নিজস্ব প্রতিবেদক
অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কনস্টেবল আব্দুল গনি হাওলাদার। মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত সাত বছর পেয়েছিলেন মাসিক পেনশনসহ অবসরকালীন সকল সুবিধা। কিন্তু গণির মৃত্যুর পরে উত্তরাধিকার সূত্রে পেনশন তার পরিবার পাবার কথা থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত হচ্ছেন। পরিবারের অভিযোগ, সাতক্ষীরা পুলিশ রিজার্ভ অফিস ও উপজেলা হিসাব রক্ষক অফিস কর্মকর্তাদের গাফিলতিতে পেনশন পাওয়া থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। স্বামীর পেনশন পেতে দীর্ঘ এক দশক দপ্তর দুটিতে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত ষাট উর্ধ্ব স্ত্রী সূর্যবান বেগম। আব্দুল গণির বাড়ি যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার মহিরন গ্রামে।
জানা যায়, ২০০৬ সালের ৭ মার্চ সাতক্ষীরাতে চাকরিকালে তিনি অবসরে যান। ২০১৩ সালের ১১ আগস্ট পেনশন ভোগরত অবস্থায় তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মারা যাবার তিন মাস পর আব্দুল গনির স্ত্রী সূর্যবান বিবি স্বামীর পারিবারিক পেনশন পেতে বাঘারপাড়া উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে আবেদন করেন। সেই সময়ে উপজেলা হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান মৃত আব্দুল গনির সকল কাগজপত্র জমা দেন। এর পর দীর্ঘদিন পরেও পেনশন না পেলে হিসাব রক্ষক কর্মকর্তা সাতক্ষীরা পুলিশ রিজার্ভ অফিসে যোগাযোগ করতে বলেন। সেখানে বিভিন্ন কাগজপত্র জমা দেন সূর্যবান বিবি। সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে বাঘারপাড়া থানা পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদনে মৃত আব্দুল গনি কোন প্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানাদি না থাকাতে তার স্ত্রী সূর্যবান বেগমকে তার পেনশনের উত্তরাধিকারী হিসাবে দেখানো হয়। মৃত পেনশনারের স্ত্রী পুলিশ প্রতিবেদন রিপোর্ট অনুযায়ী সাতক্ষীরা পুলিশ রিজার্ভ অফিসে গেলে বিভিন্ন হয়রানি করে তাকে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। এর পরে এই দুই দপ্তরে বছরের পর বছর চিঠি ঘুরেও এক দশক সময় পার হলেও আজও চালু হয়নি মৃত আব্দুল গনির পেনশন। সর্বশেষ চলতি বছরের ২৭ অক্টোবর সাতক্ষীরা পুলিশ রিজার্ভ অফিসে যোগাযোগ করেও চালু হয়নি আব্দুল গণির পেনশন।
সূর্যবান বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী মারা যাবার পরে থেকে আমি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরা করতে পারিনা। স্বামী বেঁচে থাকতেই আমি প্যারাটাইফেডে আক্রান্ত হয়ে বাম হাতে স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারিনা। আমার স্বামী দীর্ঘদিন পুলিশে চাকরি করেছে। ডিউটিরত অবস্থায় আসামি ধরতে গিয়ে পঙ্গু হয়ে স্বেচ্ছায় সাতক্ষীরা থেকে অবসর নেয়। আমার স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে স্বামীর পেনশন পেতে বাঘারপাড়া হিসাবরক্ষণ অফিস ও সাতক্ষীরা রিজার্ভ অফিসে বারবার যোগাযোগ করেও পেনশন পায়নি। জানিনা সাতক্ষীরা পুলিশের রিজার্ভ অফিস কোন কারণে আমার স্বামীর পেনশন ফাইল আটকে রেখেছে। এ বিষয়ে বাঘারপাড়া উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসার শাহানা আক্তার বলেন, আব্দুল গণির পেনশনের বিষয়ে আমি সাতক্ষীরা জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে যোগাযোগ করেছি। সর্বশেষ সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার বরাবর পেনশন মঞ্জুরির ব্যাপারে লিখিতও পাঠিয়েছি। তিন মাস হতে চলেছে এখনো সাতক্ষীরা থেকে আমার পত্রের কোন জবাব আসেনি। পেনশন আইনে আছে একজন মৃত পেনশনারের মৃত্যুর ৭ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হয়।
