দৈনিক কল্যণে ১৮ ডিসেম্বর বিভিন্ন স্থানে ৫টি হত্যার খবর প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে ৩টি ঘটনা যশোরের, একটি ঝিনাইদহের ও অন্যটি সাতক্ষীরার। যশোরের ঘটনাগুলোর মধ্যে যশোর শহরের পুরাতন কসবার রহিমা খাতুনের লাশ উদ্ধার করা হয় ১৬ ডিসেম্বর। লাশটি লেপ দিয়ে মোড়ানো ছিল। রহিমার ছেলে টুটুলের অভিযোগ অনুযায়ী তার মার দ্বিতীয় স্বামী এই হত্যাকা- ঘটিয়েছে। স্বামী পালিয়ে গেছে। এই শহরের আর একটি হত্যার ঘটনা ঘটেছে হুশতলায়। ১৭ ডিসেম্বর সেখানকার ভাংড়ি শ্রমিক রাকিব সরদারকে (২৮) ছুরিকাঘাতে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার হাড়িয়াদেয়াড়া গ্রামের আবদুল হাকিম জমাজমির দ্বন্দ্বে আপন ভাই-ভাতিজার হাতে নিহত হয়েছে ১৭ ডিসেম্বর। হত্যাকা-ের অন্য দুটি ঘটনা একটি ঝিনাইদহের ও অন্যটি সাতক্ষীরার। ঝিনাইদহের ঘটনাটি ঘটে ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। ১৬ ডিসেম্বর পলাশ মুন্সি (৫০) নামে ফুটবল প্রতীকের প্রার্থী প্রতিপক্ষের পিটুনীতে নিহত হন। সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা গ্রামের চিংড়ী ঘের থেকে ১৫ ডিসেম্বর গোলাম রসুল সরদারের লাশ উদ্ধার করা হয়।
বিভিন্ন স্থানে হত্যাকান্ডের ঘটনা দিনকে দিন উদ্বেগজনকভাবে বেড়েই চলেছে। হত্যার শিকার হতভাগ্যদের স্বজনদের সান্ত¦না পাবার মতো কোনো দৃষ্টান্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ স্থাপন করতে পারছে না। এসব ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে বলে জনগণ জানতে পেরেছে। এর বাইরে সারা দেশে আরো কোনো হত্যাকা- ঘটেছে কিনা তা সবার অলক্ষে থেকে গেছে।
এভাবে প্রতিনিয়ত হত্যা জনিত কারণে লাশের মিছিল বাড়ছে। দেশটা যেন মৃত্যু উপত্যাকায় পরিণত হতে যাচ্ছে। এ সব ঘটনা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির খন্ড চিত্রমাত্র। প্রতিনিয়ত দুর্বৃত্তদের দাপটের সাথে ঘোরাঘুরি ও তাদের দুর্বিনীত আচরণে জনগণ দারুণভাবে উদ্বিগ্ন। আতঙ্কে কাটছে তাদের প্রতিটি মুহূর্ত। দুর্বৃত্তের হাতে যারা জীবন হারাচ্ছেন তারা হত্যা পরবর্তী কিছু জানতে পারছে না। কিন্তু তাদের স্বজনদের অবস্থাটা কি হয় তা অনুভূতিশীল সব মানুষই জানেন। স্বজন হারানোর ব্যথা নিয়ে দীর্ঘ সময় তাদের কাটাতে হয়। অনেক সংসারে আয়ের লোকটি হারিয়ে যাওয়ায় তার রেখে যাওয়া পোষ্যরা অকুল সাগরে পড়ে। এতে সমাজে অসহায় মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। সমাজের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে দারুণভাবে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ সব ঘটনার খবর প্রকাশিত হলেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের যেন সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। পত্র-পত্রিকার ভাষ্য অনুযায়ী দুর্বৃত্তরা অধরা থেকেই যাচ্ছে। অথচ কোনো একটা বিয়োগান্ত ঘটনা ঘটে গেলেই পুলিশ আত্মপক্ষ সমর্থন করে নানা রকম বক্তব্য বিবৃতি দিয়ে দায় এড়িয়ে যাচ্ছে। এতে আর যাই হোক জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না।
নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা পুলিশের ওপর বর্তেছে। ‘পুলিশ জনগণের বন্ধু’ এ কথা কেবল স্লোগানে সীবদ্ধ না রেখে বাস্তবে তার দৃষ্টান্ত স্থাপন সবার কাম্য।