শাহারয়িার আলম তূর্য
প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট ছেড়েছি ১৮ বছর হয়েছে। মাঝে মাঝে মাস্টার্সকাপ ক্রিকেট খেলেছি। এর পাশে বেশ কয়েকবছর যশোরের একটি ক্লাবের দায়িত্ব পালন করছি। এর বাইরে ক্রিকেটের সাথে সম্পৃক্ত থাকা হয়না। তবে সাধারণ দর্শকের মতো আমিও বাংলাদেশ ক্রিকেটের খোঁজ খবর রাখি। সময় পেলে খেলা দেখা হয়। সম্প্রতি ফেসবুকে বাংলাদেশ দল নিয়ে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করছি। তেমনিই এক ভিডিও দেখে দৈনিক কল্যাণের স্পোর্টস রিপোর্টার এম এ রাজা একটা লেখা দেয়ার অনুরোধ করেন। সেই অনুরোধে লেখার চেষ্টা।
বিশ^কাপ শুরু হওয়ার সপ্তাহ খানেক পর বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচ খেললো। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ছোট দল চমক দেখিয়েছে। স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তান হারিয়ে দেয়।
যাইহোক প্রথমেই বাংলাদেশ দলকে অভিনন্দন, বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচটি জয়ী হবার জন্য। যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য টেক্সাক্স এর ডালাস শহরে ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমী দর্শক সহজ ম্যাচ কিভাবে কঠিন করে জিততে হয় সেই স্বাদটি নিয়ে গেছে।
টসের ভাগ্য আমাদের পক্ষে যায়। আর সেটা বাংলাদেশ ফিল্ডিং নিয়ে প্রমাণ রেখেছে সিদ্ধান্তটাও সঠিক সিলো। কারণ স্লো উইকেটে আপনি সবসময় সাবধানে হাঁটবেন আর বাংলাদেশ সেই পথেই হেঁটেছে।
বাংলাদেশ তার পূর্ণ শক্তি নিয়ে যে মাঠে নামবে সেটা আমাদের সবারই জানা, তাসকিন এর ইনজুরি থেকে ফিরে আসা আমাদের বাড়তি সাহস দিয়েছে।
অসাধারণ ছিলো আমাদের বোলিং সেশনটা। কোথাও দাড়ি, কমা দেওয়ার জায়গা পাবেন না, বোলারদের পারফরমেন্স দেখে। সাকিব আল হাসানকে আরো একটু সংযত হয়ে অ্যাটাক করাতে পারলে দল বেশি সুবিধা আদায় করবে, কারণ সাকিব আমাদের সেরা স্পিনার। আর তাসকিন এর ফিরে আসা টা যে কতটা কার্যকরী সেটা আমরা তার বোলিং এ দেখেছি। যদিও প্রথম ওভারে কিছুটা খরুচে হলেও কুশল মেন্ডিসকে তুলে নিয়েছিলেন তার গতি দিয়ে। পাওয়ার প্লেতে রান রেটের গতি ঠিক রেখে চমৎকার ব্যাটিং করে। এর পরেই আসলে ধাক্কা দেওয়া শুরু করেন সদ্য আইপিএল ফেরত চমৎকার ফর্ম এ থাকা কাটার মাস্টার মুস্তাফিজ। অতি দ্রুত কামিন্ডু আর নিশাঙ্কাকে ফেরত পাঠায়। এরপরের গল্পটা যেন রিশাদময়। পরপর দুই বলে আসালাঙ্কা আর হাসারঙ্গাকে তুলে নিয়ে মাজাটা ভেঙে দেন রিশাদ। পরের ওভারে ধনঞ্জয়কেও তুলে নেন। এরপর ম্যাথুউস ও সাবেক অধিনায়ক সানাকাদের হাত খোলার সুযোগ দেয়নি তাসকিন, মুস্তাফিজুর, তানজিম সাকিব। এক কথায় অসাধারণ সিলোবাংলাদেশের প্রথম সেশন। মাত্র ১২৪ রান এ গুটিয়ে দেওয়াটা বিশ্বকাপের মঞ্চে অসাধারণ!
