ৪০২ টাকা। এ অনুযায়ী আসামিদের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের পরিমাণ এক কোটি ৪৪ লাখ ৮০ হাজার ২৮৫ টাকা। চার্জশিটে বলা হয়েছে, আসামি কর্তৃক অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জন করে দখলে রাখার অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে চার্জশিট দাখিলের অনুমোদন জ্ঞাপন করা হলে দুদক যশোর থেকে আসামিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭ (১), মানি লন্ডাারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ধারা দন্ডবিধি ১০৯ ধারায় বিজ্ঞসিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে দাখিল করা হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদক যশোর কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘মামলার তদন্তে জানা গেছে, অমল কুমার বিশ্বাস যশোর শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক পদে দায়িত্বে থাকার সময়ে অবৈধ পন্থায় সম্পদ অর্জন করে স্ত্রীর নামে দিয়েছেন। নিজের নামেও রেখেছেন। দুইজনের অবৈধ সম্পদের পরিমান দাড়িয়েছে এক কোটি ৪৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। দুদকের এই মামলায় তারা উচ্চ আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন।’ দুদক যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ আল-আমিন জানিয়েছেন, যশোর সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ও যশোর বোর্ডের প্রাক্তন কলেজ পরিদর্শক অমল কুমার বিশ্বাস ও তার স্ত্রী মিসেস বিথীকা শিকদারের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপন করার প্রমাণ পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।