শাহারুল ইসলাম ফারদিন
তীব্র গরমের মধ্যে বৃষ্টি নাগরিক জীবনে স্বস্তি এনে দিলেও যশোর পৌরবাসী পড়েছেন দুর্ভোগে। দেড় ঘণ্টার বৃষ্টিতে যশোর শহরের অধিকাংশ সড়কে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
এলাকাবাসীর ভাষ্য, ‘অপরিকল্পিত ড্রেন’ নির্মাণই জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ। বাড়ির ভেতরও পানি ঢুকে পড়ছে। ড্রেনে ফেলা ময়লা ও পয়োবর্জ্য মিশ্রিত পানিতে ডুবে যায় শহরের বিভিন্ন এলাকা। দীর্ঘ এক যুগেও এই সমস্যার সমাধান হয়নি।
তবে পৌরসভা বলছে, শহরবাসীর অসচেতনতার কারণেও ড্রেনের পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তার পরেও এটা নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা আছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে শহরের কোনো সড়কেই আর জলাবদ্ধতা হবে না।
যশোর আবহাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, যশোরে মঙ্গলবার (রাত ৯টা পর্যন্ত) মোট ৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে করে শহরের প্রায় ডজন খানেক সড়কে জলাবদ্ধতায় সৃষ্টি হয়।
খড়কি এলাকার শাহ আবদুল করিম সড়কে গিয়ে দেখা গেছে, এমএম কলেজের প্রধান ফটকের (দক্ষিণ গেট) পাশে খড়কি মোড়ে হাঁটু সমান পানি জমে রয়েছে। পায়ের জুতা হাতে নিয়ে মানুষকে ওই অংশ পারাপার হতে হচ্ছে। পানি জমার কারণে সড়কের বিটুমিনের আস্তরণ উঠে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। একই দৃশ্য দেখা গেছে শহরের আরবপুর মোড়, কারবালা, স্টেডিয়ামপাড়া, সার্কিট হাউস পাড়া, পাইপপট্টি রোড, রায়পাড়া, শংকরপুর, ঘোপ কবরস্থান পাড়া, বেজপাড়া তালতলা, বেজপাড়া নলডাঙ্গা রোড এলাকা, টিবি ক্লিনিক পাড়া, আশ্রম রোড, বরফ কলের মোড়, লোন অফিস পাড়া, বড় বাজার এলাকার আবাসিক এলাকা, ষষ্ঠীতলা, এমএম কলেজ রোড, উপশহরের অধিকাংশ এলাকায়। এর মধ্যে কিছু কিছু এলাকায় বৃষ্টির পানি সরতে সময় লাগে একদিনেরও বেশি সময়।
এছাড়া জানস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসের সামনে, শিক্ষা বোর্ডের ভেতরে, এমএম কলেজ ক্যাম্পাসসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি অফিসের ভেতরেও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। শংকরপুর ইসহক সড়কের দক্ষিণাংশের দুপাশে রাস্তা উপচে পানি প্রবেশ করে মানুষের বাড়ির উঠোন এমনকি ঘরের মধ্যেও। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বৃষ্টি হলেই এই জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগে পড়েন পথচারী ও এলাকাবাসী।
যশোর পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, গত ৮ বছরে সিআরডিপি, ইউজিপআইআই-৩ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে শহরের অর্ধশত কিলোমিটার আরসিসি ড্রেন নির্মাণ হয়েছে। এখনো অনেক ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। এছাড়া কাঁচা-পাকা মিলিয়ে প্রায় আড়াইশো কিলোমিটার ড্রেন রয়েছে। এরপরও জলাবদ্ধতার নিরসন হচ্ছে না।
খড়কি (এমএম কলেজের প্রধান ফটকের দক্ষিণ গেট সামনের রোড) এলাকার বাসিন্দা রমিজা চৌধুরী নামে এক নারী জানান, একঘণ্টার বৃষ্টি হলেই এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করা যায় না। বৃষ্টি হবার পর রিকশা ইজিবাইক যাওয়া আসা করে না। লোকজনকে অফিস আদালতে যেতে বেগ পোহাতে হয়। এছাড়াও দক্ষিণ বঙ্গের বড় বিদ্যাপীঠ এমএম কলেজ হওয়াতে অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী এই এলাকায় মেসে বসবাস করে। রাস্তায় পানি জমে থাকলে তাদের কলেজে যেতে কষ্ট হয়।
পাইপপট্টি রোডের বিশ্বনাথ বলেন, শহরের ফায়ার ব্রিগেড অফিসের পাশ দিয়ে পাইপপট্টির সড়কটি নির্মাণের এক বছরের মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কে পানি জমে যায়। রাস্তাটিও নিচু। ড্রেন অপরিষ্কার থাকে। বৃষ্টি হলে শহরে কোথাও পানি জমুক আর না জমুক, এই এলাকায় পানি জমবেই। এর সমাধান কি হবে জানিনা।
এদিকে, যশোর পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডে মোট ২৮৭ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে বলে জানিয়েছে যশোর পৌরসভা। এর মধ্যে বিটুমিনের কার্পেটিং ১৭৬, সিমেন্ট-বালুর ঢালাই ৩০, ইট বিছানো ৫১ ও মাটির কাঁচা সড়ক রয়েছে ৩০ কিলোমিটার। এ ছাড়া সড়কের সঙ্গে পয়োনিষ্কাশন নালা রয়েছে মোট ২৫২ কিলোমিটার। এর মধ্যে আরসিসি (রড, ইট ও সিমেন্ট) ৫৫ ও ইটের তৈরি ৬১ কিলোমিটার নালা রয়েছে। এর মধ্যে পৌর এলাকার প্রধান কয়েকটি সড়ক বাদে অন্তত ৮২টি সড়কের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। এতে নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে পৌরবাসী। সড়কগুলো সংস্কারের দাবিতে সর্বশেষ গতমাসে শহরের চোবদারপাড়ার বাসিন্দারাসহ বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় বাসিন্দারা বিক্ষোভ মিছিল করেন। গণস্বাক্ষর সংবলিত স্মারকলিপি পৌরসভার মেয়রের কাছে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
যশোর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম শরীফ হাসান বলেন, শহরের শাহ আব্দুল করিম সড়ক (এমএম কলেজের মেইন গেটের সামনের সড়ক) সহ কয়েকটি এলাকার পানি নিষ্কাশন হয় মুক্তেশরী নদী দিয়ে। কিন্তু এটির মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খাল কেটে এর সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। খালটি সংস্কার করতে হবে। শহরবাসীর অসচেতনতার কারণেও ড্রেনের পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, নতুন প্রকল্পের জন্য বাজেট পেশ করা হয়েছে। আশা করছি আগামী জুন জুলাইয়ে পাশ হলে খুব দ্রুত তা সমাধান করা যাবে।
যশোর পৌরসভার মেয়র মুক্তিযোদ্ধা হায়দার গণি খান পলাশ বলেন, বিষয়টি সমাধানের জন্য আমরা বহুবার চেষ্টা করছি। তবে কিছু কিছু এলাকার জলাবদ্ধতা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। যার জন্য সমাধানে জটিলতা রয়েছে। তবে এবার এ প্রকল্প পাশ হলে জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান আসবে।
