বিনোদন ডেস্ক
মৃত্যুশয্যায়ও শুনতে চেয়েছিলেন “খন্ডণ ভব বন্ধন” — মুক্তির প্রতীক সেই গানেই বিদায় নিলেন সুচিত্রা সেন। মুক্তি ও চিরন্তনতার প্রতীক গান “খন্ডণ ভব বন্ধন” শুনেই ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি ইহলোক ত্যাগ করেন বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী সুচিত্রা সেন। মৃত্যুশয্যাতেও এই গান ছিল তাঁর আত্মিক পরিতৃপ্তির অনুষঙ্গ। জীবনের শেষদিনে হয়তো তিনি বুঝিয়ে গিয়েছিলেন—জাগতিক বন্ধনের ঊর্ধ্বে তিনি ছিলেন চিরন্তন, রমা থেকে মহানায়িকা হয়ে উঠা এক কালজয়ী প্রতিভা।
সুচিত্রা সেনের শৈশব ও কৈশোর কেটেছে পাবনা শহরেই। এখানকার এডওয়ার্ড কলেজে তাঁর নামে স্থাপিত “সুচিত্রা সেন ছাত্রিনিবাস”-এর নাম হঠাৎ করেই পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে “জুলাই ৩৬ ছাত্রী নিবাস”। এই নাম পরিবর্তন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন তুলেছেন নেটিজেনরা, এবং ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন জেলা শহরের সংস্কৃতিসেবীরা।
এর পাশাপাশি সুচিত্রা সেনের কোটি টাকার পৈতৃক সম্পত্তি—পাবনার গোপালপুর এলাকার বাড়িটি একাধিকবার দখলের শিকার হয়েছে। স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মীরা দাবি করছেন, সেই বাড়ি এবং সেখানে স্থাপিত স্মৃতি সংগ্রহশালাকে নিয়েও চলছে গোপন ষড়যন্ত্র।
১৯৬৫ সালে বাড়িটি “শত্রু সম্পত্তি” হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। পরে এটি “পরিত্যক্ত সম্পত্তি”তে রূপান্তরিত হয়। ১৯৮৭ সালে জামায়াতে ইসলামী নেতা মাওলানা আব্দুস সোবহানের নেতৃত্বে ইমাম গাজ্জালী ট্রাস্ট এটি সরকারের কাছ থেকে ইজারা নেয় এবং ১৯৯০ সালে পুরো বাড়িটি দখলে নেয়।
২০০৯ সালে সাংস্কৃতিক কর্মীদের আন্দোলনে প্রশাসন বাধ্য হয়ে ইজারা বাতিল করে, যদিও ট্রাস্ট হাইকোর্টে রিট করে। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার পর ২০১৪ সালের জুলাই মাসে আদালতের নির্দেশে জেলা প্রশাসন বাড়িটি দখলমুক্ত করে।
বর্তমানে বাড়িটি “সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালা” হিসেবে দর্শকদের জন্য খোলা, যেখানে প্রবেশমূল্য ধরা হয়েছে ২০ টাকা। তবে সম্প্রতি এই সংগ্রহশালাকে কেন্দ্র করেও ষড়যন্ত্রের আভাস মিলছে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় সংস্কৃতিজনরা।
১৯৩১ সালে যশোর ছেড়ে পাবনার গোপালপুরে একতলা একটি বাড়ি নির্মাণ করেন সুচিত্রার বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত। তিনি ছিলেন পাবনা পৌরসভার স্বাস্থ্য পরিদর্শক। এই বাড়িতেই ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল জন্ম নেন সুচিত্রা সেন, যার প্রকৃত নাম ছিল রমা। এখানেই তিনি পড়াশোনা করেন, বেড়ে ওঠেন এবং একসময় বিয়ের পর ১৯৪৭ সালে পাড়ি জমান কলকাতায়।
চলচ্চিত্রে ২৬ বছরের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের পর ১৯৭৮ সালে হঠাৎ করেই স্বেচ্ছায় অন্তরালে চলে যান সুচিত্রা সেন। তিনি আর জনসমক্ষে ফিরে আসেননি। এই রহস্যময়তা তাঁকে আরও কিংবদন্তিতে পরিণত করেছে। তাঁর মৃত্যুর পরও তিনি রয়ে গেছেন কোটি ভক্তের হৃদয়ে, চিরন্তন নায়িকা হিসেবে।
আরও পড়ুন: পাইরেসির কবলে শাকিব খানের ‘তাণ্ডব’, দেখা যাচ্ছে ইউটিউব-ফেসবুকে