জিম্বাবুয়ে ও যুক্তরাষ্ট্র সিরিজ ও ভারতের সাথে প্রস্তুতি ম্যাচের বিপর্যস্ত টপ অর্ডারের ব্যাটার আজ সুযোগ ছিল ভালভাবে ফিরে আসার। এই স্লো উইকেট এ অল্প পুঁজিতে আটকে দিয়ে বোলাররা যে সরল পথ দেখিয়ে দিয়েছিলেন, সেখানে আমাদের টপ অর্ডাররা ব্যর্থতার প্রমান রেখে আবারো নিজেদের কে কাঠগরড়ায় দাঁড় করিয়ে দিচ্ছেন।
১২০ বলে ১২৫ রান, কিভাবে খেলবেন সেটা একটা জাতীয় দলের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানকে আপনি কি শেখাতে পারবেন। আসলে আমাদের টপ অর্ডাররা নিজেরদেরকে এতো বেশি চাপে ফেলেছেন যে বের হতে পারছেনা। সৌম্য প্রথম বল সুইপ খেলতে চেয়েছিলেন, প্যাড এ লেগেছিলো আপিল হয়েছিলো, পরের বলে যেভাবে অফ স্পিনর বিপরীতে খেলতে গেসে সেটা ছিলো সুইসাইড। তামিম হাফ ভলি বলে আউট, এই লেভেল ক্রিকেট এ যদি এটা হয় কেমন হবে?
লিটন দাসকে অনেক ক্রেডিট দিবো, কারণ উইকেট অনুযায়ী সে ঠিক কাজটাই করেছে। শান্ত ভালোই ছিলো কিন্তু লম্বা করতে পারে নাই। এখানেই আমাদের ভাবতে হবে কখন কোন শট আমরা খেলবো। একটা সময় আমারা ধরে নিয়েছিলাম আজকেও বিপদে পড়বো। কিন্তু লিটন ও হৃদয় আমাদের একটা ভালো পার্টনারশিপ দিয়ে চাপ মুক্ত করে। দুইজনই দারুণ খেলছিলেন। খারাপ বলকে বাউন্ডারির বাইরে মারা, নিয়মিত সিঙ্গেল বের করা।
হৃদয় হাসারঙ্গাকে পরপর ৩টা ৬ মারার পর আউট হয় হৃদয়। এসময় লিটনের উচিত ছিলো হৃদয়কে গিয়ে একটা মেসেজ দেয়া যে ১৮ রান আসছে তাহলে বাকি বল গুলো দেখে খেলতে।
হৃদয়ের আউটের পর যে ভয়টা মনে কাজ করছিলো। সেটাই শেষ পর্যন্ত হয়। হৃদয়, লিটন ও সাকিবের আউট আমাদেরকে একটা চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে ফেলে। টেল এন্ডার ব্যাটার হলেও রিশাদের ওই ভাবে আউট হওয়াটা ভালো লাগেনি। ওই পরিস্থিতিতে ওই শট খেলাটা ঠিক হয়নি। যাই হোক রিয়াদ আবারও তার ফিনিশারের ভূমিকায় সফল হয়েছে। আজকের ম্যাচের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনের ম্যাচে খেয়াল রাখাটা জরুরি।
সবশেষ চ্যাম্পিয়ন প্লেয়ার সাকিব আল হাসানকে আরো বেশি দলের জন্য প্রয়োজন, তার বডি ল্যাঙ্গুয়েজে যেন চ্যাম্পিয়ন থাকে সেটাই প্রত্যাশা করবো। সর্বোপরি বাংলাদেশ দলের জন্য শুভকামনা।
লেখক : সাবেক প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার ও
সভাপতি, ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, যশোর শাখা।