নাজমুন নাহার রিনু: কেউ চায় না সেই ভয়াবহ সময় আবার ফিরে আসুক। যখন মানুষ ভয়ে রাস্তার দিকে জানলা পর্যন্ত বন্ধ করে রাখত। প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিলে কত মানুষ, কত বিশিষ্টজন যোগ হচ্ছে। কে বাঁচবে, কে মরবে- কেউ জানে না। ওষুধ নেই, টিকা নেই, অক্সিজেন নেই, হাসপাতালে বেড নেই। সমাজে হাহাকার। পাড়ায় পাড়ায় কান্নার রোল। গরিবের ঘরে খাদ্য শেষ হয়ে গিয়েছে। কাজ চলে গিয়েছে শ্রমিকের। কৃষক মাঠে যেতে ভয় পায়। কী দিন গিয়েছে এখন ভাবলে শিউরে উঠতে হয়। সব জটিলতা মোকাবেলা করে এক রকম ভালভাবে জীবন অতিবাহিত হচ্ছিল বর্তমানে আবার শুরু হলো করোনার আর এক জটিলতা।
এ যেন এক ভয়াবহ আতঙ্ক। কবে স্বস্তির শ্বাসটুকু নিতে পারবো। যেন আতঙ্কের অপর নাম হয়ে উঠেছে কোভিট-১৯। কিন্তু শেষ কোথায়? গোটা বিশ্ব এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে হন্যে হয়ে। উত্তর খুঁজতে গিয়ে প্রথমেই মনে আসে মৃত্যুর কারিগর, আনবিক বোমার জনক জুলিয়াস রবার্ট ওপেন হেইমেরের সেই বিখ্যাত উক্তির We knew the world would not be the same. জানতাম পৃথিবীটা আগের মতো থাকবে না। বাস্তবে কি তাই? ভাল করে ভেবে দেখলে আসলে তাই।
করোনার বংশ বিস্তারের আতঙ্কে মানুষ রয়েছে ভীত হয়ে। জনজীবন সবকিছুই কেমন যেন পাল্টে যাচ্ছে। মানুষ বিভিন্নভাবে বিপর্যয়ে ভুগছে। করোনায় আক্রান্ত সংখ্যা বাড়ছে। করোনায় ভুগতে ভুগতে মানুষ অসহায় হয়ে পড়ছে। শারীরিকভাবে দূর্বল হয়ে পড়েছে। আর সব থেকে ক্ষতি হচ্ছে শিশুদের। কেননা শিক্ষার অবস্থা ভয়াবহ বির্পযয়ে। কমলমতি শিশুরা যাদের লেখাপড়া শুরুর পথে তারা শুরু করতে পারছে। এছাড়া বিদ্যালয়ে গেলে একটি নিয়ম অনুযায়ী লেখাপড়ায় শিক্ষার্থীরা এগিয়ে যেতে পারে। বাড়ি থেকে এগিয়ে যাওয়া কোনোভাবে সম্ভব নয়। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় মনও বসে না। তাছাড়া মেধাবিকাশে তেমন সুযোগ থাকে না। আসলে কথায় আছে ‘তলোয়ার যত ধার দেওয়া যায় তত চকচক করে’।
ঠিকতেমনি যত বইপত্রে শিশুরা মনোনিবেশ করবে তত শিখবে। বিদ্যালয় শিক্ষার একমাত্র প্রাঙ্গণ। মেধা বিকাশের প্রাণকেন্দ্র।
বিদ্যালয়ের লেখাপড়া ছাড়া কোনো শিশুর উন্নতি হতে পারে না। বাড়িতে থেকে শিশুরা পিঁছিয়ে পড়ছে সব দিক থেকে। আসলে অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের ততটা উন্নয়ন হয় না যতটা বিদ্যালয়ের পরিবেশে হয়। এবং অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থায় এখনও শিশুদের সহজবোধগম্য হয়নি। আবার সকলের বাড়িতে অনলাইনে তেমন পরিপূর্ণ ব্যবস্থা নেই। অন্যদিকে জটিলতা একটু থেকে যায়। চারপাশে আক্রান্ত সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে সেজন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলাতে ব্যাহত হচ্ছে যা শিক্ষার জন্য খুবই ক্ষতিজনক।
নেলসন ম্যান্ডেলা বলেন, শিক্ষা হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র, যার মাধ্যমে পৃথিবীকে বদলে ফেলা যায় ।
পৃথিবীর পরিবর্তন হচ্ছে ঠিকই কিন্ত মানুষ হয়ে পড়ছে সব দিক থেকে অসহায়। আমরা জানি পরিবেশ দুটি ভাগে বিভক্ত। প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সামাজিক পরিবেশ। একটি সাথে আরেকটি ওতপোতভাবে জড়িয়ে আছে মিলেমিশে। একটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে অন্যটির ভোগান্তির শেষ নেই এ যেন জমজ বোন। কেননা করোনা প্রকৃতির সাথে যেন মিশে আছে যা মানুষের শরীরে বিস্তার ঘটাচ্ছে। সামাজিক জনজীবন হচ্ছে দুর্বিষহ।
করোনার প্রকোপে যেমন শিক্ষার অবনতি ঘটছে তেমনি অন্যদিকে মানুষের জীবনধারা ব্যাপক পরিবর্তনও হচ্ছে। ঘরে বসে অনলাইনে আয়মূলক কার্যক্রম করছে অনেকে। আবার একাংশ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। শিক্ষকগণ হয়ে গেছেন বেকার। বাড়িতেও টিউটর মাষ্টার রাখা প্রায় বন্ধ করেছেন পরিবারবর্গ। সেজন্য অনেক কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী যারা টিউশন করে নিজেদের পড়ালেখা চালাতো। তাদের জীবন খুব জটিলতায় ভুগছে। অনেক শিক্ষক জীবন অতিবাহিত করছে নিদারুণ কষ্টে। যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। কেননা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ব্যক্তিমালিকানাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আয় কমে আসায় শিক্ষকদের দুর্দশার সীমা নেই। আর প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থাও করুণ। করোনার বংশ বিস্তারে সব দিক দিয়ে পিঁছিয়ে গেলাম আমরা। স্কুলমুখী শিশুরা বাড়িতে থেকে কেমন যেন বিষন্নতায় ভুগছে। পড়ুয়া শিক্ষার্থী তৈরি হচ্ছে না। আর মেধা বিকাশতো দূরের কথা। সকলে এখন একটি প্রশ্ন কবে বিদ্যালয় সঠিকডাবে যথাযথ নিয়মে চলবে। কবে বিদ্যালয় খুলবে। এছাড়া চারপাশের অধিকাংশ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। তাদের ভোগান্তির শেষ নেই। আক্রান্ত সংখ্যা বাড়ছে আবার কমছে আবার বাড়ছে। এভাবে আর কতদিন অতিমারির সাথে লড়াই করতে হবে? আমরা আজ অসহায়। এর শেষ কোথায়, আমাদের এখন করোনীয় বা কি? করোনা থেকে কিভাবে পরিত্রাণ? কোনটা করবো কি করবো প্রশ্ন খুঁজছি অনবরত। এমতাবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই। আসুন সকলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি।